জয়, গণজাগরণ মঞ্চের জয়

Shahbag 12উইমেন চ্যাপ্টার: মঙ্গলবার রাত থেকেই টানা অবস্থান নিয়েছে আবারও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।  একের পর এক মানুষ আসছে-যাচ্ছে, প্রবহমান জনসমুদ্র যেন এক। সবারই নজর আদালত আর শাহবাগের দিকে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ার খবর পৌঁছা মাত্র সেই শাহবাগ যেন হঠাৎই উত্তাল হয়ে উঠে, মানুষ ফেটে পড়ে আনন্দে। মূহূর্তে জনারণ্যে পরিণত হয় পুরো প্রজন্ম চত্বর। গগনবিদারী স্লোগান আর গানে প্রকম্পিত হতে থাকে এলাকা।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা এ আন্দোলন ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। স্লোগানের ভাষা মূলত একটাই, জয় হলো রে জয় হলো, শাহবাগের জয় হলো। শাহবাগে আসা প্রতিটি মানুষই স্বীকার করে নিচ্ছে, এটা শাহবাগেরই জয়।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও বললেন, এটা গণজাগরণ মঞ্চেরই ‘বিজয়’।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আসামিপক্ষের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এ রায় গণজাগরণ মঞ্চের বিজয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শুরু করা আন্দোলনের বিজয়।”

দণ্ডিত সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকরের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি বলেন, “একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগিতকারী জামায়াত-শিবিরকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, তাদের সকল শক্তি নির্মূল করতে হবে।”

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘যেসব শক্তি’ মুক্তিযুদ্ধের ‍বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “এগুলো করতে পারলেই আমাদের বিজয় পরিপূর্ণ হবে।”

তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি অনেক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাও এসে শামিল হন আজকের আনন্দ উৎসবে। তারা নেচে-গেয়ে, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন।

‘রিভিউ’ আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ও মূল আবেদনের ওপর দুই দিন শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হলে শাহবাগে প্রতিবাদী তরুণদের অবস্থান এক সময় লাখো মানুষের সমাবেশে রূপ নেয়।

ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনের মুখে আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের পাশাপাশি প্রসিকিউশনকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়, যার প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ  আদালতে আপিলের রায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হয়।

এর আড়াই মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দণ্ড কার্যকরে সব প্রস্তুতির পর শেষ মুহূর্তে আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

এরপর সংক্ষুব্ধ হয়ে ওই  রাত ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে আবার অবস্থান নেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকরা।

কয়েক দফায় ওই এলাকায় হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও শাহবাগ মোড়েই লাগাতার অবস্থান চালিয়ে আসেন জাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

 

শেয়ার করুন: