উইমেন চ্যাপ্টার: ইউক্রেন নিয়ে প্রশ্ন করায় রাশিয়ার একজন সংসদ সদস্য শুধু মুখেই অপমান করলেন না একজন নারী সাংবাদিককে, তিনি তেড়ে গেলেন তাঁর দিকে, সহযোগীদের ওই সাংবাদিককে গণধর্ষণের নির্দেশ দিলেন, এমনকি একজন সহযোগীকে টেনে নিয়ে সেই সাংবাদিককে চুমু খেতেও বললেন।
এরই মাঝে এই ন্যাক্কারজনক ভিডিওটা ছড়িয়ে গেছে অনলাইনে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, কিভাবে একজন রুশ সংসদ সদস্য তেড়ে গেছেন একজন নারী সাংবাদিকের দিকে! কী তার ভাষা! কী তার বডি ল্যাংগুয়েজ! এই সংসদ সদস্যের নাম ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি। তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও।
ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন ওই নারী সাংবাদিক। রাশিয়া ইউক্রেনে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। এটাই হয়েছে কাল। ঝিরিনোভস্কি প্রকাশ্যে অপমান করা শুরু করলে রাশিয়া টুডে’র ওই সাংবাদিককে বাঁচাতে তখন এগিয়ে আসেন অন্য সাংবাদিকরাও।
ঝিরিনোভস্কি ইউক্রেনের নারী রাজনীতিবিদদের প্রসঙ্গ তুলে তাদের অপমান করেন অত্যন্ত অশ্লীল এবং নোংরা ভাষায়। তাদেরকে ‘ইউটেরাস ফ্রেনজি’, বিস্ট বিটুইন দেয়ার লেগস’, নিম্ফোম্যানিয়াক বলে সম্বোধন করেন। এরপরই তিনি ছুটে যান রিপোর্টারের দিকে, বলেন যে, এই সংবাদ সম্মেলন কোন অন্ত:সত্বা নারীর জন্য নয়। এতেও ক্ষান্ত হননি ঝিরিনোভস্কি, তিনি তার সহযোগীদের ওই নারী রিপোর্টারকে ধর্ষণ করার নির্দেশ দেন।
এরপর ঝিরিনোভস্কি তার একজন সহযোগীকে টেনে নিয়ে যান ওই নারী সাংবাদিকের কাছে এবং তাকেঁ চুমু খাওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় অন্য সাংবাদিকরা ঘিরে ফেলেন রিপোর্টারকে এবং ওই সহযোগীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এরই মাঝে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ইউটিউবে এই জঘন্য ঘটনাটি দেখেছেন।
এতে করে একটা বিষয় খুবই পরিস্কার হয়ে গেছে যে, রুশ সরকারে এমন অনেক মানুষ আছে যারা চরমভাবে অতি-জাতীয়তাবাদী এবং নিচু মানসিকতাসম্পন্ন। তাদের এই প্রবৃত্তি একের পর এক বেকায়দায় ফেলছে সরকারকে। সাম্প্রতিক এই ঘটনা তারই প্রমাণ করে।
এর আগেও বেশ কয়েকবার ধৃষ্টতামূলক মন্তব্যের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঝিরিনোভস্কি। পুতিন তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বরং এ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছেন। আর ঝিরিনোভস্কিও বারবারই ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেছেন।
এদিকে এই ঘটনার পর ওই নারী সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর কর্মস্থল রাশিয়া টুডে জানিয়েছে, টিভি নেটওয়ার্ক ঝিরিনোভস্কির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। রাশিয়া টুডে’;র এডিটর ইন চিফ মার্গারিতা সিমোনিয়ান বলেছেন, ‘আমাদের সহকর্মী নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন মামলার ব্যাপারে। তবে তিনি যে সিদ্ধান্তই নেবেন, আমরা তাকে সহায়তা করবো’। ঝিরিনোভস্কি আবারও নাটকীয় ভঙ্গিতে এই ঘটনার জন্য জাতীয় টিভিতে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, তিনি জানতেন না যে, ওই সাংবাদিক অন্ত:সত্ত্বা। এমনকি তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টি এখন কতদূর গড়ায়, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। আর খোদ পুতিনই বা বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?