উইমেন চ্যাপ্টার: ‘আপা, আপনার স্বামী কি করেন?’ বা ‘ আমাদের দুলাভাই কোথায় আছেন ( এই কোথায় মানে কোথায় কাজ করেন)? এই প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়নি এমন নারী এই বঙ্গদেশে প্রায় নাই।
আমার এক বন্ধু তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় আসছিল, তার এক পুরুষ সহকর্মী যিনি অন্য জেলায় কাজ করেন, তিনিও আসছিলেন ওই প্রোগ্রামে, আমার বন্ধুকে জিজ্ঞ্যেস করলেন,’ আপনার সাথে কে আসছেন? দুলাভাই?’ বন্ধু জানতে চাইলো ‘কে আসবে আমার সাথে আর কেনই বা আসবে?’ উত্তর হলো, না, এতদূর থেকে আসছেন, একাই আসবেন?’ বন্ধুটি পাল্টা জানতে চাইলো ‘ আপানার সাথে কে আসছেন? আপনার স্ত্রী?’ সহকর্মীটি অবাক গলায় উত্তর দিলেন,’ আমার সাথে আবার কে আসবে, আমি পুরুষ মানুষ!!’
আমার আরেক বন্ধু গল্প করছিলো তার খুব সাম্প্রতিক একটি অভিজ্ঞতার কথা। একজন এসেছেন তার অফিসে। মফস্বল শহরের একজন মানুষ। এসেছেন তার পরিচালিত সংস্থার জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ করাতে। এমনিতে মানুষটি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত, ছোট্ট সংস্থাটি স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে। আমার বন্ধুটির সাথে তার এই প্রথম দেখা। কাজের কথা শেষ হওয়ার পরে ভদ্রলোক জানতে চাইলেন,’ আপা, এই প্রতিষ্ঠানের আগে কোথায় কাজ করতেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না দিতেই আপনার দেশের বাড়ী কোথায়?’ বিরক্তি চেপে উত্তর দিতেই আবার ‘ আপা, আপনার ফ্যামিলি?’ বন্ধু শক্ত মুখে জানালো তার সন্তান সংখ্যা। মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই সেই মোক্ষম প্রশ্ন,‘ দুলাভাই কি করেন আপা?’ আমার বন্ধুটি রাগ করতে গিয়েও সামলে নিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে তাহলে, এখন আমাকে একটি মিটিংয়ে যেতে হবে। পরে আবার কথা হবে।‘।
কিন্তু উনি ভুলছেন না। দুলাভাইয়ের সংবাদ নিবেনই তিনি। বঙ্গনারীর নিজের জীবনে অন্য মানুষের ‘দুলাভাই’ চরিত্রটির এই ব্যাপক বিস্তৃতির কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে কিনা বন্ধু জানতে চাইলো। আমার কাছে তো নাই, আর কারও কাছে কি আছে? অবশ্য সবসময়েই যে ইচ্ছেকৃত অপ্রস্তুত করার জন্য এই প্রশ্ন করা হয় তাও হয়তো না।
অনেক সময়ই আমাদের দেশের মানুষজন ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কতটুকু বা কি কথা জিজ্ঞ্যেস করা উচিত নয়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে’ সেন্স অফ প্রপরশন’ – যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘ঔচিত্য বোধ! জাতিগতভাবেই এই ঔচিত্য বোধ ব্যাপারটি আমাদের অত্যন্ত কম বা ক্ষেত্র বিশেষে নাই। কিন্তু কিছু করতেও তো পারা যাচ্ছে না!
(চলবে)
বি.দ্র. এই কলামে যে কেউ যেকোনো অভিজ্ঞতার কথা লিখে জানাতে পারেন। নাম-ঠিকানা উল্লেখ না করেই।