আমরা যারা একলা থাকি-১৪

imp 1উইমেন চ্যাপ্টার: বিশ্বাস বস্তুটা সব মানুষের জীবনেই অপরিহার্য হলেও কিছু কিছু মানুষ থাকেন, যারা কেবলই বেঁচে থাকেন এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্বাসের একটু এদিক-সেদিক হলেই তারা মুষড়ে পড়েন, কখনও কখনও তা আত্মঘাতীও হয়ে উঠে। আর এসব মানুষের অধিকাংশই হন একাকি মানুষ। একাকি বলেই তারা বিশ্বাস করে আঁকড়ে ধরতে চান একের পর এক মানুষকে। ফলে প্রায়শই তাদের বিশ্বাসভঙ্গের শিকারও হতে হয়। কিছুটা শক্ত হয়ে আবারও নতুন করে কাউকে অবলম্বন করে বাঁচেন, বাঁচার প্রয়োজনেই।

তেমনই একজনের একটিমাত্র গল্প এটি।

বিদেশ-বিভুঁইয়ে অনেকেই অনেক ধরনের বিপদে পড়েন, কেউ ইমিগ্রেশন জটিলতায়, কেউ ভিসা জটিলতায়, কেউ আর্থিক টানাপোড়েনে, কেউ বা সম্পূর্ণই পারিবারিক বা সামাজিক, এমনকি ব্যক্তিগত অসুস্থতাও অনেক সময় পারস্পরিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে। এমনি সব সমস্যা-সংকটে ‘তিনি’ এগিয়ে যান হাসিমুখে, পাশে দাঁড়ান, সমস্যা সমাধানে কোমর বেঁধে লেগে পড়েন। অধিকাংশ সময়ই জয় নিয়েই ফেরেন, পরাজয় তার অভিধানে নেই বললেই চলে। বিদেশের মাটিতে গত ১৮ বছরে তার কাছে যেকোনো বিপদে সাহায্য চাইলে, পাননি, এমন মানুষ কমই আছে। বিনিময়ে সেই সাহায্যপ্রাপ্ত মানুষগুলোকে তিনি বিশ্বাস করেন উজাড় করে দিয়ে। ব্যক্তি জীবনে প্রচণ্ড একাকি এই মানুষটি খড়কুটার মতোন আঁকড়ে থাকেন তাদের, বয়সের তারতম্য হলেও ঝাঁপিয়ে পড়েন যেকোনো প্রয়োজনে।

সেই ‘তিনি’কে দেখলাম কাল বেশ বিমর্ষ। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো যেন। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে যে মানুষটা সবসময় পাশে এসে দাঁড়ায়, সেই ‘তিনি’ কেন এতো মন খারাপ করে আছেন? জানতে চাইলে মাথা নাড়েন কেবল। অনেক কষ্টে বের করা হয় তার ভিতরের কথা। তাঁর লিগ্যাল এইড সার্ভিসে তিনি কাজ দিয়েছিলেন বেশ কজন তরুণ-তরুণীকে। তাদের ইমিগ্রেশন যখন প্রশ্নবিদ্ধ, অথচ পেটে ভাত নেই, তখন ‘তিনি’ই ছিলেন তাদের একমাত্র সহায়। আর সেই তারাই আজ যখন পায়ের নিচে মাটি শক্ত করে দাঁড়িয়েছে, অফিসের সব গোপন তথ্য নিয়ে নিজেরাই গিয়ে খুলে বসেছে একই আদলের আরেকটি ফার্ম। ‘তিনি’ কিন্তু পারেন এখন আইনী সহায়তা নিয়ে ওদের ভিত নড়বড়ে করে দিতে, কিন্তু তা কি করবেন? করবেন না। এটা তার সাথে যায় না। কিন্তু এমন বিশ্বাসঘাতকতাও তিনি মানতে পারছেন না।

এই ‘তিনি’কে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু এইটুকুই বলতে পারি যে, যতোই আপনি একা থাকুন না কেন, মানুষের ওপর, বিশেষ করে বাঙালীর ওপর থেকে নির্ভরতাটুকু কমান। এখন থেকে কারও সাহায্যে এগিয়ে যাবেন না, পারলে কুকুর-বিড়াল পোষেন, এরাও আপনার বিপদের সময় বন্ধু হবে, কিন্তু ‘বাঙালী’ হবে না কখনও।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এটাও বললাম যে, ‘বিপদ-আপদ যখন আসে, তখন দল বেঁধেই আসে। কাজেই এ নিয়ে প্যানিকড হওয়ার কোন কারণ নেই, চুপচাপ থাকেন, দেখবেন অন্য একটি দরোজা আপনা থেকেই খুলে যাবে, শুধু চোখ-কান খোলা রাখুন’।

জানি না আমার কথায় ‘তিনি’ ভদ্রলোক স্বস্তি পেয়েছেন কিনা! সাড়ে সাত হাজার মাইল দূর থেকেই আর কীইবা আমি বলতে পারি! একজন একাকি মানুষ যখন আরেক একাকি মানুষের কাছে নির্ভরতা চায়, স্বস্তি চায়, তখন সেটা কত বড় সান্ত্বনা হতে পারে, তা ভাববার বিষয়!

বি:দ্র: ‘আমরা যারা একলা থাকি’ লেখা শুরুর পর বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে নানারকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অধিকাংশই পজিটিভ প্রতিক্রিয়া। তাদের নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায় এসব লেখায়, এমনটিই জানিয়েছেন তারা। তাই বলছিলাম যে, আপনারাও লিখুন। নিজেদের জীবনের কথা, বন্ধুর কথা, জানা কথা, সব।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.