প্রাকৃতিক গর্ভনাশকের ইতিহাস: ২য় পর্ব

নুসরাত জাহান:

নারীর জ্ঞানপ্রবাহে নাশকতা

ডাইনি শিকারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন সে সময়কার ধাত্রীরা। কিন্তু কেনো?
এ প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেয়া কিছুটা শক্ত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা, মানসিক জটিলতা, নারীর শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, ধর্মীয় বিধিনিষেধের কঠোর প্রয়োগ- এরকম সবকিছুর সাথেই এর যোগসূত্র ছিলো হয়তো। তবে ধাত্রীবিদ্যা এবং ডাকিনীবিদ্যার একটা সরলরৈখিক যোগাযোগ ছিলো নারীর যৌনতার সাথে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে- ডাকিনীবিদ্যার অভিযোগে পুড়িয়ে মারা নারীদের অনেকেই তৎকালীন অস্বীকৃত বিভিন্ন যৌন আচার, তথা- সমকামীতা, পরপুরুষগমন এসবের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেও পুড়িয়ে মারা নারীদের ভিতরে সবথেকে বেশি ছিলেন তারা, যারা ধাত্রীবিদ্যার চর্চা করতেন। আনে হাচিনসন নামে ইংল্যান্ডের এক ধাত্রীর বিচার প্রক্রিয়াটি ছিল ডাইনী শিকারের অন্যতম কুখ্যাত এক উদাহরণ। ম্যাসাচুসেটস এর সালেম শহরে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার অভিযোগে প্রায় ২০০ জন নারীর বিচার হয়েছিল, যেখানে ঊনিশ জনের ফাঁসি, ও এগার জনের যাবজ্জীবন হয়। অভিযুক্ত ২০০ জন নারীর মধ্যে বিশ শতাংশই কেবল ধাত্রী হবার অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন।

কিন্তু তারপরও প্রশ্ন জাগে, কেনো ধাত্রীরাই?

সময়ের দিকে একটু তাকানো যাক। কাকতালীয়ভাবে ডাইনি নিধন ঠিক ওই সময়েই ঘটে, যে সময় প্রসার ঘটছিল প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিদ্যার। গড়ে উঠছিল একাডেমিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের রণসাজে সজ্জিত চিকিৎসকদের বাজার। বাড়ছিলো তাদের বাজারদর। ঠিক একই সময়ে ধাত্রীবিদ্যার গায়ে গ্রাম্য কুসংস্কার, অযৌক্তিক, অপবিজ্ঞান এসব তকমা লাগানোও চলছিল সমানতালে। ভেষজ ঔষধি নিয়ে ধাত্রীদের জ্ঞানচর্চা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাদ দেওয়া হতে থাকে পুস্তকীয় চিকিৎসাবিদ্যার নির্দেশনা থেকে। ডাক্তারি পেশা যত রমরমা হলো, ততই বন্ধ হতে থাকলো নারীদের মুখ। পবিত্র চার্চের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাজে পুরুষ চিকিৎসকদের অবস্থান আরও বেশি পাকাপোক্ত হলো। এক পবিত্র বাণীতে বলা হলো – “যদি কোনো নারী কোনো চিকিৎসকের (অবশ্যই পুরুষ চিকিৎসকের) পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগ থেকে আরোগ্য লাভের সাহস করে, তাহলে সে অবশ্যই একজন ডাইনী এবং তাকে হত্যা করা ফরজে কেফায়া।”
ধাত্রীরা তাই থেমে গেলেন। থামিয়ে দিলেন তাদের নিজস্ব বিদ্যাচর্চা এবং ব্যবস্থাপত্র প্রদান।
হাজার হাজার বছর ধরে প্রবহমান গর্ভনাশকের নারীপ্রধান জ্ঞানস্রোত থামিয়ে দেয়ার জন্য ডাইনী নিধন ছিলো মোক্ষম এক হাতিয়ার।

জ্ঞানের ধারা তো রুদ্ধ করা গেলো, কিন্তু গর্ভনাশকের চাহিদা কমানো গেলো না। আইনের অত্যাচার এড়াতে, যারা চোরাপথে ওইসব ভেষজের যোগান দিতো, তারা এমন একটা ভাষা ব্যবহার করতে লাগলো যাতে ভেষজের আসল গুণাগুণ ও উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ে যায়। একারণেই সুরিনামের দাস নারীরা যখন সহজ ভাষায় তাদের ভেষজ জ্ঞানের বর্ণনা করেন তখন আশ্চর্য লাগে। ফলিত উদ্ভিদবিদ্যায় যতদিনে এই বিষয়ের চর্চা শুরু হয়েছে ততদিনে গর্ভনাশকের আদি জ্ঞান গোপনীয়তার কারাগারে আবদ্ধ। লাতিন ভাষায় নামেমাত্র কিছু ভেষজ গর্ভনাশকের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেসবও সতেরো এবং আঠারো শতকের গুটিকয়েক স্ত্রীরোগবিদ্যার বইতে লিপিবদ্ধ “ঋতুস্রাব আরম্ভকারী” হিসেবে।

