
ঢাকায় যাবার কিছু দিনের মধ্যেই মনে হয় আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল বা সলিলুল্লাহতে ভর্তি হয়েছিলাম, তাদের বেশিরভাগেরই স্বপ্নভঙ্গ শুরু হলো, শুধু যারা জাহাঙ্গীরনগরে পড়তে গিয়েছিল ওরা মনে হয় একটু কম কষ্ট পেয়েছিল, নদী না থাকলেও অনেক বড় সবুজ ছিল ওদের কাছে । প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসার চেষ্টা করতাম, মহাখালী বাস টার্মিনালে আমাদের একটা জায়গা ঠিক ছিল যেখানে আমরা একসাথে হতাম প্রতি সপ্তাহে । আমরা হিংসা করতে শুরু করলাম, যারা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল তাদের, আর যারা এই শহরেই রয়ে গেল, ওরা আবার আমাদেরকে হিংসা করতো ! এখনো এই বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে ।
অবশ্য আরেকটি ধাপ যোগ হয়েছে , আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রবাসী – প্রবাসীরাই বেশি সুখী কিনা, বন্ধুদের মধ্যে এই নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নাই । মজার ব্যাপার হলো সবাই কোন না কোনো নদী তীরবর্তী শহরেই থিতু – হাডসন পটমাক, অটোয়া , কত যে ভালো সেই সব শহরের জীবনযাপন তার ফিরিস্তির সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্র তীরের শহরের জন্য মায়া কাতরতাও শুনি, কিন্তু ফিরে আসবার কথা কেউ বলে না । আমার বন্ধুরা যারা সবাই আক্ষরিক অর্থে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত, এমনকি আমার নিজের ভাই বোন সবাই বলে এখনো ভালোবাসি ব্রহ্মপুত্রের ধারে অনেক বড় গাছে ঢাকা সাদা কালো স্বভাবের এই ছোট শহরটি ।
কিন্তু আমি যেমন ফিরে আসবার জন্য ব্যাকুল হই, আর কেউ তো এমন হয় না । আমি বলি সত্যি ফিরে জীবনের আসবো ঘানি টানা শেষ হলে, ভাবনাহীন আনন্দের জীবন কাটাতে ফিরে আসবো ব্রহ্মপুত্র তীরে। হাসে সবাই। বন্ধু , ভাই-বোন ভাবে মাথার ছিট্ এখনো ভালো হলো না আমার । ছেলে-মেয়ে সরাসরি কিছু বলে না, আভাসে বুঝাতে চায় বেড়াতে আসবার জন্য ঠিক আছে। তবে রিটায়ার্ড লাইফে তাদের কাছাকাছি থাকাই ভালো – হাডসন অথবা পোটোমাকের তীরে, নিদেনপক্ষে বুড়িগঙ্গা /তুরাগ। সবাই ভাবে যেন এই শহরে বেড়ে উঠব সেটাই নিয়ম, এই শহর ছেড়ে চলে যাব , সেটাই নিয়ম , বেড়াতে আসবো পরিযায়ী পাখির মতন, সেটাই নিয়ম কিন্তু কেউ বলে না আবার ফিরে আসবার কথা । এই শহরের প্রতি শুধু আমারই তীব্র সেই আকর্ষণ রয়ে গেল আজীবন ।
লেখক উন্নয়ন কর্মী।