সুপ্রীতি ধর:
উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ এর শুভেচ্ছা।
আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বব্যাপী নানা প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত ক্যাম্পেইন থিম #EmbraceEquity বলছে, Equity isn’t just a nice-to-have, it’s a must-have. A focus on gender equity needs to be part of every society’s DNA. And it’s critical to understand the difference between equity and equality.
এর বাংলাটা এভাবে ভেঙে বলা যায় যে ন্যায্যতা বা প্রাপ্যতা আমাকে কেউ দয়া করে দেবে না, এটা আমার অধিকার। প্রতিটা সমাজের মূল কাঠামোকেও জেন্ডার ন্যায্যতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এবং এই ন্যায্যতা আর সাম্যতার ভিতরকার পার্থক্যটুকুও আমাদের হৃদয়ঙ্গম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন এই বাক্যগুলোকেই যদি বিশ্লেষণ করি তবে কী দেখবো? দেখবো যে জন্মের পর থেকে মেয়েশিশুরা কোনরকম বৈষম্যের শিকার হয়ে বড় হয়ে উঠবে না। ছেলেশিশু আর মেয়েশিশুতেই কোনরকম বৈষম্য থাকবে না, না তাদের প্রতিপালনে, না অধিকারে। সমানভাবে বড় হয়ে উঠবে। সম্পত্তিতে পাবে সমান সমান অধিকার। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার এবং অভিগম্যতা।
এ বছরে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য অবশ্য ভিন্ন। “DigitALL: Innovation and technology for gender equality,” highlights the role of innovative technology in promoting gender equality and meeting the health and developmental needs of women and girls। অর্থাৎ লিঙ্গ সমতার উন্নয়ন বা প্রচার এবং নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নমূলক চাহিদা মেটাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ভূমিকা।
এ দুটোকে উপজীব্য করেই একেকটি দেশ পালন করছে বিশেষ এই দিনটি। বাংলাদেশে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন : জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’। ডিজিটাল বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে নারীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ করাই মূল উদ্দেশ্য। যদিও কথা থেকেই যায় যে প্রতিদিন শত শত সহিংসতা আর ঘরে-বাইরে হাজারও বৈষম্যের শিকার হয়ে নারীদের যে জীবন যাপন করতে হচ্ছে সেখানে প্রযুক্তির সাথে নারীর অন্তর্ভুক্তি কথাটা অত্যুক্তি শোনাচ্ছে কিনা! কিন্তু এটাও তো স্বীকার করতেই হবে যে প্রযুক্তির কল্যাণের সাথে সাথে যে নারীর জীবনেও আমূল পরিবর্তন আসছে। ইতিবাচক যেমন আসছে, নেতিবাচকতাও আসছে। প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করাও এই অন্তর্ভুক্তির একটা আবশ্যিক কারণ হতে পারে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির এ বছর প্রতিপাদ্য করেছে, ‘ডিজিটাল বিশ্ব হোক সবার : নারীর অধিকার সুরক্ষায় ও সহিংসতা মোকাবিলায় চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন বৈষম্যহীন সৃজনশীল প্রযুক্তি’। নারীপক্ষসহ ৫২টি সংগঠন দিবসটি পালন করবে ‘সন্তানের ওপর মায়ের অভিভাবকত্বের অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে।
এদিকে ইরানের সাম্প্রতিক সময়ের নারী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। ইউরোপের বিভিন্ন শহরসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে ইরান ও আফগানিস্তানে নারীদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে। ইরানে আন্দোলন শুরুর পর বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠে ‘ফেমিনিস্টস ফর জিনা’ নামের একটি নেটওয়ার্ক, যারা সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফেমিনিস্ট গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আন্দোলনটিকে একটি সার্বজনিন আন্দোলনে পরিণত করেছে। তারা শ্লোগান হিসেবে বেছে নিয়েছে –
Liberation is Our Right!
Jina, Symbol of Our Fight!
#JinJiyanAzadi: A Feminist Revolution in the making, Women, Life, Freedom।
একজন ২২ বছরের কুর্দি তরুণীর মৃত্যু কীভাবে স্ফুলিঙ্গের মতোন আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইরান দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে একটা ন্যায়ের পিছনে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়, কীভাবে দাবি আদায়ে মাঠে নামতে হয়।
বিশ্বের সবখানে সব লড়াকু নারীর প্রতি রইলো সহমর্মিতা এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। আন্দোলনগুলো সার্বজনিন হোক, নারী-পুরুষের উভয়ের আন্দোলন হয়ে উঠুক নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান।