উইমেন চ্যাপ্টার: জেন্ডারের ভিন্নতার কারণে জনসমক্ষে অপ্রীতিকর যেকোনো আচরণই হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। এর এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজেকে নানাভাবে প্রতারিত/নির্যাতিত এবং অনিরাপদ ভাবতে পারেন।এসব হয়রানির মধ্যে রাস্তাঘাটে শিস বাজানো থেকে শুরু করে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য, হাসির জন্য আমন্ত্রণ, ফোন নম্বর দাবি, অথবা বেশ্যা বলে গালিও হতে পারে। এবং এটার শেষ হতে পারে মারাত্মকরকমের অপরাধ সংঘটনের মধ্য দিয়ে।
আর এরই মধ্যে ৩০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পালিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-স্ট্রিট হ্যারেসমেন্ট উইক। রাস্তায় যেকোনো ধরনের হয়রানি বন্ধে এখনই উপযুক্ত সময় সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা এবং মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর সবার সামনে তুলে ধরা।
এই ধরনের হয়রানি এখন কেবল আঞ্চলিক সমস্যাই নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী শতকরা প্রায় আশি ভাগ নারী এবং ভিন্ন সেক্সের অন্য লোকজনও রাস্তাঘাটে উত্যক্ত হচ্ছে নানাভাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে আত্মাহুতির ঘটনাও হরহামেশাই ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্তরা নিজে থেকেই তাদের চলাফেরার গণ্ডি সীমিত করে ফেলে নিরাপত্তার কথা ভেবে। এটা খুব বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।এর এখানেই সমাপ্তি হওয়া উচিত।
কিন্তু আমরা কি করতে পারি?
১. ভাল উদাহরণ তৈরি করতে পারি, শ্রদ্ধাশীল হতে পারি।
২. আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারি, যতো বেশি শেয়ার করবো, ততবেশি সচেতন হবে অন্যরা। এতে করে সহায়তার বিষয়টিও সামনে চলে আসে।
৩. হয়রানি যারা করছে, তাদের মুখের ওপর বলতে শেখা, ‘এই যে, এটা ঠিক করছো না’, ‘ভাল হয়ে যাও’, ‘এ ধরনের হয়রানি বন্ধ কর’, জিজ্ঞাসা করতে পারি, ‘আপনি কি আবার বলবেন, যা বলছিলেন’, অথবা ‘আপনি কি চান, আপনার মা শুনুক, আপনি কি বলছেন’। আমরা এ ধরনের হয়রানির বিষয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্টও করতে পারি, যদি ওই ব্যক্তির ছবি থাকে, তাহলে ছবিসহ।
৪. রাস্তাঘাটে আমরা যখন কাউকে হয়রানির শিকার হতে দেখি, তখন নিজেরাও যেন প্রতিবাদে এগিয়ে যাই। আমরা নির্যাতিতকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, সে কোন সাহায্য চায় কিনা এবং সহায়তার প্রস্তাবও দিতে পারি। আমরা সরাসরি উত্যক্তকারীকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি, নির্যাতিত ব্যক্তিকে আমি চিনি, এমন একটা ভাব করে সহজেই ওই অবস্থা থেকে তাকে বের করে আনতে পারি।
৫. কমিউনিটিকে এ ব্যাপারে সচেতন করে একত্রিত করতে হবে। কোন ইভেন্ট সংগঠিত করা যায় কোন ঘটনার প্রতিবাদে, লেখালেখি করা যায় সংশ্লিষ্ট মহলে, তরুণদের একাজে সম্পৃক্ত করে উৎসাহিত করা যায়।
ফেসবুকে একজন তার প্রতিক্রিয়া এভাবেই জানালেন, ‘শুধুমাত্র জনসমক্ষে আমি আছি, এর মানে এই নয় যে, আমি ‘গণিমতের মাল’ হয়ে গেলাম। তোমার প্রতি আমার কোন দেনা-পাওনা নেই, এবং আমি তোমার জন্যও আসিনি রাস্তায়’।
আরেকজন বললেন, যখন আমি পুরুষের পাশাপাশি রাস্তায় হাঁটি, আমি চাই না, সেই পুরুষটি আমাকে কিছু বলুক। আমি শুধু কোন ঝামেলা ছাড়াই আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে চাই।
রাস্তাঘাটে হয়রানি বন্ধে চারটি পদক্ষেপ:
১. সমাজে রাস্তায় হয়রানির বিষয়টি কমপ্লিমেন্ট হিসেবে দেখা যাবে না, এটা ছোটখাটো অপরাধ বলেও গণ্য করা যাবে না, এমনকি হয়রানির শিকার ব্যক্তির দোষ বলেও ধরা যাবে না।
২. যারা হয়রানির শিকার, তাদের সত্যিকারভাবে সহায়তায় এগিয়ে আসুন। তাদেরকে বলতে হবে, বুঝাতে হবে যে, ক্ষমতায়নের প্রকৃত দৌড় কতখানি, কিভাবে এই সমস্যায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো যায়, আত্মরক্ষা এবং হয়রানির শিকার হলে কিভাবে তা জানানো উচিত অন্যদের।
৩. হয়রানি করতে পারে এমন লোকজনকে সনাক্ত করা, তাদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ছেলেরা ছেলেদের মতোই হবে, এই তত্ত্ব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাবা, ভাই, চাচা এবং বন্ধুদের উচিত হবে এসব মানুষকে (হয়রানি যারা করে) শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেরাও এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে না পড়া। যেসব সংস্থা ছেলেদের নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে শিক্ষা দেয়, সেইসব সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা সন্তানদের।
৪. আমাদের উচিত রাস্তাঘাটে হয়রানিমূলক মন্তব্যের চ্যালেঞ্জ করা, মাধ্যম যাই হোক না কেন, যেসব ক্ষেত্রে নারী এবং সেক্সুয়ালি ভিন্নতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যে নীতিমালাই অশ্রদ্ধা এবং বৈষম্য দেখাবে, তারই প্রতিবাদ জানানো। সব ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং হয়রানির বিরুদ্ধে আমাদের চ্যারেহ্জ ছুঁড়ে দিতে হবে। এগুলো সবই আন্তসম্পর্কিত।