ফারদিন ফেরদৌস:
দ্বিতীয় নম্বর বেবি দুনিয়াতে চলে এসেছে।
হাসছে, খেলছে, দৌড়াচ্ছে। স্কুলিংও শুরু হয়ে গেছে। এখন এসে বেবিদের বাবা কিনা বলছেন, বাচ্চার বয়স দুই বছর বা চার বছর হয়ে গেল, এটা সবাইকে জানানো সম্ভব হয়নি। ঘটা করে জানানোর ইচ্ছে ছিল, কিন্তু শিশুদের মাতৃকূল নাকি সেটা করতে দেয়নি।
তাই ওইসব মায়েদের সাথে বউ বউ সম্পর্ক রাখা সম্ভব হয়নি! কী বিস্ময়কর পিতৃতান্ত্রিক আস্ফালন! সব দায় মায়েদের, শাকিব খান ধোয়া তুলসী পাতা!
লোকটা ঢাকাইয়া মুভির নায়ক। তাকে নাকি মানুষজন গাঁটের পয়সা খরচা করে হলে গিয়ে দেখে। এই লোকটা আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে গণসংবর্ধনা পায়! জাতি হিসেবে আমাদের সামগ্রিক চরিত্রটাই তাহলে এমন হয়ে গেছে যে, দেশজ মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় চেতনা, সংবিধান, সিডো সনদ, জেনেভা কনভেনশন, বৈশ্বিক সভ্যতা ও নৈতিকতাকে আমরা ভ্রুকুটি করতে পারি?
আমরা নারীর সমানাধিকারের কথা বলি।
সাম্যবাদী কবিতা আবৃত্তি করি।
মা’কে বলি তোমার পায়ের নিচে আমাদের স্বর্গ।
অথচ দোষ ধরবার বেলায় মা ও মায়ার জাত নারীকে সর্বাগ্রে রাখি।
দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো, সত্যিকারের মানুষ যদি আমরা হতাম; তবে লোকটার হীন অযাচারের প্রতিবাদ করতাম, বিচার চাইতাম।
গণমাধ্যমকে রং হেডেড লোকটা যা বলে চলেছেন -এক কথায় তা নেয়া যায় না! ডেইলি স্টারকে লোকটা বলেছেন, ‘মানুষ কি দেখে বোঝে না, আমাদের দুই জনের মধ্যে এখন কোনো সম্পর্ক নেই! তাদের তো এমনিতেই বোঝা উচিত এই দূরত্বের কথা। ৯ মাস আগে সে (বুবলি) আমেরিকা থেকে আসার পর তার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই আমার। এর মানেটা কী জনে জনে সবাইকে গিয়ে বুঝিয়ে আসতে হবে?
একসময় মানুষ আমাদের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে এমনিতেই জেনে যাবে। এটাতো এমনিতেই মানুষের বোঝা উচিত এই দূরত্বের কথা।’
লোকটার কত বড় ধৃষ্টতা যে, সারা দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, তার ব্যাপারগুলো মানুষের এমনিতেই জেনে যাওয়া উচিত! জনে জনে গিয়ে বুঝাতে সে পারবে না! কেন রে ভাই, আপনি পুরোদস্তুর ভিলেন হয়ে সাধারণের কাছে নায়ক সেজে থাকবেন আবার সেই সাধারণকেই বলবেন আপনাকে বুঝে নিতে এটা হয় না মিস্টার। কোন মানবীয় গুণপনায় আপনি ভরপুর যে, আপনাকে অন্ধের মতো ভালোবেসে যেতে হবে?
লোকটা গণমাধ্যমে আরও বলেছেন, ‘বুবলির সন্তানের কথা কি আমি তাকে আড়াল করে রাখতে বলেছিলাম? নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তিনি সেটা প্রকাশ করেননি। আমি তো তার মুখ বন্ধ রাখতে বলিনি। মাঝে নিজে অনেক কিছু করেছে সে। সব খবরই তো আসে আমার কানে। থাক সেইসব কথা।
আসলে সন্তানের কথা ভেবে অনেক কিছু বলা যায় না। আমার সন্তান শেহজাদ খান বীর বড় হচ্ছে। তার কথা ভেবে অনেক কিছু বলতে পারি না। আগামীতে আমার সন্তানের খারাপ কিছু হোক, সেটাও চাই না। আমার প্রিয় ২ সন্তান আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীর। তাদের নিয়েই আগামীর পথে পাড়ি দিতে চাই।’
মিস্টার আপনি দুই সন্তানকে নিয়ে আগামীর পথ পাড়ি দেবেন ভালো কথা। সন্তানেরা বড় হয়ে যখন জিজ্ঞেস করবে হে পিতঃ আমাদের মায়েদের সাথে এমন লুকোচুরি খেলা খেলেছেন কেন? জবাব দিতে পারবেন?
মিস্টার খান, নারীর আত্মসম্মান ও মর্যাদা বিনষ্ট করবার যে ক্রণিক রোগ আপনাকে পেয়ে বসেছে তাতে আমরা ধারণা করতে পারি, জয় ও বীর আরও সিরিয়াল সহোদর পেতে চলেছে। কিন্তু তারা কোনো সুখের সংসার পাবে না -যেখানে বাবা ও মায়ের অমৃত বন্ধনে এই পৃথিবীতে স্বর্গ রচিত হয়।
সিরিয়ালি নারী ও শিশুদের জীবনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিচ্ছেদের নরক নামিয়ে দেয়া মিস্টার খান আমরা আপনার এমনতর বাজে অ্যাটিচ্যুড ও ব্যাড ইনটেনশনের নিন্দা করি। মন ও মননে যতদিন না আপনি সুস্থ হচ্ছেন ততদিন নায়ক পরিচয় বেঁচে খাবেন না প্লিজ। শিল্পী হওয়ার আগে মানুষ হয়ে উঠুন। সমাজের আইকন হওয়ার আগে নিজের বেপরোয়া লালসার পায়ে এখনি বেড়ি পরান। চূড়ান্তভাবে নিমজ্জনে পতিত হওয়ার আগে উদগ্র বাসনার টুটি চেপে ধরেন।
আমাদের নারীদেরও ভুলের বৃত্ত ভেঙ্গে নিজেদের স্বাধীনসত্তাকে সম্মান করা শিখতে হবে। বারবার ঠকবার চক্রে পড়া নারীদের উচিত শাকিব খানদের মতো লোভী ও মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকদের এড়িয়ে চলা।
শিল্পী সমিতি, ডিরেক্টর্স এসোসিয়েশন, এফডিসি এবং গণমাধ্যম সবার উচিত লোকটাকে বয়কট করা। সর্বোপরি দেশের শৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লোকটার ব্যাপারে তদন্ত করা এবং আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তা নাহলে দেশের আপামর পুরুষকূল ভেবে বসতে পারে, শাকিব খানের অপকর্মই বুঝি চলমান শুদ্ধ আইন। তা যদি হয়, সেটা হবে আমাদের নারী প্রগতির জন্য বিরাট অন্তরায় এবং প্রকান্তরে নারী ও পুরুষের যূথবদ্ধতায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা। আমরা সমস্বরে এমন বিপজ্জনক বাধার বিষমুক্ত সমাজের কথাই বলতে চাই।
লেখক: সাংবাদিক
২৭ অক্টোবর ২০২২