আঙ্গুর নাহার মন্টি : মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বে এখন একটি রোল মডেল দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে’। বেগম রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত রংপুরে গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘নারী ও উন্নয়ন মেলা ২০১৪’র উদ্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন তিনি।
তিনি নারী-পুরুষের সমঅধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
‘নারীর অগ্রগতি উন্নয়নের চাবিকাঠি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার দেলোয়ার বখত এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশর মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জারুজেলস্কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূরুন নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডির জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাহমুদা রহমান খান।
প্রতিমন্ত্রী চুমকি বলেন, কৃষি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য অবদান রাখছে নারী, এমনকি এভারেস্ট বিজয়ও করেছে এদেশের নারী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রাধান্য। এ লক্ষ্যে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে চুমকি আরো বলেন, হেফাজত ও জামাত নারী নির্র্যাতনের বিপক্ষে কখনো কথা বলে না। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নারীকে ঘরে আবদ্ধ রেখে শুধুমাত্র রান্নাবান্না, সন্তান লালন-পালন আর ঘরকন্যার কাজ করাতে চায়। অথচ সকল ধর্মেই নারীদের সম্মান দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার আন্দেলনকে বেগবান করার আহ্বান জানান।
ইয়ানিনা জারুজেলস্কি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ও সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার জন্ম এই রংপুরে। আমরা গর্বিত তার জন্মস্থানে তারই নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মেলা করতে পারছি। শত বছর আগে বেগম রোকেয়া এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে মেয়ে ও নারীরা ছেলে ও পুরুষের সমঅবস্থানে থাকবেন। প্রেরণাদায়ী নেত্রী রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন সর্বস্তরে সমঅধিকারের। এই মেলায় এ পর্যন্ত নারীর অর্জন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলবো এবং এদেশের নারীরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে এগিয়ে যাবেন সেটিই হাইলাইট করা হবে।
শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী ও পুরুষ সবাইকেই সচেতন হতে হবে। তিনি সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথার বিলোপ এবং নারী নির্যাতন প্রতিরাধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আশিকুর রহমান সর্বস্তরে নারীর সমমর্যাদা ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীদের দেখে আত্মতুষ্টিতে থাকলে হবে না, সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে নারীদের অনুপ্রাণিত করতে হবে।
মাহমুদা রহমান খান বলেন, এর আগের জেন্ডার ও উন্নয়ন মেলাগুলো রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণের সচেতনতা বাড়াতে মেলাকে এবার রাজধানীর বাইরে এবং বেগম রোকেয়ার রংপুরে আনা হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকার আরো শক্তিশালী হবে। একই সঙ্গে নারীর উন্নয়নে ও ক্ষমতায়নে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি খাতের সব উন্নয়ন কর্মকা-ের সমন্বয় সাধন হবে।
মেলায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে আগত ইউএসএআইডি এনজিও হেলথ্ সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-এর (এনএইচএসডিপি) জেন্ডার বিশেষজ্ঞ লাভলী ইয়াসমিন জেবা বলেন, বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের নারীদের অগ্রযাত্রা সত্ত্বেও নারীর অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতনতার প্রয়োজন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে নারীর ইস্যুতে সচেতন করার দায়িত্ব আমাদের। এই মেলা নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে রোকেয়ার স্বপ্নকে আবারো সকলকে মনে করিয়ে দেবে।
এ মেলায় দেশী-বিদেশী ৭০টি স্টল অংশ নিচ্ছে। মেলায় স্টল ছাড়াও সেমিনার, কর্মশালা ও টাউন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। আর প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার মেলার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মশিউর রহমান রাঙ্গা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মাকিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি¬উ মজিনা। একই দিনে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা সার্ভিসের প্রধান রোকেয়া হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠেয় টাউন হল মিটিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ইউএসএআইডির মিশন প্রধান ছাড়াও বক্তব্য রাখবেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।