উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (জুন ০৯): বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি কল্পনা আক্তার খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাণিজ্য অধিকর্তা হিসেবে বিবেচিত ওয়াল মার্টের তীব্র সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হয়নি, উপরন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তার এই বক্তব্যে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে ওয়াল মার্টকে, সেরকম আশাই করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের কারখানা ও অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ৪১টি কোম্পানি সই করলেও ওয়াল-মার্টের সই না করার বিষয়টি তুলে ধরেন মাত্র ১২ বছর বয়সে পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করা কল্পনা। ওয়াল মার্টের প্রতি সেকারণেই এই বিষোদ্গার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি ওয়াল-মার্টের অংশীদারদের বার্ষিক সভায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রবসন ওয়ালটনের কাছে তিনি আকুতি জানিয়ে বললেন, ‘আপনাদের সম্পদের একটুখানি চলে যাবে আমাদের কারখানাগুলো নিরাপদ করতে। তাই আমি আপনাকে (চেয়ারম্যান) জোর আবেদন করছি আমাদের দয়া করে সহায়তা করুন। এটি খুব সহজে করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। যেখানে ওয়াল-মার্টের জন্য পণ্য তৈরি হয় সেসব কারখানা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ হওয়া উচিত-এর সঙ্গে আপনি কি একমত নন’?
শুক্রবার ১৪ হাজার শ্রমিক ও শেয়ারহোল্ডারের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। হলিউড তারকা হিউ জ্যাকমানের উপস্থাপনায় জন লিজেন্ড ও কেলি ক্লার্কসনের মতো শিল্পীদের পরিবেশনায় কোলাহলপূর্ণ সভা নীরব হয়ে পড়ে কল্পনার বক্তব্য শুরু হওয়ার পর।
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড ওয়ালটন অ্যারেনায় (বাস্কেটবল স্টেডিয়াম) আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের দাবির বিয়ষটি তুলে ধরেন কল্পনা।
কল্পনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া সুমি আবেদিন। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের নবম ধনী রবসন ওয়ালটনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার বোন অ্যালিস ওয়ালটন ও শ্যালিকা ক্রিস্টি ওয়ালটন। অ্যালিস ওয়ালটন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সম্পদশালী নারী।
সভায় একটি প্রস্তাব রেখেছেন কল্পনা আক্তার। প্রস্তাবটি পাস হলে ওয়াল-মার্টের সম্পদের ১০ শতাংশের অংশীদারদের করপোরেট গভর্নেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক ডাকতে পারবে।
অবশ্য ওয়াল-মার্টের পরিচালনা পর্ষদ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছে।
সভায় কল্পনা বলেছেন, ‘ওয়াল-মার্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন, ওইসব ভবনে অননুমোদিত সাপ্লায়াররা তাদের জন্য পণ্য তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। যদি তাই হয়, তাহলে এটি প্রমাণ করে যে, ওয়াল-মার্টের সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওয়াল-মার্ট একটি কারখানায় শ্রম অধিকার অডিট চালিয়েছে, কিন্তু শ্রমিক নিহত হওয়ার মতো বিপর্যয়গুলো তাতে উঠে আসেনি’।
এদিকে মার্কিন একটি পত্রিকা ওয়াল-মার্টের নির্বাহীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশের কারখানাগুলো সংস্কার করা খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু এ ব্যয়ের পরিমাণ ওয়াল-মার্টের গত বছরের মুনাফার ১০ ভাগের দুই ভাগ এবং ওয়ালটন পরিবারের উত্তরাধিকারী গত বছর যে লভ্যাংশ পেয়েছে তার মাত্র এক শতাংশ।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা অভিযোগ করেন, বারবার কথা দিয়ে ওয়াল-মার্ট আসলে কোনো কাজ করেনি।
তিনি বলেন, “প্রতিটি বিয়োগাত্মক ঘটনার সময়ই ওয়াল-মার্টের কর্মকর্তা প্রতিশ্রুতি দেন আমার দেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে। কিন্তু তারপরেও তা অব্যাহত রয়েছে। পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, শূন্য প্রতিশ্রুতির সময় শেষ হয়ে গেছে’।
কল্পনার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি।