নির্দলীয় সরকার না দিলে কঠিন আন্দোলন

Khaleda Ziaউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল না করা হলে কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবির স্বপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিরোধীদলীয় নেতার উত্তরাঞ্চল সফরের তৃতীয় দিন রাজশাহীতে জনসভায় সরকারকে এই হুঁশিয়ারি দেন।

সোমবার বিকালে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও একটি বড় অংশ জুড়ে ছিলো জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে আসেন।

জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ছাড়াও সমাবেশে জোট শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন।

এ সময় তিনি ২৫ অক্টোবরের পর ঢাকামুখি গণআন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, দেশের জনগণ ঢাকামুখি গণআন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছে।

জনসভায়কে নির্বাচনী প্রচারাভিযান না বললেও সমাবেশ এলাকা আগামী সংসদ নির্বাচনে আঠার দলীয় জোটের বিভিন্ন মনোনয়নপ্রত্যাশীর পোস্টারে ঢাকা ছিলো।

সমাবেশে বেগম জিয়া আবারও বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।”

“এখনো সময় আছে, সংবিধান সংশোধনে সংসদে বিল নিয়ে আসুন। সংসদ ভেঙে দেয়ার বিধান সংযোজন করুন। নইলে দেশে কঠিন আন্দোলন হবে।”

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিধান কোথাও নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “বর্তমান বিধানে সংসদ বহাল থাকবে। এমপিরা থাকবেন। আবার নির্বাচনে নতুন এমপি মনোনয়ন দেয়া হবে। এরকম বিধান কোথাও নেই। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিরোধীদলীয় নেতা এ সময় সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, জনগণ এখনও আপনাদের সম্মান করছে। ক্ষমতা ছেড়ে দিলে আপনাদের পরিনতি যা হওয়ার তা’ই হবে। নইলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করব, তখন পালাবার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।”

আওয়ামী লীগ পাতানো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ একা নির্বাচন করতে চায়। কোনো দল তাদের সঙ্গে নেই, তাই এখন নতুন নতুন দল সৃষ্টি করছে।”

এ সময় তিনি বিডিআর বিদ্রোহেকে সরকারের পরিকল্পিত সেনা কর্মকর্তা হত্যা বলে দাবি করেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্যেও আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন খালেদা জিয়া।

“আওয়ামী লীগের আমলেই সংখ্যালঘুদের জমি-জমা ও মন্দির দখল করা হয়।”

ছাত্রলীগ কর্মীদের গুন্ডা আখ্যা দিয়ে সিলেটে সিপিবি-বাসদের সমাবেশে হামলার তীব্র নিন্দা করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেন, “এখনো সময় আছে, এই গুণ্ডাদের সামাল দেন।”

হেফাজতবিরোধী অভিযানে ‘বহু’ আলেম-উলামাসহ মাদ্রাসার ছাত্র নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সমাবেশে নোবেলজয়ী ইউনূসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানানো সহ মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তিও দাবি করেন তিনি।

ফেলানী হত্যার যথাযথ বিচার আদায়ে সরকারকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, “সরকারের প্রতিবাদ করার সাহসও নেই।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার সরকার গঠনের অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ প্রতিহিংসার পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতির ধারা চালু করা হবে। চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে বলেও বলেন তিনি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ওই জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, আমিনুল হক, নজরুল ইসলাম খান, সাদেক হোসেন খোকা, ফজলুর রহমান পটল, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, হারুন অর রশীদ প্রমুখ।

জনসভায় ১৮ দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অলি আহমদ, আন্দালিব রহমান পার্থ, মুহাম্মদ ইসহাক, আবদুল লতিফ নেজামী, আ ন ম শামসুল ইসলাম, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ফরিদুজ্জামান ফরহান, সাইফুদ্দিন মনি।

শেয়ার করুন: