উইমেন চ্যাপ্টার: ধর্ষণের শিকার কোনো মেয়ের স্বাস্থ্য (বয়স) পরীক্ষায় কোনো পুরুষ চিকিৎসক থাকতে পারবে না, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত নজরদারি করার যে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।
বিশেষ করে নারী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তরা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করার পাশাপাশি এটাও বলেছে যে, এর ফলে ধর্ষণের শিকার কোন নারী দ্বিতীয়বার নাজেহাল বা নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পাবে।
এদিকে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নজর রাখতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) দীন মো. নুরুল হককে সতর্ক করে দিয়েছে।
রোববার এ বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।
পুরুষ দিয়ে ধর্ষিত নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে গত বছরের ১৬ এপ্রিল স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।
পরে জুন মাসে দেয়া আরেক আদেশে ধর্ষণ পরীক্ষার সব সরকারি হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট বিভাগে নারী চিকিৎসক, নার্স ও নারী এমএলএসএস নিয়োগ দিতে বলা হয়।
গত ২ এপ্রিল আদালতের আদেশ অনুযায়ী ধর্ষণের শিকার কোনো নারীর স্বাস্থ্য বা বয়স পরীক্ষায় নারী চিকিৎসক নিয়োগ না দেওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে তলব করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার হাইকোর্টে হাজির হন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি।
তার আইনজীবী রেজাউল আদালতে বলেন, “আদালতের আদেশ মোতাবেক নারী ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের সব অগ্রগতি প্রতিবেদন রেজিস্ট্রারের দপ্তরের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। এ জন্য যথা সময়ে তা আদালতে আসেনি। আমাদের ভুল (সরাসরি আদালতে না দেয়ায়) হয়ে গেছে। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।”
আদালত বলেন, কোনো নারীর বয়স নির্ধারণের দায়িত্ব যেন কোনো পুরুষ ডাক্তারকে দেওয়া না হয়।।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ধর্ষণের শিকার নারীর শারীরিক পরীক্ষা করেন পুরুষ চিকিৎসক। ওই চিকিৎসককে সহায়তা করেন পুরুষ ওয়ার্ডবয়। দেশের সবচেয়ে গৌরবময় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের প্রমাণপত্র নিতে এসে নারীকে চরম লজ্জা আর অপমানের মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই’।
এ প্রতিবেদনটি গত বছরের ১৬ এপ্রিল আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিএম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী। এরপর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নারী চিকিৎসক, নার্স ও এমএলএসএস নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং একটি রুল জারি করেন।
রুলে পুরুষ চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয় ও এমএলএসএস দিয়ে ধর্ষিতার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নারীর সম্মান ও নারিত্বের প্রতি অবহেলামূলক কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীতে জুন মাসে আদালত দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সংশিষ্ট বিভাগে নারী চিকিৎসক, নার্স ও নারী এমএলএসএস নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন।
এ আদেশ প্রতিপালন করে তা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর আদালতের ওই আদেশের বিষয়ে কোনো জবাব দাখিল না করায় ২ এপ্রিল ডিজিকে তলব করে ২০ এপ্রিল আসতে বলেন হাইকোর্ট।