অপর্ণা গাঙ্গুলী: খুব আউটগোয়িং মেয়ে উড়নি l সল্ট লেকের আই টি সেক্টর এ কাজ পাবার পর তাকে আর পায় কে? ক্লাবস পার্টিস ডান্সিং ফ্লোর বন্ধু-বান্ধব বয় ফ্রেন্ডস এই নিয়ে জমজমাট জীবন … গভীরভাবে কিছু চিন্তা ভাবনা করার সময় নেই উড়নির .. জীবনটা যেন পাখির ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে … স্পা, বিউটি পার্লার এ রোজগারের একটা বড় অংশ খরচ করে ও … অসাধারণ রূপসী এবং লাস্যময়ী সুন্দরী হযে ওঠা এখন ওর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য … বড়লোক বাবার একটিমাত্র মেয়ে উড়নির তাই মাটিতে পা ঠেকে না … আয়না তাকে ঠকায় না, তাই নার্সিসাস এর মত আয়না দেখা তার অসুখ l
সেদিন অফিসে কার্ড পাঞ্চ করে সবে ঢুকেছে, অরিন এসে আলাপ করিয়ে দিল মেয়েটির সাথে, সুমনা … বড্ড বেশি মোটা আর গায়ের রং বেশ চাপা, … কিন্তু রিনরিনে মিষ্টি গলা আর ব্যবহার ভালো … মনে মনে নাক সিঁটকে উঠলো উড়নির … যা রূপের ধ্বজা ওই নিয়ে পিপল হ্যান্ডলিং করবে, তবেই হযেছে l
সুমনা দেখা গেল বেশ সপ্রতিভ এবং কাজের …. প্রথম দিনেই সে সবার বেশ কাছের মানুষ হয়ে উঠেছে … উড়নিকে যে সবাই তেমন করে খুব পছন্দ করে তা নয় … এইচ আর এ থাকলেও সে খুব নিজের মধ্যেই থাকে … সুমনার এই পপুলারিটি উড়নির একটু অসন্তোষ এর কারণ যে হলো না তা নয় …. তবু একটাই সান্ত্বনা… যা দেখতে, কালো বস্তা একখানা … ইসস !

সেই রাতে একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখল উড়নি .. অফিসের আফটার পার্টির পর একটু রাত হযেছিল ফিরতে, সে একাই থাকে তার এপার্টমেন্ট এ l স্বপ্ন দেখল তাকে দেখতে একদম বদলে গিয়েছে … ঘুমটা ভেঙ্গেই গেল .. অস্বস্তি, কি বাজে স্বপ্ন রে বাবা.. অনেকক্ষণ উসখুস করার পর, তার মনে হলো – ‘যাই গিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখেই আসি না হয়’… আলো জ্বেলে আয়নার কাছে যেতেই … এ কাকে দেখছে উড়নি….. সুমনা … না না এ হতেই পারে না … কি কুত্সিত, দু হাতে ঢাকলো নিজের মুখ … আবার ও খুলল, আবার সেই… কালো মোটা সুমনা ….
কি করবে সে এখন … ভাবতে ভাবতে মোবাইল ফোন টা ছুঁড়ে দিল আয়নার দিকে.. বিশাল একটা ক্রাক পড়ল বটে, কিন্তু প্রতিচ্ছবি গেল না … ওই তো রাত জামা পরা কুশ্রী সুমনা … ওর দিকে তাকিয়ে আছে l
যা আছে ঘরে, সব ছুঁড়তে লাগলো আয়নার দিকে.. তার সাধের আয়নাটি, বেলজিয়ান গ্লাসের… কত সাধ করে বানানো … অথচ এই আয়নাটিকে যত্ত বার জিজ্ঞাসা করেছে, ‘Who is the fairest of all?’ আয়না উড়নি কেই তো দেখিয়েছে… কালো কালী মাখাল আয়নাতে … লাইটার দিয়ে প্রতিবিম্ব জ্বালাতে গেল এক সময়, কোনো ফল নেই !
পরদিন কাগজে খবর, উড়নি বিশ্বাস নামের এক আই টি কর্মরতা ত্রিশোর্ধ মহিলা … কাল রাতে তার নিজের এপার্টমেন্ট এ suicide করেছেন … কারণ – অফিসের অসম্ভব স্ট্রেস এবং একাকিত্ব ….
সুমনা অফিসে আসতেই তাকে জানানো হলো, সে খুবই দু:খিত হয় .. আর উড়নির পোস্টে সেই বহাল হয়ে যায় … তারপর থেকে l