উইমেন চ্যাপ্টার: যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে কন্যাশিশুর ‘কুমারীত্ব উপহার’ বা বন্ধক রাখার বিষয়টি। আয়োজকরা বলছেন, কথাটা শুনে তা গোলমেলে মনে হলেও বিষয়টির গুরুত্ব অন্য জায়গায়।
পুরো আয়োজনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘পিওরিটি বল’ নামে। এক্ষেত্রে কিশোরী মেয়েটি তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় নিজেকে ‘পবিত্র’ রাখা অর্থাৎ কুমারী থাকার বিষয়ে। প্রতীকীভাবে মেয়েটি তখন ঈশ্বরকে বিয়ে করে। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টিতেই এখন ধীরে ধীরে এই প্রথা চালু হচ্ছে।
উইকিপিডিয়ায় এ নিয়ে কী বলছে, চলুন দেখে আসা যাক। পিওরিটি বল হচ্ছে এক ধরনের আনুষ্ঠানিক নাচ যেখানে অংশ নেন বাবা এবং তাদের মেয়েরা। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের কুমারীত্ব ধরে রাখার বিষয়টিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যই মূলত এই আয়োজন। এখানে মেয়েরা তাদের বাবার কাছে অঙ্গীকার করে তাদের কুমারীত্ব রাখবে বলে, আর বাবারাও এ সময়টায় তাদের মেয়েদের শরীর, মন এবং আত্মার পবিত্রতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন।
এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তাদের কথা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে বাবা এবং মেয়েদের মধ্যকার সম্পর্কটা গভীর থেকে গভীরতর হয়, বন্ধন দৃঢ় হয়। সেইসাথে বিয়ের আগের যৌন সম্পর্কগুলোও এড়ানো সম্ভব হয়। এসব সম্পর্কের কারণে যখন সমাজে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে, মেয়েদের জীবন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের অঙ্গীকার সমাজকে অনেকখানি রক্ষা করতে পারবে বলেই আয়োজকদের ধারণা। তাছাড়া বাবার স্নেহের ছায়ায় থেকে মেয়েরা অন্য ছেলেদের প্রতি তেমন আকর্ষণও বোধ করবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।
যদিও সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় মেয়েদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, নারীবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে মত গড়ে উঠছে, এবং সর্বোপরি হোমোসেক্সুয়ালিটিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে কলোরাডো রাজ্যের কলোরাডো স্প্রিংসে র্যান্ডি এবং লিসা উইলসন প্রথম আয়োজন করেন পিওরিটি বলের। এটা ছিল মূলত উইলসন পরিবারের পাঁচ কন্যা এবং তাদের বাবার জন্যই। মেয়েদের জীবনে বাবার ভূমিকা ছিল না, এই আক্ষেপ থেকেই এর আয়োজন।
পিওরিটি বল অনুষ্ঠানটি খুবই পোশাকি এক আয়োজন। বল গাউন করে উপস্থিত হয় মেয়েরা, ডিনার থাকে, একজন মূল বক্তা থাকেন এবং বলরুম নাচ হয়, আর থাকে বাবা-মেয়ের অঙ্গীকারনামা। মেয়েদের বয়স হতে পারে চার থেকে শুরু করে কলেজ পড়া পর্যন্ত। তবে এই আয়োজনের মূল কথা হচ্ছে, মেয়েদের বয়স শুরু হওয়া উচিত তাদের ঋতুস্রাবের বয়স থেকে। পিওরিটি বলের গাইডলাইনে সেকথাই লেখা আছে। ডিনার দিয়ে শুরু হয়, পড়া হয় কী-নোট পেপার এবং পরে অঙ্গীকার বা শপথগ্রহণ পর্ব।
তবে অনেকক্ষেত্রে এই আয়োজন বিয়ের আয়োজনের মতোই বিশাল হয়। ১২ বছর বয়সী কিশোরীরা হোয়াইট গাউন পরে তাদের নিজ নিজ বাবার সাথে নাচে অংশ নেয়। এই অনুষ্ঠানেই মেয়েদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি হিসেবে মেয়েদের পিওরিটি আংটি পরিয়ে দেন বাবারা, আর এই আংটিই হয় কুমারীত্বের প্রতিশ্রুতির অন্যতম প্রতীক।
এখানে পিওরিটি মানে হচ্ছে আংটি পরা অবস্থায় কোন ধরনের যৌন সংসর্গে যাবে না মেয়ে, এমনকি চুমুও খাবে না যতদিন না বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পিওরিটি বলের আয়োজন ছিল ১৪ বছর আগে, এটাকে সবচেয়ে বড় আয়োজনও বলা হয়ে থাকে। কলোরাডো স্প্রিংসের ব্রডমুর হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ৬০ জন বাবা। এটা ছিল সেইসময়কার নাইটলাইন প্রাইম তদন্তের একটি বিষয়ও। ১৪ বছর ধরেই এই তদন্ত চলেছিল।
অনুষ্ঠানে বাবাকে পিওরিটি সনদ জাতীয় একটি পেপারে স্বাক্ষর করতে হয়, যেখানে তিনি ঈশ্বরের সামনে বাড়ি এবং পরিবারে মেয়ের কুমারীত্ব রক্ষার অঙ্গীকার করেন, আর মেয়েও ঈশ্বরের সামনে অর্থাৎ যীশু ক্রুশের ওপরে একটি সাদা গোলাপ রেখে নিজের কুমারীত্ব ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর বাবা এবং মেয়ে একসাথে নাচে অংশ নেয়। মূল আয়োজক জানান, বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মেয়েরা জানবে তাদের স্বামী হচ্ছে ঈশ্বর আর বাবা বয়ফ্রেন্ড।
আশির দশকে এই পিওরিটি মুভমেন্টের সূচনা হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের ১৭টি দেশ এবং আমেরিকা জুড়ে পিওরিটি বলের ধারণা বিস্তার পেয়েছে। বিগম দশকগুলোতে যৌন সংসর্গের ব্যাপারে স্বাধীনতা এবং এইডসের সংক্রমণ বিস্তার লাভের সাথে সাথে চার্চের কিশোর সদস্যরা এ ধরনের অঙ্গীকার করতে শুরু করে। পরে এটা রূপ নেয় আংটি পরার মধ্যে, আংটিটি হয়ে উঠে তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতীক। তবে বাবার কাছে কুমারীত্ব গচ্ছিত রাখার বিষয়টি আরও ধীরে ধীরে প্রসার পায়। এটাকে একধরনের চার্চ মুভমেন্ট নামেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে।