উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (জুন ৭): আগামী অর্থবছরে নারী উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণে ৪০টি মন্ত্রনালয় ও বিভাগের অধীনে প্রস্তাবিত জেন্ডার বাজেটের ঘোষণা করা হয়েছে। মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ৬১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পৃথক বাজেট প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন।
জেন্ডার বাজেট প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রী বলেন, এই সরকার নারী উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী নারী ও শিশু কল্যাণে সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারীর প্রশিক্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, শিশুর উন্নয়ন, চাইল্ড হেলপ লাইন ও প্রোটেকশনের কথাও তুলে ধরেন।
বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে সরকারি বরাদ্দ ও ব্যয়ের জেন্ডার ভিত্তিক বিভাজন তুলে ধরেন। এছাড়াও বাজেট পেশকালে গত পাঁচ বছরে প্রতিটি মন্ত্রনালয় ও বিভাগের আওতায় জেন্ডার বিষয়ক অর্জনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন অনুযায়ি, নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র দূরীকরণ অনুচ্ছেদের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের (১৩ হাজার ১৭৮কোটি টাকা) ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকা; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের (১১ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা) ৫৩ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মোট বাজেটের (৯ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা) ৪৭ দশমিত ৫৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা; সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মোট বাজেটের (২ হাজার ২১৪ কোটি) ৪০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ৯০৪ কোটি টাকা; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে মোট বরাদ্দের ৬৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ৭১৫ কোটি টাকা নারীর উন্নয়ন ও কল্যাণে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অংশগ্রহণ অনুচ্ছেদের অধীনে নারীর উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৪৭ কোটি টাকা; জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে ১৫৮ কোটি টাকা; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে ৯৯৮ কোটি টাকা; আইন ও বিচার বিভাগে ১৭৪ কোটি টাকা; খাদ্য মন্ত্রনালয়ে ৬৬৭ কোটি টাকা; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা; ধর্ম মন্ত্রনালয়ে ৮৭ কোটি টাকা; নির্বাচন কমিশনে ২৭৮ কোটি টাকা; বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে ৬৪ কোটি টাকা; ভূমি মন্ত্রনালয়ে ১০৬ কোটি টাকা; পরিবেশ ও বন ২৯৩ কোটি টাকা; সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে ৫১ কোটি টাকা; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ে ১২২ কোটি টাকা; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে ৩০৩ কোটি টাকা; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে ৫৮৬ কোটি টাকা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে ২০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই অনুচ্ছেদের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগে আরো প্রায় আঠার হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে ৫২ কোটি টাকা; বিদ্যুৎ বিভাগে তিন হাজার ৭৮১ কোটি টাকা; জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ৭৪৯ কোটি; কৃষি মন্ত্রনালয়ে পাচঁ হাজার ২১৯ কোটি টাকা; মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয় ৩৬৪ কোটি টাকা; শিল্প মন্ত্রনালয়ে ৭৯৫ কোটি টাকা; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে ৬৮ কোটি টাকা; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে ৯৭ কোটি টাকা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে ৯৭ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার বিভাগে ছয় হাজার ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এছাড়া নারীর গতিশীলতা, সংযোগ ও তথ্য প্রবাহে প্রবেশগম্যতা অনুচ্ছেদের অধীনে নৌ- পরিবহন মন্ত্রনালয়ে ২০২ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রনালয়ে এক হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা; সড়ক বিভাগে এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে ২৩৪ কোটি টাকা; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ে ৭২ কোটি টাকা; ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে ৩৪৯ কোটি টাকা এবং ৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি টাকা।