১৬৭১ সালের এক বিরল লিপি জানাচ্ছে, ধাত্রীদের জন্য একটা নির্দেশনামূলক বই প্রকাশ করেন জেন শার্প নামের এক ভদ্রমহিলা। যার বিষয়বস্তু ছিল- “নারীরা কীভাবে ধাত্রীদের অদক্ষতার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন”। এই নির্দেশিকায় শার্প বলছেন, ‘এলকাইন স্নেকরুট এর মত ভেষজ গুলো গর্ভস্রাব বা মিসক্যারেজ ঘটাতে সক্ষম’। বইয়ের চতুর্থ সংস্করণ বের হতে হতে গর্ভস্রাব গুণসম্পন্ন ভেষজগুলো বাদ পড়ে যায় নির্দেশিকা থেকে। তবে অক্ষত থেকে যায় ঋতুস্রাব আরম্ভকারী ভেষজসমূহ (আর্টেমিসিয়া, ট্যানসি, পেনিরয়াল, এবং দারচিনি জলের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার একপ্রকার পুদিনা)। একই সাথে শার্প একটি জরুরি সাবধানতাও উল্লেখ করেন বইটিতে – “পূর্ণ গর্ভবতী নারীর ওপর এসব প্রয়োগ করলে তা হত্যার সমতূল্য বলে গণ্য হবে”। ঐতিহাসিকরা এমন সাবধান বাণীকে আমাদের সময়কার ওষুধপত্রের গায়ে লেখা বহুল পরিচিত বিজ্ঞপ্তির সাথে তুলনা করেছেন- ‘গর্ভাবস্থায় সেবন বর্জনীয়’।

আঠারো শতক থেকেই গর্ভনাশক দ্রব্য সেবন এবং বিক্রয় ক্রমশ অবৈধ হতে শুরু করে। তবে গর্ভনাশক দ্রব্যের উপাদানগুলো চিহ্নিত করা কঠিন ছিলো। ঔষধির গায়ে এদের নামধাম লিপিবদ্ধ থাকতো গুপ্ত রীতিতে। এভাবেই চলতে থাকে উনিশ শতক পর্যন্ত। ভিক্টোরিয়ান নারীরা তাদের মেয়েলী সমস্যা নিয়ে সংবাদপত্র খুললেই অজস্র বড়ি, চূর্ণ ইত্যাদির বিজ্ঞাপন পেয়ে যেতেন। পছন্দমতো একটা খেলেই হলো। তবে এদের বেশিরভাগেরই গায়ে লেখা থাকতো- “গর্ভাবস্থায় সেবন নিষেধ”।

এসব বড়ি এবং চূর্ণ সমূহের অনেকগুলোই ছিলো অনিরাপদ, কতগুলো তো বিষাক্তও। গর্ভনাশকগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষিত ছিলো না। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটা ছিলো অদক্ষ লোকের হাতে গর্ভপাতের অস্ত্রোপচার করার মতোই বিপজ্জনক। ভিপিএন দিয়ে ওষুধপত্র যোগাড় করতে হলে যা হয়!

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে বলা হচ্ছে, ১৮৯৩-১৯০৫ বছরগুলোতে ডায়চেলন নামক একটি ওষুধ সেবনে শত শত নারী লেড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসতেন। রোজকার ঘটনা ছিল এটা। এক পর্যায়ে এমন অবস্থা দাঁড়ায়, যে নটিংহ্যাম এবং শেফিল্ড হাসপাতালে আসা নারী রোগীদের দাঁতের মাড়ি পরীক্ষা করা হাসপাতালগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বিষয়ে জার্নাল এবং ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন উভয়েরই বক্তব্য ছিলো, “গর্ভনাশক দ্রব্যের কোনো সুব্যবস্থা করা বা তাদেরকে আরও নিরাপদ ও সহজলভ্য করে তোলার চেষ্টা করা যাবে না”। বরং তারা যোগ দিলো লন্ডন কাউন্সিল অফ পাবলিক মোরালিটির সাথে। পয়দা করলো এমন বিল যা গর্ভনাশক, গর্ভপাত বা গর্ভনিরোধের বিষয়টাকেই অনৈতিক বানিয়ে দেয়। এবং এ সংক্রান্ত সকল বিজ্ঞাপন, ঔষধি, লেখাপত্র, তাদের প্রচার ও বিক্রয়কে অবৈধ ঘোষণা করে। ১৯০৬ সালে সফলভাবে পাশ হয় গর্ভনিরোধক ব্যাঙ্গকারী এই বিল। গর্ভনাশকের সহজলভ্যতা ও বিক্রয় থামিয়ে দেয়ার এই ব্রহ্মাস্ত্রকে আনন্দের সাথে উদযাপন করে ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন। বাস্তবে এই আইন আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয় গর্ভনাশক দ্রব্যের ব্যবসাকে। যা এসব জরুরী ঔষধি দ্রব্যকে আরো বিপজ্জনক ও অনিরাপদ করে তোলে।

