নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছে না যুক্তরাষ্ট্রও

US state Deptউইমেন চ্যাপ্টার: ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং কমনওয়েলথের পর এবার বাংলাদেশের আগামী ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বললো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেন সাকি গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন থেকে এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনও গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে বিবৃতিতে জেন সাকি নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ অব্যাহত রেখে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে এদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ওয়াশিংটনভিত্তিক দুই আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার কথা ছিল।
বিবৃতিতে জেন সাকি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার একটি সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও  বেশি আসন প্রতিদ্বন্দ্বিহীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, এমন একটি নির্বাচন আয়োজনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তবে পরে অনুকূল পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাতে প্রস্তুত আছে। আর সংলাপ অব্যাহত রাখা এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য যথোপযোগী সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ জোরালো করার জন্য প্রধান দলগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানায়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, একটি সহিংসতামুক্ত ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে নিজেদের জাতীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং যাঁরা নেতৃত্ব প্রদানের আকাঙ্খা পোষণ করেন, তাঁদের আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুপ্রাণিত করে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, সব দলের ও বাংলাদেশি নাগরিকদের অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের  মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই মতামত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। একইভাবে এই সুযোগ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা বিরোধী দলের দায়িত্ব।

প্রসঙ্গত: যুক্তরাষ্ট্রের আগে গত রোববার কমনওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মা নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠির মাধ্যমে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়টি জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং পরিবেশ না থাকায় তাঁরা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন না। ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে কমনওয়েলথ মহাসচিবের কাছে পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
এদিকে একই কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিমালা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ক্যাথরিন অ্যাস্টনের মুখপাত্র ব্রাসেলস থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদকে জানান, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেয়ার করুন: