শায়লা আহম্মেদ লোপা: বাবা দিবসে ফেসবুকের লেখাগুলো পড়লাম। সবগুলো লেখাই মনোযোগ দিয়ে পড়েছি । এক এক জনের অনুভূতি এক এক রকম । কেউ কেউ বাবাকে ছোট বেলাতেই হারিয়েছেন, মনে নেই বাবার স্মৃতি। কারো বাবা একেবারেই আদর্শ বাবা । বাবাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রচ্ছন্ন অহংকার ( ভালো অর্থে ), কারো বাবাকে পাক হানাদারেরা ধরে নিয়ে গেছে, আর ফিরে পাওয়া যায়নি । কারো বাবা দরিদ্র কৃষক ছিলেন যদিও তবুও , সন্তানের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন শত ভাগ, এই রকম অসংখ্য বর্ণনা , কল্পনা, স্মৃতি । ভালো লেগেছে ভীষণ । বাবা দিবসে সকল বাবার প্রতি রইল শুভেচ্ছা , ভালোবাসা , প্রণাম । যাদের বাবা বেঁচে নেই তাদের বলছি , বাবা আপনাদের সাথেই আছেন ।
এবার আমার বাবার পালা।
ছোটবেলা থেকেই বাবা নিয়ে আমার আক্ষেপ ছিল চরম । আমি আমার বাবার মতো বাবা চাইতাম না । কেন চাইতাম না ? বলছি —
আমাদের বড় পরিবার। বাবা, চাচাদের সহ বলছি । সবার আবার আলাদা আলাদা পরিবার । সবার ফ্যামিলি আছে । চাচি , চাচাত ভাইবোন সব্বাই । যে সকল চাচারা বেঁচে আছেন , তাদের দেখতাম পরিবারের প্রতি তাদের কি অসীম মমতা । তাদের সন্তান-স্ত্রী সবার প্রতি অনেক খেয়াল , ভালোবাসা , দায়িত্ব । সে বিচারে আমার বাবা একেবারেই বোহেমিয়ান । দিব্যি নারায়ণগঞ্জে আম্মার বাড়িতে (নানির বাড়ি ) থাকি, আব্বা আমাদের নিয়ে সোজা চলে গেলেন গ্রামে । কারণ কি? না পুরো কারণ এখনই লিখবো না , শুধু এটুকু বলি , তিনি গেছিলেন রাজনীতি করতে। প্রিয় সবুজ বিপ্লব । সবুজের মধ্যে থেকে করাই শ্রেয় মনে করেছিলেন।
ইন্টারেস্টিং বিষয় আব্বা, আম্মা ও আমার ভাইকে গ্রামে রেখে প্রায়ই ঢাকায় থাকতেন । রাজনীতি করতেন। আমিতো হোস্টেলেই । কি রাজনীতি করতেন আল্লাহই জানেন , কারণ তাঁর কোন নাম-ধাম হয় নাই ।
যাই হউক বাবা দিবসের বিষয়ে কথা বলতে বলতে পুরান প্যাঁচালে না যাই,
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিব , কেন আমি আমার ঐ রকম বাবা চাইতাম না —
আমাদের বাসায় লঙ্গর খানার মতো মানুষ থাকতো । এই কর্মী , সেই কর্মী , এর মেয়ে , তাঁর ছেলে দিয়া ভর্তি । প্রতিবার ঈদের ছুটিতে বাসায় যেতাম । ঈদের আগে আগে আব্বা , বাসার প্রতিটা মানুষের নাম আলাদা আলাদা উল্লেখ করে আম্মাকে বলতো কাপড় কিনে আনতে । দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সব মানুষের মধ্যে আমাদের দুই ভাইবোনের নাম কোন দিন আব্বা নিতেন না । আমাদের যেহেতু খুব বেশি টাকা পয়সা ছিল না , আম্মাও দেখি মুখ চুন করে সবার কাপড় কিনছেন । কিন্তু আমরা বাদ ।
ভাইটা আমার আসলেই খুব ভালো ছিল , জীবনেও মুখ ফুটে কিছু বলে নাই, কিন্তু আমি ছিলাম ঠ্যাটা মেয়ে । আম্মারে ধরে ঠিক ঠিক কাপড় আদায় করে নিতাম । আমাদের ( আমার ভাই ও আমি ) জীবনে আব্বা হাতে করে কোন কিচ্ছু কিনে দেন নাই । শখের জিনিষ দূরে থাক — অদ্ভুত কাঠিন্য ছিল । ছোট্ট আমার ছিল আব্বার প্রতি তীব্র রাগ । বার বার মনে হতো , ইস আমার কোন চাচা যদি আমার আব্বা হতো , কতো ভালোই না হতো !!!
বড় হয়েছি —
বুঝি , আব্বা মানুষ হিসেবে অসাধারণ । মানুষের প্রতি তাঁর মমতা , আমি এখন অনুভব করি । আর হ্যাঁ , পরিবারের কর্তব্যের কথা যদি বলি , আব্বা হয়ত ঠিক ঠাক মতো পাশ করবেন না, কিন্তু মানুষ হিসেবে আব্বা ১০০ তে ১০০ । আমার ধারণা খুব কম মানুষেরই এই রকম ১০০ তে ১০০ পাওয়া বাবা আছেন ।
আই লাভ ইউ আব্বা ————————-