কিন্তু ইংল্যান্ডের এসকল আইনের সফলতার পেছনে কারণ ছিলো। কাছাকাছি সময়ে আটলান্টিকের ওপারেও একইধরনের একটি ঘটনা চলমান ছিল। ১৮৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাস হওয়া ‘কমস্টক ল’ নামক এক আইনে যেকোনো ধরনের অশ্লীলতার সাথে যোগসাজশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই অশ্লীলতার সংজ্ঞায়ন ও চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রটি ছিলো আশ্চর্যজনকভাবে বিস্তৃত এবং অনির্দিষ্ট। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো – অশালীন বিষয়বস্তু ছাপানো কাগজপত্র, জন্মবিরতিকরণ ও গর্ভনাশক সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম এবং ব্যক্তিগত অশালীন পত্রবিনিময়কে। যৌনসঙ্গমকে কেবলমাত্র বংশবৃদ্ধির কাজ হিসেবেই বেঁধে রাখার উনিশ শতকের যে প্রচেষ্টা তাকে জোরদার করতে কমস্টক আইন বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে। এ্যান্থনি কমস্টকের নামে নামাঙ্কিত এই আইন সরাসরি আক্রমণ করে এমন লোকদের যারা গর্ভনাশক দ্রব্য বিক্রি করতো। ভাষার মধ্যেও যেসব শব্দ অশালীন বলে গণ্য হলো, তাদেরকে পুরোপুরি কমস্টকের হাতে তুলে দেয়া হলো। অত্যন্ত উৎসাহের সাথে কমস্টক শিকার অভিযানে নামলেন দীক্ষিত নারীদের বিরুদ্ধে। তার হাতে আটক হলেন গর্ভপাত বিশেষজ্ঞ মাদাম রেসতাল। আটক হলেন শিকাগোর চিকিৎসক আইডা লিনকন, যিনি ১৮৯৮ সালে ডাকযোগে পাতা এক চিঠির ফাঁদে পা দিয়ে গর্ভনাশক দ্রব্য পাঠাতে রাজি হয়েছিলেন। যেটুকু নিরাপদ গর্ভনাশকের বেচা বিক্রি তখনও অবশিষ্ট ছিলো তাও একা হাতে বন্ধ করলো এ্যান্থনি কমস্টক।

এখানে হাস্যকর ব্যাপারটা হলো, কমস্টকের গোঁড়ামির এই জুলুম চলাকালীনও গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া টের পাওয়ার আগে পর্যন্ত গর্ভনাশকের ব্যবহার আইনত বৈধ ছিলো।

কমস্টক যখন গর্ভনাশকের সাথে জড়িতদের শিকারে মত্ত, রাষ্ট্র তখন পুনরায় গবেষণা শুরু করে গর্ভে প্রাণের আবির্ভাবের সঠিক সময় নিয়ে। এবং তা মূলত কমস্টক আইনকে আরও বেশি যৌক্তিকতা প্রদানের উদ্দেশ্যই। যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে শহরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারক বললেন যে, “যেসব দেশ পুরনো বর্বর প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের জন্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত বিচারব্যবস্থা তৈরি করেছে, তারা সবাই “বাচ্চার নড়াচড়া অনুভবের পর গর্ভসঞ্চার হয়” – এই প্রাচীন ধারণাকে ত্যাগ করেছে “। বাকী সকল রাজ্যও এতে বিনাবাক্যে সহমত ভাই জানালো। এবং গর্ভপাত ও গর্ভনাশক সংক্রান্ত সকল ঔষধি ও তাদের বিনিময় অবৈধ বলে মেনে নিলো।
এতেও ক্ষান্ত হয় নি তারা। ১৯১৯ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক ৫৭ টি উপাদানের ওপর আইনী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে ছিলো ব্লেয়ার এবং মাদাম লে রয়ের গর্ভ নিরোধক ওষুধ সমূহও।

নারীরা তাদের প্রজনন স্বাধীনতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেললো বিংশ শতকের শুরুতেই। যে স্বাধীনতা তারা কমবেশি উপভোগ করেছে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়েও।

