চ্যালেঞ্জের মুখে নারী উদ্যোক্তারা

women enterpreuners 2উইমেন চ্যাপ্টার: বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা গত এক দশকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মূহূর্তে দেশের মোট জিডিপি’র একটি বড় অংশ আসে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে । আর দেশে এখন নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও বহুগুণে বাড়ছে। এই মূহূর্তে দেশের মোট শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে দশ শতাংশের বেশি নারী । আর তারা বুটিক, পার্লারের মত ছোট উদ্যোগে যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন চামড়া, হিমাগার ও আইটিসহ আরো নানামুখী সব ব্যবসায়িক উদ্যোগেও। তবে ছোট বা মাঝারি যে কোন শিল্পেই নারী উদ্যোক্তাদের মুখোমুখি হতে হয় মূলধনের সংকট থেকে শুরু করে পারিবারিক বাধাসহ নানা সমস্যার ।

আর সেকারণেই নিজেদের জন্য আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঁচশ’রও বেশি উদ্যোক্তা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা তথা সমতাভিত্তিক টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলায় হয়ে গেলো “নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনী-২০১৪”। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। ব্যাংক, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কেয়ার বাংলাদেশ, জাইকা বাংলাদেশ ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক এর এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ দিনব্যাপীএই মেলার আয়োজন করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই)  সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নারী উদ্যোক্তারা নতুন নতুন পণ্য তৈরি করছেন। নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেই শতভাগ ঋণ ফেরত পাওয়া যায়। নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। ইতিমধ্যেই আমরা তার অনেক প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি।”

ঢাকার বাইরে থেকে আসা একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা জানান, পরিবারের অনেক বাধা পেরিয়ে তিনি আজ এই জায়গায়। পরিবার থেকে সামান্য সাহায্যও যদি তিনি পেতেন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা যদি পেতেন, তাহলে চলার পথটা আরও বেশি মসৃন হতো। আরেকজন বললেন, ঋণ না পেলে ব্যবসা চালানো কষ্টকর। সেই ঋণ পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে যায় একজন নারীর জন্য। ব্যাংকগুলো এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে চায় না যে, নারীরা সময়মতো সেই ঋণ ফেরত দিতে পারবে।

আর এসব বাধা ডিঙাতেই তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের দাবি জানান তারা। তারা বলেন, এতোদিন নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে বুটিক বা পার্লারের মতো ব্যবসাই বোঝানো হতো। কিন্তু সেই গণ্ডিও তারা পেরিয়ে এসেছেন নিজেদের যোগ্যতা বলেই। পরিবার-সমাজের সব বাধা পেরিয়ে তারা আজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তবে এই প্রতিষ্ঠা পেতে এখনও নারীদের লড়াই করতে হচ্ছে সামাজিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে। ব্যবসার প্রধান লগ্নি পুঁজি জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে গর্ভনর বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের এই যৌক্তিক দাবি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে জানাবেন।”

দেশে কার্যরত ব্যাংক ও আথিক প্রতিষ্ঠান, কেয়ার বাংলাদেশ ও জাইকা বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশ্যাল প্রোগামস্ বিভাগ দিনব্যাপী সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৭৮টি স্টলে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।

নারী উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে গভর্নর বলেন, “পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পেছনমুখো মনোভাব নারীর ক্ষমতায়নে বড় বাধা। তবে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে অর্থায়ন কোন বাধা নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

“এই তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা এখন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জামানতের বিপরীতে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা গ্রুপ গঠন করে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি ঋণ নিতে পারছেন। প্রয়োজন হলে এই তহবিলের আকার আরো বাড়ানো হবে। নারী উদ্যোক্তারা যতটা প্রয়োজন ততটা ঋণই এখান থেকে নিতে পারবেন।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে নারীদের আরও বেশি করে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তাঁদের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ, উৎসাহ ও বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে হবে।”

ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া সিএসআর মনে করবেন না, এটি এখন লাভজনক ব্যবসার একটি মডেল।”

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, “দেশে মাত্র সাতটি ওমেন চেম্বার আছে। আশা করি সব জেলাতেই এমন চেম্বার হবে। তবেই নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা সহজ হবে।”

তিনি উপস্থিত উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।

শেয়ার করুন: