উইমেন চ্যাপ্টার: ‘শত শহীদের রক্তে রাঙিয়া নতুন সূর্য উঠছে’…সত্যিই যেন নতুন সূর্য উঠেছে বাংলাদেশের আকাশে। এ সূর্যের আলোতে প্রখরতা আছে, আছে দেশপ্রেমের বিশাল অনুভূতি। তাই তো সবাই এ অনুভূতি গায়ে লাগাতে নেমে এসেছে পথে পথে, ঢল নেমেছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দিকে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শহীদদের বেদি। কারও চোখে বেদনা, কারও চোখে আনন্দের অশ্রু।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এসে জাতি যেন আজ খোলা নি:শ্বাস ফেলছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। এতোদিনের গুমোট কান্না, ক্ষোভ সব আজ হারিয়ে গেছে একাত্তরে নির্মমতার জন্য প্রথম বক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে। দণ্ড কার্যকরের দুই দিনের মাথায় দিবসটি পালনের অনুভূতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সব সদস্যের কাছে একই রকম।
বিচারের দাবি নিয়ে তাদের মতোই গত চার দশক ধরে যে দিনটি পালন করছিল জাতি, এবার দিনটি ভিন্ন এক মাত্রা নিয়ে এসেছে।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর প্রতিটি শহীদের সন্তান আজ অনেকটাই ভারমুক্ত, পিতৃহত্যার দায় থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ পেরুনোর আনন্দ। ‘ঘুমাও মা, ঘুমাও বাবা আজ পরম শান্তিতে’।
সকাল থেকেই ঢল নামে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। প্রতিবছর এই দিনটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে এসেছে প্রতিটি শহীদ পরিবারসহ আপামর বাঙালী। কিন্তু এবার তাতে এক ভিন্ন মাজেজা এনে দিয়েছে। সবার মনে প্রশান্তি, বিচার কাজ শুরু হয়েছে, শেষ হবে নিশ্চয়ই।
রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি সব মানুষের স্মরণের মধ্য দিয়ে ভোর থেকেই চলছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা, যা ছাপিয়ে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সমবেত মানুষের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে জয়ের তৃপ্তি।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদে প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭টা ৫ মিনিটে তারা যখন ফুল দেন শহীদ বেদীতে, তখন শহীদ স্মরণে বিউগলে বাজছিল করুণ সুর।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ফুল দেন শহীদ বেদীতে। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আবার ফুল দেন শেখ হাসিনা।
শহীদ বেদীতে ফুল দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
এরপর স্মৃতিসৌধ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয়, নামে জনতার ঢল। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সকাল সোয়া ৯টার দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যান।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বেদীতে নিয়ে যাচ্ছে শ্রদ্ধার ফুল।