উইমেন চ্যাপ্টার: সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতা কোন সাধারণ ঘটনা নয়। আর ১০টা ঘটনা থেকে এটি আলাদা বিবেচনা করে অবিলম্বে বিশেষ আইন, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। রোববার ঢাকার শাহবাগে পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ধরনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর যথাযোগ্য বিচার করা হলে আজও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারতো না। বার বার আমরা শংকা প্রকাশ করি, প্রতিবাদ করি, কিন্তু এর কোন সমাধান হয় না।
বক্তারা বলেন, গত বছর কক্সবাজারের রামু, উখিয়া এবং পটিয়ায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও সাম্প্রদায়িক হামলা হলো ঠিক একই কায়দায়। ফেসবুকে মহানবীকে (স:) কটাক্ষ করার দাবি তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, লুটপাট করা হয়েছে তাদের বাড়িতে। একটি ১৫ বছরের কিশোরকে এজন্য দায়ী করে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দেওয়া হয়। অথচ রামুর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে আজ এ অবস্থা আমাদের দেখতে হতো না।
বক্তারা আরও বলেন, এক বছর পর একই ধরনের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আমাদের আবার দাঁড়াতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না একটা স্বাধীন দেশে। স্বাধীনতার ৪২ বছর আগে কতসংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছিল এই দেশে, আর আজ কতসংখ্যক আছে, তার তুলনা করলেই দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা কেউই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়নি। ফলে তারা এইদেশটাকে কখনই নিরাপদ মনে না করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আজও প্রতিদিন দেশ ছাড়ছেন এসব লোকজন। কিন্তু কেন? একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্যেই একাত্তরে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল। কিন্তু তা কি হয়েছে? বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঁথিয়ার এই ঘটনা এখনও রাজনীতিকদের টলায়নি, তারা এখনও এ নিয়ে ভাবার সময় পাননি। আর বিভিন্ন মিডিয়াও আজ এ নিয়ে আলোকপাত করতে দেখিনি। সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি ঠিক নজর কাড়ে না বরাবরের মতোই। অথচ আজ যদি আগে সংঘটিত সবগুলো ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যেতো, তাহলে আজ আবার দাঁড়াতে হতো না।
দেশে যখনই রাজনৈতিক কোন টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করে, তার সব প্রভাব গিয়ে পড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর। কাজেই সাঁথিয়ার ঘটনা রাজনৈতিক ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। রাজনৈতিক যে বিশৃঙ্খলা চলছে, সেটাকে পুঁজি করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে খেলার ঘুঁটি বানানো হচ্ছে। কিন্তু আজ বেশ জোরের সাথেই বলতে চাই, সেই দিন শেষ। আর কেউ ঘুঁটি নয়। কেউ যেন রাজনৈতিক এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ থাকতে হবে। আর যেন কোন সম্পত্তি দখলের বর্বর খেলা কেউ খেলতে না পারে।
শিপ্রা বোস বলেন, এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে, আর খেলবেন না দেশের মানুষ নিয়ে। পুরনো খেলা নিয়ে রাজনীতিতে আর ফল বয়ে আনতে পারবেন না।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক শামীম আক্তার, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, শিপ্রা বোস, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ফিরোজ আহমেদ, সাবেক ছাত্রনেতা জুনায়েদ সাকি, ছাত্র ইউনিয়নের লাকি আক্তার, বাকি বিল্লাহ, শিল্পী অরূপ রাহী, শুচিস্মিতা সীমন্তি প্রমুখ।