জামাতমুক্ত দেশ চাই, বিজয় দিবসের অঙ্গীকার

Pataka 4উইমেন চ্যাপ্টার: এবারের বিজয় দিবসটা যেন অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে এসেছে বাঙালীর জীবনে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি অনেকদিনের। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এসে সেই দাবির প্রাথমিক ধাপ পেরিয়েছে দেশ। ফাঁসি কার্যকর হয়েছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার। তাই লাল-সবুজের পতাকার রং এবার আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে একাত্তরে স্বজন হারানো পরিবারগুলোতে।

কিন্তু দেশ আজ চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই রেশও আছে বাতাসে। বাতাসে লাশের গন্ধ এখন নতুন করে ভাসছে, রক্তের হোলিখেলায় মেতেছে পুরনো শকুনেরা। রাজনীতির নামে দেশে চলছে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। মরছে মানুষ, পুড়ছে মানুষ, দোকানপাট, জনপদ, নিশ্চিহ্ন হচ্ছে মানুষের ইতিহাস, সীমান্তে ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। তারপরও এসেছে বিজয় দিবস। বাঙালী আজ মেতে উঠেছে নতুন করে দিন রচনার উন্মাদনায়।

বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে রয়েছে নানা কর্মসূচি। তবে এবারে নতুন সংযোজন শাহবাগে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি। দিনভর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কনসার্ট ফর ফ্রিডম এবং বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলের ঠিক এই সময়টাতে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করায় তা পালন করতেই এই সময়কে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা। বিশ্বের যে দেশে যেখানেই আছে বাংলাদেশিরা, একই সময়ে তাদেরকেও এই জাতীয় সঙ্গীতে শামিল হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ছেয়ে গেছে শুভেচ্ছায়। কাদের মোল্লার ফাসি কার্যকর হওয়ায় অধিকাংশেরই ভাষাতে ছিল শান্তির পরশ।

উন্নয়ন কর্মকর্তা আরিফা শারমীন লিখেছেন, ‘এবারের বিজয় দিবসের অনুভূতি অন্যরকম। একদিকে ৪২ বৎসরের পুরানো ঘতকদের শাস্তি যেমন হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে, তেমনি আরেকদিকে আমার দেশ রক্তাক্ত। যে শিশুটি আগুনে পুড়েছে অথবা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছি, যে মা আজ রাতে তাঁর সন্তানদের খাবার দিতে পারে নাই তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছি, ভিন্ন ধর্মের অনুসারি হওয়ার কারণে আজ আমার যে বন্ধু/ভাই/ নির্যাতনের শিকার তাঁর কাছে ক্ষমা চাই, কারণ আমরা একটা দেশ পেয়েছি, কিন্তু ভুলে গেছি মানবতা। দানবের হাত থাকে মুক্তি পাক আমার দেশ- আজ এটাই একমাত্র কামনা । সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা’।

আরেকজন লিখেছেন, ‘….বড়বেশি দাম দিয়ে কেনা এই বাংলায় জামাত-শিবিরের ঠাঁই নেই, আর এক মূহূর্তও ওদের ছাড় দিতে রাজী নই….বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের সবার দৃঢ় অঙ্গীকার….জয় বাংলা’।

খান আসাদুজ্জামান মাসুম লিখেছেন, ‘চারিদিকে বিজয়ে আওয়াজ শোনা যায় …
এতদিন হায়নাদের বোমা ককটেলের আওয়াজ শুনে মানুষ আতংকিত ছিলো ..
আজ বিজয়ের আওয়াজ শুনে আসুন মুক্তির জয়গান গাই …
জয় বাংলা’।

লেখক মাসুদা ভাট্টি: ‘স্বাধীনতা শব্দটি দ্বিধা আর জড়তা ছাড়া উচ্চারণের ঔদ্ধত্য দেখাতে পারাই সত্যিকারের স্বাধীনতা ৷
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় এবার আমার সে ঔদ্ধত্য সম্পন্ন হয়েছে৷ জয় বাংলা’।

এস এ অরণ্য লিখেছেন, আমাদের লাল সবুজ পতাকা, আমাদের শক্তি। মহান বিজয় দিবসে সকল শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা। আমরা তোমাদের ভুলব না। এই বাংলাদেশ আমরা দেখে রাখব, কথা দিলাম।
শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ’।

শেয়ার করুন: