নারীর অবস্থান এখনও এতো নাজুক!

এলমা খন্দকার এষা:

বিষয়টা এমন প্রথমত মনে হয়েছিল এ বিষয় নিয়ে কথা বলা রুচিসম্মত হবে কি? পরবর্তীতে দেখলাম ভাইরাল থেকে ভাইরাস ছড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায় এবং সমাজেও। তখন মনে হয়েছে না আমাদেরও বলা উচিত, আমাদের বলার আছে। বলছি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলা সিনেমার এক নায়ক ও দুই নায়িকার কথা।

ভাল লাগার, ভালোবাসা, প্রণয়, পরিণয়, বিচ্ছেদ, সম্পর্কের তিক্ততা, আবার নতুন করে জীবন সাজানো, এগুলো আমাদের জীবনেরই অংশ, কিন্তু একই ঘটনা একবার হলে হয়তো এতো কথা হতো না, তবে বারবার একই ঘটনা আসলে সমাজকে কী বার্তা দিচ্ছে? তুমি ব্যভিচার করে বেড়াও, তোমার কোন দোষ নেই?

এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের টিপিকাল ঘরের বউ থেকে শুরু করে স্ব স্ব স্থানে আত্মনির্ভরশীল নারীরা এখনো পুরুষের রক্ষণশীল মনোভাবের বিরুদ্ধে যেতে পারছে না। রক্ষণশীলতা পুরুষের এমন একটা বৈশিষ্ট্য যা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত পুরুষের ভেতরও আরও ভয়াবহ ভাবে বিদ্যমান।

আমার মনের আক্ষেপ ও লেখার মূল বিষয় যেটা তা হলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতের শীর্ষ দুই নায়িকা হতে পারতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর রোল মডেল। উনারা শিক্ষিত আত্মনির্ভরশীল নারী, কিন্তু উনারা কেনই বা চুরি করে বিয়ে করে লুকিয়ে থাকবেন? কেনই বা সেই পুরুষের কাছে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের ভিক্ষা চাইবেন তা মোটেও আমার বোধগম্য নয়।
উনারা পারতেন প্রেস ডেকেই না হয় সরাসরি বলতে এই বাচ্চার বাবা অমুক। কিন্তু আমি বাচ্চার মা, আমি স্বনির্ভর একজন নারী, আমি যথেষ্ট আমার বাচ্চার জন্য। যদি বাচ্চার বাবা স্বীকৃতি না দেয় ডিএনএ টেস্ট করার ব্যবস্থা ছিল। আমার সন্দেহ উনারা কি আসলে ভালবেসে বিয়ে করেছে? সন্তান জন্ম দিয়েছে? নাকি অমুকের বউ হবো এবং বাচ্চা নিয়ে তাকে আটকে ফেলবো ভেবে পরিকল্পনা করেছেন?

নারী শোনো, বাচ্চা দিয়ে বাচ্চার বাবাকে আটকানো গেলেও মনমতো করে স্বামীকে পাওয়া যায় না। যার মন উরু উরু সে উড়বেই আড়ালে অথবা প্রকাশ্যে।

আর নারীর আত্মসম্মানবোধটাও রপ্ত করা জরুরি নিজের কাছে। আপনি চাকরি করলেন, স্বনির্ভর হলেন, অথচ আপনার স্বামীর অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করলেন, বাচ্চার খরচের জন্য ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে নত হলেন, তাহলে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন হে নারী?

যে পুরুষের প্ররোচনায় অথবা তারই কথায় রাজি হয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় লুকিয়ে রেখেছেন সেই পুরুষ যখন আপনার সাথে চিট করলো তখন কি তার প্রতি আপনার সম্মান অটুট আছে? আর যেখানে সম্মান নেই সেখানে কিসের সম্পর্ক কিসের ভালোবাসা?

আমার প্রশ্ন শাকিব খানের কাছে না, কারণ শাকিবের মতো পুরুষ সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে, আর এরা মানসিকভাবে অসুস্থ, এদের প্রতিকার আমার জানা নেই, একটা স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপন কখনও এমন হতে পারে না।

আমি একদম তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে যাবো, কারণ উনারা তিনজনই জানেন কীভাবে প্রেম, বিচ্ছেদ, আবার প্রেম, বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন অপু,বুবলির কাছে, উনারা কেন বিয়ে লুকিয়ে রাখেন? বা রাখতে রাজি হন? বাচ্চা লুকিয়ে রাখেন কেন? আর যখন বাচ্চার বাবা নড়বড়ে হয়ে যায় তখন কেন এভাবে সামনে আসেন? আর যদি আসেনই তাহলে প্রশাসনের সহায়তা কেন নেন না? তাহলে কি বিয়ের লিগাল ডকুমেন্টস নেই? আর বাচ্চার বাবার স্বীকৃতিই যদি উনাদের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ তাহলে সবকিছু চুরি করে কেন করেন?

উনাদের দুজনের জন্য যুদ্ধ করে জীবনযাপন করা অসংখ্য নারী সমাজে এগিয়েও পিছিয়ে গেছে। উনারা আবার বুঝিয়ে দিলেন নারীর আত্মসম্মানবোধ এখনও অনেক কম। নারীরা ফিনানশিয়ালি শক্ত হয়েও পুরুষের উপর নির্ভরশীল। নারীর জায়গা এখনও অনেক নাজুক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.