আজ গর্ভনাশক দ্রব্য বিপদজনক হওয়ার যে ধারণা তার পেছনের মূল কারণই হলো, সুদীর্ঘকাল ধরে এসব দ্রব্যের জ্ঞান, চর্চা ও গবেষণাকে দমিয়ে রাখা। তাদেরকে সহজলভ্য করে তুলতে হলে, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পূর্বেই নিরাপদ ও সহজ গর্ভনাশের যে চল ছিলো তা আবার ফিরিয়ে আনতে হলে, প্রয়োজন একটা তীব্র এবং জোরদার আন্দোলন। সবার আগে প্রয়োজন জোরগলায় স্বীকার করা ও মেনে নেয়া যে – “একজন নারী তার নিজের প্রজননতন্ত্র ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য, বিশ্বস্ত এবং বাস্তব জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন”।

অথচ ইতিহাসের নোংরা চক্র এখনো পুনরাবৃত্ত হতে দেখা যায়। নারীরা চায় সহজলভ্য গর্ভপাত। আর আইন চায় নারীর রক্ষাকর্তা হতে। ফলে যা ঘটে তা হলো, নারীরা নিজেদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে নিজের সুস্থতাকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়। এই দুষ্ট চক্রে, একজন নারী হলেন নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাওয়া যুক্তি-বুদ্ধি হীন হঠকারী ব্যাক্তি। আর আইন সবসময় যৌক্তিক, আইন সর্বদাই প্রবলভাবে সঠিক। ১৯৯৩ সালে যখন ব্রাজিলের অসংখ্য নারী আলসারের ওষুধ খেয়ে অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের শিকার হয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হলো, আইন তার যৌক্তিকতা প্রয়োগ করে একজন গর্ভবতী নারীর জন্য কোনো রকমের ওষুধ ব্যবহার করাটাই কঠিন বানিয়ে ফেললো। আইন এতটাই মহানভাবে যৌক্তিক। অবশ্য আইন তো “জান বাঁচানো ফরজ”- এই নীতি মেনে কাজ করছিলো! এছাড়াও আইন সে দেশের সীমান্তে কোনোরকমের গর্ভনাশক ঔষধি প্রবেশের বিরুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধ ঘোষণা করলো। আইনের মহান যুক্তি হলো – মিসোপ্রোসটলের বিরুদ্ধে আধুনিক সেনাবাহিনীর শক্তিশালী সমরাস্ত্র প্রয়োগ করা উচিত। এমনই বিপজ্জনক শত্রু এই ওষুধ।

এতোকিছুর মধ্যেও প্রাণ, গর্ভসঞ্চার ও গর্ভনাশকের সংজ্ঞাগুলো নতুন করে লেখার অবিরাম চেষ্টাটা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ অরক্ষিত সঙ্গমের পর অস্ত্রোপচার ছাড়া জরুরী গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা (Plan B, Ella, IUD ইত্যাদি) নিতে হলে, বা নেওয়াটা বৈধ করতে হলে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ডিম্বাণুর নিষেকের আণুবীক্ষণিক অবস্থায়ই গর্ভধারণের সূচনা হয় এই ধারণা গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, গর্ভনাশকের বা গর্ভনিরোধী দ্রব্যের সংজ্ঞাগুলো পূনঃরায় ভালোভাবে যাচাই ও সংশোধন করা। তা ছাড়া জরুরি বা দীর্ঘমেয়াদী কোনো ধরনের গর্ভনাশক বা গর্ভ বিরতিকরণ প্রক্রিয়ার বৈধ ব্যবহার সম্ভব না। উল্টো সম্ভব হলো যুক্তরাষ্ট্রের হবিলবির মতো কালাকানুন গুলোর অত্যাচার, যা কর্পোরেট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় স্বাধীনতা পালনের অধিকার রক্ষা করে।

অবশ্য সেই অধিকার রক্ষা করতে আরও একটা বিষয় অনেক বেশি দরকার। নির্দিষ্ট একটা ইতিহাসকে, বিশেষত ইতিহাসে নারীর অংশটুকুকে পুরোপুরি ঘষে-মেজে তুলে ফেলা। সব যুগে, সব সময়ই নারীরা যে তাদের প্রজনন স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছেন, এই সত্যকে অস্বীকার করাও দরকারী। নাহলে ধর্মীয় কর্পোরেশন বা কর্পোরেট ধর্ম কারও উদ্দেশ্যই সফল হবে না।

অথচ ইতিহাসের সত্য হলো, উত্তরাধুনিক চেতনা নারীবাদে বিদ্ধ হওয়ার বহু আগে থেকেই নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের অধিকার ও প্রজননতন্ত্রের স্বাধীনতার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিকে দমনের চেষ্টা তাই কেবলমাত্র ইতিহাসের ভুল পক্ষে থাকা নয়। বরং ইতিহাসের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা।

উৎস: History of Abortifacients।

শেয়ার করুন: