ফারহানা আনন্দময়ী: গত দশ মাস ধরে যতগুলো যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের বিচারের রায় ঘোষণা হয়েছে, সেই বাচ্চু রাজাকার থেকে শুরু ক’রে সাকা পর্যন্ত…প্রত্যেকটা রায় ঘোষণার আগের দিন থেকেই কেমন এক আশা, আশংকা আর উত্তেজনায় অস্থির সময়যাপন করেছি।
আজ রায় ঘোষণা করা হবে ৭১এর জালিম রাজাকার আবদুল আলীমের। গতকাল থেকে এক অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে…আজকের রায়টা ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য বিশেষ এক অর্থ বহন করছে। উত্তেজনার সাথে জোরালোভাবে যোগ হয়েছে আরো কিছু অনুভব…ঘৃণা, কষ্ট, কান্না।
আমি আমার সেজো মামাকে দেখিনি, নাম খোকন পাইকাড়, ১৯ বছরের প্রাণবন্ত তরুণ ছিলেন ৭১এ। মায়ের মুখে গল্প শুনেছি উনি ভীষণ সাহসী আর গানপাগল একজন মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে, বাড়ির সকলের কথা অগ্রাহ্য করে মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। ১৯৭১এর জুন মাসে এগারজনের একটি মুক্তিবাহিনীর সদস্য হয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পৌঁছেছিলেন। যে রাতটায় আশ্রয়ে ছিলেন আক্কেলপুরে, সে রাতেই এই রাজাকার আলীম পাকবাহিনীকে গোপনে খবরটা জানিয়ে দিয়েছিল। এই রাজাকারের সহায়তায় পরদিন সকালে পাকিস্তানীরা এসে এগারজন মুক্তিযোদ্ধা সবাইকে চোখ বেধে গুলি ক’রে মেরেছিল, তারপর একটা গর্তে সকলকে একসাথে চাপা দিয়ে রেখেছিল। মারার আগে অনেক অত্যাচারও করেছিল, যারা দেখেছিল সেদিন, তারাই পরে জানিয়েছে।

আজ সেই রাজাকার আলীমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে। জানি না রায়ে কী হবে, হয়তো ফাঁসি, নয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিছুই যায় আসেনা আমাদের আজ, এই জালিমের রায় কী হলো। কারণ, নয় মাস আগে ঘোষিত কসাই কাদের মোল্লার রায় আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতায় আজও কার্যকর দেখা হলো না। আদৌ এই সরকারের মেয়াদে তা দেখতে পাবো কিনা অনিশ্চিত। তাই রাজাকার আলীমের রায়ও যে কার্যকর দেখতে পাবো সেই আশাও দুরাশা।
আজ শুধু একটাই স্বস্তি, অন্ততঃ এই জালিম আলীমের নৃশংস অত্যাচারের ঘটনাগুলো আদালতে প্রমান হবে, সে যে অপরাধী এটা অন্ততঃ দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জানবে।
জয় বাংলা, বাংলার জয় !