তানজিমরাই শেষ কথা নয়

ফারদিন‌ ফেরদৌস:

তানজিমের বোসোম ফ্রেন্ড মৃত্যুঞ্জয় বন্ধুর প্রতি দক্ষিণা দিয়ে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বলে দিয়েছেন যে বন্ধু পরকালের জন্য কল্যাণকর নয় তাদেরকে আমি বন্ধু তালিকায় রাখি না। তবে তুমি বন্ধু ভীষণ ভালো, ঠিক আমার মনের মতো। ধরে নেয়া যায় এই দুই প্লেয়ার সতীর্থ লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে বন্ধু তালিকায় রাখবেন না!

চলমান ইস্যুতে সিনিয়র ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তানজিমের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, তুমি কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কিছু বলোনি। সংবিধানের ৩৯ ও ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিজের মত প্রকাশ ও ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। অতএব হৈহৈ রৈরৈ করে‌ এগিয়ে চল তানজিম!

বিসিবি বলছে, ‘সে কারো‌ সঙ্গে মেশে না, সে যা পোস্ট দিয়েছে, নিজে থেকে দিয়েছে। যদি ভবিষ্যতে কোনো কার্যক্রম থাকে, আমরা পর্যবেক্ষণ করব। প্রয়োজনে মনোবিদের সহায়তা নেয়া হবে। তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। একটা তরুণ ছেলে, বয়স কম। ওর পরিবারও খুব শঙ্কিত এ ব্যাপারে। তারাও এ ধরনের একটা পরিস্থিতি হবে, আশা করেনি। তারাও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

তানজিম হাসান সাকিবের ভয়ঙ্কর উগ্র নারীবিদ্বেষ পাদপ্রদীপের আলোয় বের হয়ে যাওয়ার পর দেশি বিদেশি মিডিয়ায় খবর হলে বিসিবি’র টনক নড়ে। বিসিবির কর্তারা তানজিমকে আলতু করে প্রশ্ন করে, তুমি তো নারীবিদ্বেষী নও তাই না? লাই পেয়ে তানজিম সুন্দর ভাষায় বলে দিয়েছে আমার মাইই তো একজন নারী, আমি কি নারীবিদ্বেষী হতে পারি? জন্মদাত্রী মাকেও কমন নারীর সাথে গুলিয়ে ফেলা ছেলেটি অতঃপর দুঃখ প্রকাশ করেছে। কী হাস্যকর! তিনি পরিস্কার ভাষায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসদের মননে আঙ্গুল দিয়ে বলছেন যে তিনি একদম নারীবিদ্বেষী নন! আচ্ছা তাই যদি‌ সত্য হয় এই ক্রিকেটার ও তাঁর পরিবার কার কাছে কীজন্য ক্ষমা চাইলেন?

বর্তমান সময়ে অচল যেই সালাফিজম থেকে বের হয়ে এসে খোদ সৌদিআরবও লিবারিজমের পথে হাঁটছে তানজিমদের সেই সালাফিজমে পুরোদস্তুর মুগ্ধ আমার এক সতীর্থ বন্ধু বলে দিয়েছেন, তানজিম সরি‌ বলেছে, মনের বিরুদ্ধে এই‌ দুঃখপ্রকাশের কোনো মাহাত্ম্য নেই। এবং এটাই সত্যি। তানজিমরা তাদের কৃতকর্মের জন্য কখনোই শর্মিন্দা হয় না, হবে না। একাত্তরে যারা ধর্মের নাম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন ও পরিবার তছনছ করে দিয়েছে তারা কোনোদিন ক্ষমা চেয়েছে? চায়নি, চাইবেও না। ধর্মীয় উগ্রবাদ এমন এক ভাইরাস যেটা সংক্রমিত হলে মানুষ তার নিজেকে ছাড়া আর কাউকে চেনে না। তানজিম ধর্মের বয়ান যে ভাষায় দিচ্ছে সেসব তাঁর কথা নয়। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারদের কনক্রিট বচন। ওই সব বচনে পেশাগত ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং জুয়া সংশ্রবের জন্য তানজিমের মতো ধর্ম অন্তপ্রাণ মানুষদের ক্রিকেট খেলা‌ হারাম। মুশকিল হলো, ওই বচনগুলো কখনোই‌ তানজিম-মৃত্যুঞ্জয়রা তাদের টাইমলাইনে শেয়ার করে প্রচারণা চালায় না। তানজিমরা নিজেদের পুরুষতান্ত্রিকতাকে মহান করতে কখনোই স্বীকার করবে না যে, মা খাদিজা এবং আয়েশা ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

