দিল্লি ধর্ষণ: দোষীসাব্যস্ত করাই একটি দৃষ্টান্ত

anti rapeউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন নারী বলছেন, মাত্র নয় মাসের মধ্যে দিল্লি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকেই দোষীসাব্যস্ত করে আদালত অপরাধীদের কাছে একটা কড়া বার্তা পাঠাতে পেরেছে বলে তারা মনে করছেন।

মঙ্গলবার আলোচিত দিল্লি ধর্ষণ মামলার রায়ে চারজনকে দোষীসাব্যস্ত করার প্রেক্ষিতে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন নারীদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারীরা একই সঙ্গে রাজ্যটির অন্যান্য আলোচিত নারী নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করেছেন যেখানে নির্যাতিতা বা তাঁদের পরিবার দ্রুত বিচার পাননি।

কলকাতার নারীদের অভিযোগ, পশ্চমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনা সবচাইতে বেশি হলেও বিচারের হার সবচাইতে কম।

“এ রাজ্যে রাজনৈতিকভাবে মেয়েদের সহনাগরিক না ভাবা, তারাও যে সমান সুবিচারের অধিকারী, সেটা নিশ্চিত না করার ট্র্যাডিশন চলছেই। খুবই দুর্ভাগ্যজনক এটা।

‘শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা এখন আর ভয় পাচ্ছেন না’ বলেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনিন্দিতা সর্বাধিকারী।

বিবিসির প্রতিবেদনে অনিন্দিতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “গত দুবছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে সাজা হয়নি, প্রশাসন ঘটনাগুলোকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাই কস্ট অফ ক্রাইম বা অপরাধের শাস্তির কমে গেছে। হঠাৎ করেই সংখ্যাটা সেজন্য বেড়ে গেছে – নতুন করে তো ধর্ষক জন্মায় নি।”

এ বিষয়ে গবেষক ও অধ্যাপিকা রাজশ্রী মুখার্জির অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করে প্রতিবেদনটি।

রাজশ্রী বলেন, আমার বয়স ৪০ এর কোঠায় হলেও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারিনা। অথচ যখন ২২/২৩ ছিল, সেই সময়ে কিন্তু আমি নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারতাম।

বয়স নির্বিশেষে সব মেয়েদেরই আতঙ্কে থাকতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেশ রাতে একা ট্যাক্সিতে বাড়ী ফেরার সময়ে খোলা জানলা দিয়ে হাওয়া আসছিল – দারুণ লাগছিল, আমি ফেসবুকে একটা কবিতার লাইন পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধুরা কবিতাটা উপভোগ না করে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল আমি ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছলাম কী না। অবস্থাটা এতটাই খারাপ।”

এদিকে রাজ্যে নারী নির্যাতনের সংখ্যার এই হারে বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক আর সামাজিক অনুশাসনের অভাবকের দায়ী করেছেন শাশ্বতী ঘোষ।

“বামপন্থীদের আমল থেকেই সেই রাজনৈতিক-সামাজিক অনুশাসন কমেছে।”

কলকাতার বহুল আলোচিত পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের শিকার সুজেট জর্ডনকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য যিনি কাজ করেছেন সেই শান্তশ্রী চৌধুরী বলেছেন নির্যাতিতা মহিলাদের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার কথা।

দিল্লি গণধর্ষণ ঘটনার রায়ের দিনই পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের মামলার শুনানির দিন ছিল। ঘটনার দেড়বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি।

শান্তশ্রী চৌধুরী বলেন, নির্যাতিতাকে বারবার নির্যাতনের কবলে পড়তে হয়। একবার নির্যাতনের শিকার হওয়া। পরে অভিযোগ করতে গিয়ে। তারপর আদালতে ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে। এভাবে অনেকবার। এই প্রক্রিয়ায় একেবারে ভেঙ্গে পড়েন এরা। তাই খুবই ধৈর্য সহকারে এদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আর এই ব্যাপারে সমাজের সমবেদনার অভাব হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে কলকাতার উপকন্ঠে কামদুনি গ্রামে এক কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে হত্যার ঘটনারও শুনানীর সময় হাজির হওয়া গ্রামের লোকজন এবং নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের ওপরে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।

শেয়ার করুন: