প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ নারীমৃত্যুর অন্যতম কারণ

bleedingউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (জুন ৭): সারাবিশ্বে পাঁচ লাখেরও বেশি মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ বা পিপিএইচ এবং সারাবিশ্বে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যতসংখ্যক মা মারা যায় তার শতকরা ২৫ ভাগের জন্যই দায়ী এই কারণ।

আফ্রিকায় প্রায় ৩৪ ভাগ এবং এশিয়ায় শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি মায়ের মৃত্যু হয় পিপিএইচ এর কারণে। বাংলাদেশে গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত শতকরা ২২ ভাগ মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।

শিশুর জন্মের পর অতিরিক্ত হারে রক্ত যাওয়াটাই হচ্ছে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ (পিপিএইচ)। এমনকি এ সময়টাতে অল্প পরিমাণে রক্ত গেলেও তা রক্তশূন্যতায় ভূগছে এমন নারীর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
কি কারণে হয় পিপিএইচ?

প্রসবের পর জরায়ুর ঠিকমতো কাজ করতে না পারার ব্যর্থতাই হচ্ছে পিপিএইচ এর প্রধান কারণ। পিপিএইচ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: অনেক সন্তানের জন্মদান, আগের প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বড় আকৃতির শিশুর জন্মদান অথবা যমজ শিশু বা ততোধিক শিশুর জন্মদান। সম্ভাব্য অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, জরায়ুর স্থানচ্যুতি বা ফেটে যাওয়া এবং টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়া। অন্যদিকে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ কোন কারণ ছাড়াও, আগে স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এমন নারীর ক্ষেত্রেও পিপিএইচ হতে পারে।

পিপিএইচ রোধে কি করা যেতে পারে?
পিপিএইচ কমাতে অধিকাংশ পদক্ষেপই প্রমাণিত হয়েছে। পল্লী এলাকার কমিউনিটিতে দক্ষ সহায়তাকারী বা প্রশিক্ষিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে এগুলোর বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, একজন দক্ষ সহায়তাকারীর (চিকিৎসক, নার্স এবং প্যারামেডিকস) মাধ্যমে ‘একটিভ ম্যানেজমেন্ট অব দ্য থার্ড স্টেজ অব লেবার’ (বা এএমএসটিএল) এবং কোন দক্ষ সহায়ক ছাড়া যারা সন্তানের জন্ম দেন সেসব নারীর মাধ্যমে বিশেষ ওষুধের ব্যবহার। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিটোসিন এবং মিজোপ্রোস্টল জাতীয় ওষুধ জরায়ুর সংকোচন ঘটায় এবং প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের পরিমাণও কমিয়ে আনে। মিজোপ্রোস্টল ট্যাবলেট বাড়িতে এবং গ্রামীন এলাকায় পিপিএইচ এর চিকিৎসায় অতি উত্তম। হাসপাতালের বাইরে শিশুর জন্মের অব্যবহিত পরে এই ট্যাবলেটের ব্যবহার পিপিএইচ রোধে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ বলে ধরা হয়। এএমএসটিএল প্রক্রিয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে মিজোপ্রোস্টল এর ব্যবহার শতকরা ৬৬ ভাগ পর্যন্ত পিপিএইচ রোধ সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশে পিপিএইচ নিয়ে যারা কাজ করছে
পিপিএইচ রোধে এবং এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত মূল পদক্ষেপগুলোর আরও বিস্তার ঘটাতে এবং একে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে ইউএসএইড এবং এমসিএইচআইপি। উদাহরণস্বরূপ, কমিউনিটিতে এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে মিজোপ্রোস্টল ট্যাবলেটের ব্যবহার নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় সহায়তা করেছে ইউএসএইড। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে কমিউনিটি পর্যায়ে পিপিএইচ রোধে মিজোপ্রোস্টল ট্যাবলেটের ব্যবহার প্রচলন করেছে ইউএসএইড এবং এমসিএইচআইপি। এ দুটো সংস্থা মিলে ২০১২ সালে মোট ৩৫০জন মেডিকেল ও প্যারামেডিকেল সহায়তাকারীদের এএমটিএসএল এবং ১৯০০ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীকে প্রসবপরবর্তী রক্তক্ষরণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
(সংগৃহীত)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.