অবশেষে কাদের মোল্লার ফাঁসি

Kader Mollaউইমেন চ্যাপ্টার: একের পর এক নাটকের কারণে খবরটা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউই বিশ্বাস করতে পারছিল না শাহবাগে উপস্থিত সবাই। আবার দড়ি ছিঁড়ে বেঁচে গেল না তো কাদের মোল্লা! বলা তো যায় না, যেভাবে সে ফসকে যাচ্ছে, তাতে করে শেষমূহূর্ত দেখা ছাড়া কোন উপায়ই নেই। এমনই শংকা আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই ঘোষণাটি এলো। বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়লো শাহবাগে উপস্থিত সবাই। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে, চোখের জলে আনন্দ প্রকাশ করেছে সবাই।

টানা কয়েকদিনের নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের অন্যতম আব্দুল কাদের মোল্লার। নৃশংসতার জন্য আলবদর বাহিনীর এই সদস্যের কুখ্যাতি ছিল মিরপুরের কসাই নামে।

এর মধ্য দিয়ে অপরাধযজ্ঞের দীর্ঘ ৪২ বছর পর বিচারের পর সাজা কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জন্য প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল। আর এর মধ্য দিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিজয় সূচিত হলো। সবারই এক কথা, ‘আমরা পেরেছি। আরও পারবো, দেশটাকে গড়ে তুলবো আমরাই’।

দুদিন আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দিয়েও আদালতের এক আদেশে তা আটকে যাওয়ার পর জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কাদের মোল্লাকে না ঝোলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল। এছাড়া ছিল আরও নানামুখি চাপ। তাই শেষ না দেখা পর্যন্ত স্বস্তি হচ্ছিল না কারোরই।

বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন খারিজের পর আগাম কোনো ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে না এলেও কারাগারের বাইরে প্রস্তুতি দেখে মোটামুটি বোঝা যাচ্ছিল যে, ফাঁসির কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা ৬৫ বছর বয়সী এই জামায়াত নেতার সঙ্গে দেখা করে আসার পর ছেলে জানান যে, তার বাবা তাদের আইনজীবীর সাথে দেখা করতে চাইছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বলেও তিনি জানান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল বলেন, আগেই তিনি না করে দিয়েছেন ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে। কাজেই এখন আর সুযোগ নেই।

ফাসিঁ কার্যকরের খবর শোনার পর শাহবাগের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাসহ সারাদেশ থেকে উল্লাসের খবর আসতে থাকে। তাদের ভাষায়, ‘এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের আত্মা এখন শান্তি পাবে’।

অন্যদিকে কাদের মোল্লার দল জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে খুন -ধর্ষণের দায়ে দেয়া মৃত্যুদণ্ডকে ‘হত্যাকাণ্ড’ অভিহিত করে হরতাল ডাকে রোববার বিজয় দিবসের আগের দিনটিতে।

হরতাল ডাকার পর বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-স্থাপনায় অগ্নিসংযোগও চলে। সাতক্ষীরায় পিটিয়ে মারা হয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.