লীনা হক: জ্বর থেকে উঠে ঢিলা ঢালা করে অফিসে আসলাম প্রায় ১১ টার সময় । না আসলেও অফিসের কোনো সমস্যা ছিল না , কিন্তু আমারই যেন গায়ে ব্যথা করে অফিসে না এলে ।
অফিসের লিফটের সামনে দেখা জাহানারার সাথে- সে আমাদের অফিসের সিঁড়ি ঝাড়ে মোছে আর গ্যারেজ পরিষ্কার করে । এই বিল্ডিং এর সকল অফিস মিলে তার বেতন দেয় । জাহানারার বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরে ( কি কারণে যেন এই বিল্ডিং এর প্রায় সকল সাপোর্ট স্টাফ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ) ! তো জাহানারা জানতে চাইল আমার শরীর এখন কেমন । ইন্টারেষ্টিংলি সব সময়ই সব জায়গায় সকল শ্রেনীর সাপোর্ট স্টাফ আমাকে কেন জানি তাঁদের কাছের মানুষ মনে করে – অবশ্য সমগোত্রীয়দের তো চিনে নেয়া যায়ই । আমার বা মেয়ের অসুখ হলে বা কোনো কিছুতে তারা দল বেঁধে আসে আমার বাড়ীতে। আমার জন্য হাতে করে নিয়ে আসে সাধ্যমত যা পারে , মেয়ের জন্য আইসক্রিমের বাক্স ! তাদের এই দেখতে আসা আমাকে ইমোশনাল করে তোলে !
আরও একটি ব্যাপার দেখি যে সকল নারী সাপোর্ট স্টাফরা আমার সাথে একধরনের সিস্টারহুড বন্ডেজ ফিল করে আর সেটার প্রকাশও তারা করে। কিভাবে যেন তারা জেনে যায় আমার আর তাদের জীবন সংগ্রাম একই কাতারে । পারিবারিক বা শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার সো কলড শ্রেণীগত বিভেদ হয়ত আছে – যার উপরে আমার বা তাঁদের কারো সরাসরি কোনো হাত নাই বরং হিসেব করলে আমি সুবিধাভোগী শ্রেণীতে বহাল তবিয়তে আছি, কিন্তু নারী হিসেবে আমরা – একই সংগ্রামে রত । তাদের সবার জীবনই একেকটি হার না মানার কাহিনী। জাহানারারও তাই । অনেক মায়াভরে জাহানারা আমাকে বলল ‘ আফা, আফনের শইলডা কেলান্ত দেহা যায় , শৈল্ল্যের যত্ন নিয়েন । নিজের শইল যুত না থাকলে দুইন্নাতে কোনো কিছুত সুখ নাই! শইল পইরা গ্যালে কেউও দেখতো না ভইন !’ – ‘ –
কথাটা যে আমি জানি না তাতো নয় – বা আপনজনেরা তো সব সময়ই বলতে থাকে – গত রাতে লং ডিস্টান্স কলে পুত্রধন অনেকক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করলো আমার শরীরের প্রতি খেয়াল করা দরকার , আমি হেসে সায় দিলাম । কিন্তু আজ সকালে আমার কেউ না জাহানারার কথায় মনে হলো সত্যি তো আরো অনেকদূর যে বাকী ! বয়স ও তার মুঠি শক্ত করছে – একটু হিসেব করে চলা শুরু করতে হবে ।