রিলিজিয়াস এক্সট্রিমিস্টদের এটাই বড় সমস্যা। তাদের যেটা লাভ, সেখানে ধর্মকথা চুপ থাকে। তারা পারে কেবল ঘুরেফিরে নারী, দেশাত্ববোধ ও ভিন্নধর্মীদের পেছনে লাগতে। এবং বাংলাদেশের চারাধারে যেন তানজিমদের জয়জয়কার দেখি। যে নারীর চাকরি ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ভাত জোটে না, তারাও নারীকে ঘরবন্দি রাখার ওয়াজ শোনে।
যে লোকটি হরদম সুদ ও ঘুষ খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তার মুখেও সোনার মদিনা। যে লোকটি পহেলা বৈশাখের ভাতা ও ছুটি উপভোগ করে সেই লোকটি‌ই ধর্মের দোহাই দিয়ে বাংলা নববর্ষের বিরোধিতা করে। লোভী সওদাগর নিজের বাংলোবাড়ি সম্প্রসারিত করতে বিধবার শেষসম্বল এক টুকরো জমি কেড়ে নিয়ে পরের মাসেই হজে গিয়ে সেল্ফি দেয়। সুন্নাহ ব্যবসার নামে মানুষের অনুভূতিকে পুঁজি করে হানি নাটসের মতো নানা অহেতুক পণ্য গছিয়ে দিয়ে মালকড়ি কামানোর ধান্ধা করে তানজিমদের মতো অনেকেই।

এমনতর সামষ্টিক হিপোক্রিসিটাই প্রচার করছে তানজিম-মৃত্যঞ্জয়রা। ধর্মটাকে এরা ইহুদির ফেসবুকে ব্র্যাকেটবন্দি করে সেই ইহুদি সমাজের নিন্দামন্দ করে ছওয়াব কামানোর প্রয়াস পায়। কার্যত যুগপৎ ধর্ম ও জিরাফে থাকা মানুষগুলো ধর্মটাকে আচার তথা প্রতিপালনের জায়গায় না রেখে জাস্ট শো অফ করাটাকেই ধ্যানজ্ঞান মানছে।

হিজাব বা নিকাব ছাড়া নারী পবিত্র হয় না, এটা কোথাও লেখা নেই। আমরা যাদের বংশধর সেই মা খালারা কালো অবগুণ্ঠন না পরেও দেশজ শালীন পোশাকে ধর্মাচার পালন করেছেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে মহত্তম মানবীয় গুণাবলী রপ্ত করেছেন। আর এখন মানুষ দিনরাত হরদম মুখে ধর্ম কপচায়, অবগুন্ঠিত থাকে; কাজের বেলায় চরমভাবে অধার্মিক, লোভী, শঠ ও আত্মস্বার্থনিমগ্ন। এমন অসদাচারের দেশে তানজিমরা সরল ধর্ম প্রচার করবে এমন আশা বাতুলতা। এহেন সমস্যার জন্য সত্যিকার দায়টা কার? পরিবারের, রাষ্ট্রের?

তানজিমদের ফ্যানাটিক হয়ে ওঠবার প্রথম ও প্রধানতম দায় রাজনীতির। দেশ যারা চালান তারা যদি সাদাসিধে সরল না হন একজন ক্রিকেটারের কাছে আমরা নিখাদ‌ সারল্য আশা করতে পারি না। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তারা এমন এক সংবিধান দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন যেখানে সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্র রক্ষা করবার কথা বলে হয়েছে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে রেখেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এটা সবাই বুঝলেও তানজিমরা এটাকে পাত্তা দেয় না বরং ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে অপপ্রচার চালায়। অপরদিকে ইসলামিজমের সাথে গণতন্ত্র পুরাই সাংঘর্ষিক। তাহলে ওই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে রাষ্ট্রধর্ম যায়?

ধর্ম মানুষ এনেছে মানুষেরই জন্য। মানুষ যদি সদার্থে ধার্মিক হয় রাষ্ট্রের জন্য আলাদা ধর্মমতের জরুরত নেই। এর কারণ কোনো দেশে বা পৃথিবীতে ধর্ম কেবলমাত্র একটা নয়। তাহলে রাষ্ট্রের ওপর কয়টা ধর্ম চাপাবেন?

সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা ধর্মই যদি আপনার সংবিধান হয়, তাহলে মুখে গণতন্ত্রের কথা আদৌ সাজবে? গণতন্ত্র বহাল রাখলে একজন ব্যক্তির মতামতকেও সম্মান জানাতে হয়। এখানে ধর্ম এখন আচারনিষ্ঠ নয়, দেখনদারি আর প্রদর্শনের প্রগলভতায় ভরা। একদিকে অগণন দুর্নীতি তার সাথে পাল্লা দিয়ে ধার্মিক সাজবার ডিভাইন কমেডি। সুতরাং বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় রেখেছি মিলিয়ে নেন।

শতাব্দী প্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের বড় দুঃখ হলো, পশ্চাৎপদ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর মন পেতে ক্রমাগতভাবে তার নিজেকে ধার্মিক প্রমাণ করতে হচ্ছে। দলটিকে দুই শতাধিক কামিল, হাজারখানেক ফাজিল মাদ্রাসা এবং সাড়ে ৫ শ’র অধিক মডেল মসজিদ গড়ে দিতে হয়েছে। যেসব মসজিদ থেকে ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো হবে। ফি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরি হবে। আওয়ামী লীগকে চরম নারীবিদ্বেষী ও মানব প্রগতিবিরোধী একটি দল হেফাজতকে তোষণ করতে হয়। যে গোষ্ঠিটি কিনা পোশাককর্মীদেরকে ঢালাওভাবে ব্যভিচারী‌ সাব্যস্ত করে এবং মেয়েদের জন্য মাত্র ক্লাস ফোর পর্যন্ত লেখাপড়া দাবি করে। এমন একটা দলের মন পেতে ক্রমাগতভাবে জায়নামাজ ও তাহাজ্জুদের বয়ান দিতে হয়।
হেমন্ত কাল থেকে শুরু হয়ে পুরো শীত-বসন্তকাল ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীরা সারাবাংলার মাঠ দখল করে রাখে। ৩২ মাইক বাজিয়ে নারীবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ, ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি বিষোদগার এবং দেশজ সংস্কৃতি বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। এইসব ধর্মীয় জলসা প্রমোট করে অসৎ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের এমপি‌ মন্ত্রীরাই।

তারপরও আওয়ামী লীগের ধর্মদোষ কাটে না। তানজিমরা যে মতাদর্শের অনুসারী তারা কোনোদিনই আওয়ামী লীগকে তাদের মনে স্থান দেবে না। মাঝখান দিয়ে কাজটা হলো কি আওয়ামী লীগ সেই তানজিমদের হাতকেই শক্তিশালী করে গেল।
ধর্মীয় শিক্ষায়তনে ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা এবং উপাসনালয়গুলোতে নারীপ্রগতির বিরোধিতাই শেখানো হয়। এটা জেনেবুঝেও আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষায় মন না দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে ধার্মিক প্রমাণ করতেই সমস্ত মেধা ও রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচা করছে। আমরা এসব বিষয়ে কথা বলছি, কারণ সামগ্রিক কল্যাণচিন্তায় ব্যয় না করে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের‌ প্রসারে আমাদের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। যেখানে মানুষ তার নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে দানবে রূপ নিচ্ছে। কেউ কাউকে মানছে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল মটোতে স্থির থেকে সততা, ঔদার্য ও গণতন্ত্রের চর্চা করা গেলে এভাবে নিজেদেরকে ধার্মিক প্রমাণ করবার নানামুখী ক্রিয়াকলাপের জরুরত পড়ত না।

আওয়ামী লীগ যদি অন্তত এমন একটা ইথিক্স ইশকুল খুলতো, যেখানে মুসলিমরা মওলানা আকরম খাঁ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সময়কার পরিচালক আবুল হাশিম, কোরআনের অনুবাদক আবদুল ওদুদ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কিংবা মওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো মহৎ মানুষের চিন্তাধারাটা রপ্ত করতে পারতো। সেখানকার স্টুডেন্টরা জানতো একজন মুসলিম মনীষী হয়েও বেগম রোকেয়া নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষায় কী ত্যাগ করেছেন, কতটা আলো জ্বালিয়ে গেছেন -আমরা বলতে পারতাম আওয়ামী লীগ একটা কাজ অন্তত মনের মতো করেছে।

অথচ যাদের জন্য আওয়ামী লীগ মনপ্রাণ দিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে তারা কেউই আওয়ামী লীগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দূরের কথা, ‘রা’ও কাটবে না! আর ভোট তো কাভি নেহি!

আমরা আমাদের সন্তানদেরকে সচেতনে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, কূপমন্ডুক, সাম্প্রদায়িক, নারীবিদ্বেষী ও দেশজ সংস্কৃতিবিরোধী বানিয়েছি। আমাদের সন্তানেরা মুসলিম মনন ও দর্শনের অগ্রনায়কদের সংগ্রামমুখর জীবনী জানে না। তারা আত্মস্থ করে তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল স্কলার ও তাদের শিষ্যদের ছবক।

কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের লেখা ‘মুসলিম মনন ও দর্শন অগ্রনায়কেরা’ নামে একটি গ্রন্থ আছে।
মধ্যযুগে মুসলমানদের মধ্যে যারা মুক্তচিন্তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, জীবৎকালে তাঁদের কেউ রাজরোষের শিকার হয়েছেন, কেউ রক্ষণশীলদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন, কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। দার্শনিক আল কিন্দি ও ইবনুল আরাবিকে কাফের ফতোয়া দেয়া হয়, শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তারকে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও নির্বাসন দণ্ড দেয়া হয়, ওমর খৈয়ামকে নাস্তিক সাব্যস্ত করে পুড়িয়ে দেয়া হয় তাঁর ঘর, ইবনে রুশদকে করা হয় অপমান অপদস্ত, কবি ফেরদৌসীর লাশ মুসলিম গোরস্তানে দাফন করতে দেয়া হয়নি, আল রাজিকে অন্ধ করে দেয়া হয়, মনসুর হাল্লাজ ও শিহাব উদ্দিন সোহরাওয়ার্দিকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।
যুগে যুগে যারাই ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকারীদের সমালোচনা মুখর থেকে শিল্প, বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শনের আধুনিকতম থিওরির কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে সরব থেকেছে তানজিম ও তাদের মেন্টরদের মতো ধর্মগুরুরা। যারা কোনো যুক্তি বা তর্কের ধার ধারে না। তাদের মতাদর্শই একমাত্র স্বতঃসিদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়ে বাকিদেরকে বাতিলের খাতায় রেখে দেয়। কতল করাকে ধর্মজ্ঞান করে।

অথচ আজকের বিশ্বায়নের যুগে একদেশদর্শীকতার কোনো স্থান নেই। সবাইকে আমলে নিয়েই নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে হয়। একলা একঘরে থাকবার নাম মানবীয় বিকৃতি। একান্ত ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক হীনস্বার্থে এইসব বিকৃতিকে যারা নার্সিং করছেন, পেলেপুষে তেলতেলে বানাচ্ছেন আমরা তাদের নিন্দা করি। আপনি রোপন করবেন মাকাল ফল, আশা করবেন রেডিশ আপেল -তা হবে না। তারপরও মানবীয় বোধ ও বিবেক এখনো অবশিষ্ট আছে বলেই তানজিমদের মতো একরোখাদের প্রশ্নের সম্মুখীন করা যায়। তানজিমরাই শেষ কথা নয়।

এই দেশটা যাদের কাছে বর্গা যাচ্ছে তাদের কথাই এখন আমাদের মান্যতা দিয়ে যেতে হবে? বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমান এই দেশেরই মাটির সন্তান। কারো কলকাঠিতে নড়ে তাদের এক্সট্রিম মতাদর্শ এই ভূমিতে জিন্দা থাকছে এমনটা নয় কেবল, হয়ত রোদজলে পরিপুষ্টই হচ্ছে।

একজন স্পোর্টসম্যান অতি অবশ্যই বিশ্বমানুষ। বিশ্বসমাজই তার পরিবার। সেই পরিবারে বসত করে ব্যক্তিগত ধর্মাচার খুব চলে, কিন্তু সামষ্টিক ধর্মীয় গোঁড়ামি একদমই চলে না। এটা যদি তানজিম গংরা অনুধাবন করেন, বিশ্বসমাজে মাথার মনি হয়ে থাকবেন। অন্যথায় হারিয়ে যাবেন কালের গর্ভে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের তথা আইসিসি’র বৈষম্যবিরোধী নীতিমালায় বলা আছে, ‘এখানে স্পষ্টতই বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। বিশ্বের অন্যতম কঠিন খেলার এই নীতি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, বংশ, সংস্কৃতি, জাতিগত উৎস, জাতীয়তা, সেক্স এবং জেন্ডার, যৌন অভিযোজন, অক্ষমতা, বৈবাহিক অবস্থা এবং মাতৃত্বের অবস্থা নির্বিশেষে সকল স্তরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রচার এবং উৎসাহিত করার জন্য আইসিসি এবং এর সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে। সেই সাথে এটা নিশ্চিত করে যে, খেলাধুলায় কোনো বৈষম্যের স্থান নেই।’

এমন আইনের অধীনে থাকা আমাদের ক্রিকেটাররা কর্মজীবী নারীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন, ভিন্নধর্মীদের অসম্মানজনক কথা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও দিবসকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার প্রয়াস পান! আইসিসির অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো ম্যাচে নারীর অবস্থান অবনমিত হয় এমন একটি‌ টু শব্দও উচ্চারণ করতে পারবেন না। নিমিষেই আজীবনের জন্য সাসপেনশনে যাবেন। তানজিমদের প্রিয় বিসিবির কোড অব কন্ডাক্টে যদি কিন্তু তবে দিয়ে ভরা থাকতে পারে, কিন্তু সর্বমানুষের আইসিসির কথা ওই একটাই, will not be tolerated.

লেখক: সাংবাদিক
৫ আশ্বিন ১৪৩০ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.