উইমেন চ্যাপ্টার: “আমার স্বামী, ছেলে এবং তাদের সহযোগীদের নৃশংসভাবে হত্যার দুবছর পর আমি চাই, আমার কথা, একজন দেশপ্রধানের নির্বাসিত বিধবা স্ত্রী ও একজন মমতাময়ী মায়ের কথা সবাই শুনুক”- কথাগুলো লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিধবা স্ত্রী সাফিয়া ফারকাশের। ভয়েস অব রাশিয়ার কাছে লেখা এক চিঠিতে সাফিয়া সারাবিশ্বের কাছে এই দাবি তুলে ধরেছেন। চিঠিটি সাফিয়ার বোন ফাতিমার মাধ্যম হয়ে এসেছে।
চিঠিতে সাফিয়া লিখেছেন, “আমার দেশে ন্যাটোর আগ্রাসন কেবল বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করেছিল। আমার স্বামী, যাকে আমি ‘শহীদ’ বলে গণ্য করি, আমার ছেলে এবং সেই মানুষগুলো যারা ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর লিবিয়ার নেতার বাড়িতে যখন ন্যাটো শেল মেরেছিল তখন তাদের সাথে ছিলেন এবং পরে তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীরগুলো কতগুলো উন্মত্ত মানুষ মিলে কুটি কুটি করেছিল, সেই মানুষগুলোকে আমি অপরাধী ছাড়া আর কিছুই ডাকতে পারছি না”।
“উন্মত্ত মানুষগুলো সেদিন আমার স্বামী এবং সন্তানের সাথে যা করেছিল, তা কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করা যাবে না। আর এটাও কম অপরাধ নয় যে, সেই শহীদদের দেহাবশেষ আজপর্যন্ত স্বজনদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, ইতিহাসে এমন নজির খুব কমই আছে”।
“আমি চাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যাদেরই এই হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেইসব সংস্থার সদস্যদের বলতে হবে, সেই শহীদদের দেহাবশেষ কোথায় রাখা হয়েছে এবং তা তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক, যাতে করে সঠিকভাবে সেগুলোকে দাফন করা যায়”।

“আমি আরও দাবি জানাই যে আফ্রিকার ইউনিয়ন, যার কিনা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি, সেটির উচিত এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করা। পাশাপাশি আমার ছেলে সাইফ আল ইসলাম, যে কিনা গ্রেপ্তারের পর থেকে পরিবারের সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত সেই ছেলের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিতে সহায়তা করা। সাইফের একমাত্র অপরাধ ছিল যে, সে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল, এই বিপ্লব দেশটিকে কেবল গোলযোগের দিকেই ঠেলে দিবে। আর এটাই তো এখন আমরা দেখছি”।
সাফিয়া আরও বলেন, “সাইফ আল ইসলাম লিবিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সবসময়ই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপের কারাগার থেকে বহু মৌলবাদী ও উগ্র ইসলামপন্থীদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন এবং তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে আইন মান্যকারী নাগরিকে পরিণত করেছিলেন। এদের অনেকেই তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এই বলে যে, তারা কখনই আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হবেন না। কিন্তু এখন দেখছি, যাদের সাইফ কারামুক্ত করেছিলেন, সেই তাদেরই কয়েকজন সাইফের ফাঁসির দাবি করছে। এটা সত্যিই দু:খজনক”।

সাফিয়া দাবি জানিয়ে বলেন, “ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুবছর পেরিয়ে গেলেও আমি চাই, আমার এই দাবি বিশ্ববাসী শুনুক”।