উইমেন চ্যাপ্টার: আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশ থেকে সবাইকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বিজয়ের এ মাসে সবাই রাজধানীতে বিএনপির কার্যালয়ের সবাই সমবেত হবেন। বাসে-লঞ্চে যে যেভাবে পারেন ঢাকা আসেন। যারা রাজধানীতে আছেন আপনারাও সেদিন পথে নামুন”।
একি সঙ্গে কর্মসূচিতে কোন বাধা না দিতে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, “যানবাহন, হোটেল-রেঁস্তোরা বন্ধ করবেননা। নির্যাতন, গ্রেফতার বা হয়রানির চেষ্টা করবেননা”।
কর্মসূচিতে বাধা দিলে জনগণ তা মোকাবেলা করবে বলেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।
নির্বাচন স্থগিত এবং নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাঁচ দফা অবরোধের পর নতুন করে একই কর্মসূচি না দিয়ে ঢাকায় সবাইকে আসার কর্মসূচি দেন। এর মধ্য দিয়ে দাবি মেনে না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচির দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন উল্লেখ করে তা প্রতিহত করতে নতুন কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “২৯ ডিসেম্বর সারাদেশ থেকে সক্ষম নাগরিকদের ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি’।
৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। এখানে জনগণ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে গঠিত সরকার ‘বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল’ হবেনা”।
তিনি বলেন, “এটা হবে ‘বাই দ্য ইলেকশন কমিশন, ফর দ্য আওয়ামী লীগ, অফ দ্য আওয়ামী লীগ”।
খালেদা জিয়া বলেন এ গণবিরোধী প্রক্রিয়া বন্ধ করার সাধ্য না থাকলে নির্বাচন কমিশনের উচিত পদত্যাগ করা।
খালেদা বলেন, “ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিগুলোর পাশাপাশি দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনরত সব পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে জেলা, উপজেলা ও শহরে ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী তামাশা প্রতিহত করুন।”
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনকে ‘নির্লজ্জ সিলেকশন’ আখ্যায়িত করেন তিনি।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসানে সমঝোতা না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “তিন দফা আলোচনা সত্ত্বেও সরকারের অনড় মনোভাবের কারণে কোনো সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তারা সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়নি।”
দেশজুড়ে বিরোধী মতের সবার ওপর দমন-পীড়ন চলছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী নেত্রী।
বিরোধী দলের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের মদদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলছে অভিযোগ করে তা প্রতিরোধে ‘গণপ্রহরা’ দেয়ার কথা বলেন খালেদা।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিএনপি নীরব- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রতিক্রিয়ায় তিনি মর্মাহত। তবে এই বিষয়টিকে কূটনীতিকভাবে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন বিরোধী নেত্রী।
নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের পক্ষে দাঁড়িয়ে তার আন্দোলনের প্রতি সমর্থনও জানান তিনি।
চলমান আন্দোলনে চারদফা করণীয় ও ১৮ দলীয় জোটের নীতি-কৌশল তুলে ধরেন খালেদা। এর মধ্যে আছে- প্রহসনের নির্বাচনে বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যস্থাপন, বিভক্তি-বিভাজনের রাজনীতির অবসানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি গঠন এবং সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীদের বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকা।
তবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যই শুধু পাঠ করে শোনান বিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আর এ গনি, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, শমসের মবিন চৌধুরী, ওসমান ফারুক, রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, মারুফ কামাল খান প্রমুখ।
১৮ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর নেতা রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবদুল মোবিন উপস্থিত ছিলেন।