সুপ্রীতি ধর:
সাংবাদিক দম্পতি গোলাম সরোয়ার সাগর এবং মেহেরুন রুনীর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজতক দেশবাসী জানতে পারেনি এই খুনের পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল, কারা করেছিল এই হত্যা! উপরন্তু এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কার্যক্রম ৮৬তম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর আগে দেশের কোন আলোচিত ঘটনার তদন্ত কার্যক্রমের এমন বেহাল দশা কেউ দেখেছে বলে প্রমাণ নেই।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এই ঘটনা তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও তখন মতাদর্শগত ভেদাভেদ ভুলে একই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। একের পর এক আলটিমেটাম সাংবাদিকদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল যে হয়তোবা এই ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না। কিন্তু খুব বেশিদিন এ নিয়ে তোলপাড় চলেনি। এরই মাঝে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে কাউকে কাউকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ায় আন্দোলন মাঝপথেই মুখ থুবড়ে পড়ে। শুরুতে
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবগুলো মহল নড়েচড়ে বসলেও এবং সেইসাথে সাংবাদিকরাও কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার চেষ্টা করলেও কোন এক অজানা কারণে সবই যেন থমকে যায়।
শোনা যায়, সাংবাদিকদের অনেকেই নাকি জানে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং কেন ঘটিয়েছে, বেশকিছু নামও তখন সম্ভাব্য হত্যাকারি হিসেবে সামনে আসে, পরবর্তিতে আর কোন ফলোআপ আমরা দেখতে পাইনি। যেসব নাম তখন সামনে এসেছিল তাদের কেউ কেউ দেশেই আছে, কেউবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে সবার সব সন্দেহ নিয়েই। কিন্তু সন্দেহ আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি যে মিডিয়া মালিকের নাম তখন সামনে এসেছিল, সেও পার পেয়ে গেছে। যেসব সাংবাদিকরা এই ঘটনা জানে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তারাও কোন অজ্ঞাত কারণে চুপ হয়ে যায়। গত ১০ বছরে অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউই আর এ নিয়ে মুখ খোলেনি। কেন খোলেনি তাও অজানা। মানুষ এই ১০ বছরে ভুলে গেছে সাগর-রুনী হত্যার কষ্টটুকু। মাঝখান থেকে বাবা-মা হারানো ছোট্ট মেঘ আজ কিশোরে পরিণত হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে একসময় সে পূর্ণাঙ্গ মানুষও হয়ে উঠবে, কিন্তু কোনদিনও কি সে জানতে পারবে তার বাবা-মাকে কেন খুন হতে হয়েছিল? কারা করেছিল সেই খুন?
বলা হয়, এইদেশে কোন হত্যাকাণ্ডের সুবিচার পেতে গেলে তাকে ক্ষমতায় যেতে হয়, যেভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে তাঁর বাবা-মা-ভাই ও অন্যান্য স্বজনদের হত্যার বিচার করেছেন। তাহলে কি ধরে নেবো যে আমাদের মেঘেরও একদিন ক্ষমতায় যেতে হবে সুবিচার পাওয়ার জন্য? কোন সিস্টেম নেই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে স্বজন হত্যার বিচার পাওয়ার?
আমাদের সাংবাদিক সহকর্মিরা, যারা বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সাড়া ফেলেছেন, তারাই বা কেন এই গত ১০ বছরে এই ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করতে চাইলেন না? নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে হলেও তো প্রয়োজন ছিল ঘটনাটি দেশবাসীর সামনে তুলে আনার? সাংবাদিকতা তাহলে আজ কার নির্দেশে চলছে।
প্রশ্ন অনেক। উত্তর জানা নেই আমাদের।
আশা করি আমরা আমাদের জীবদ্দশায় জেনে যেতে পারবো অন্তত সহকর্মি সাগর-রুনী কেন এবং কার হাতে খুন হয়েছিলেন, এটা কি খুব বেশি চাওয়া আমাদের? ছোট্ট মেঘ এর মুখের দিকে তাকাতে না পারা, নিজেকে অপরাধী ভাবার হাত থেকে কিছুটা হলেও উপশম আমরা কি পাবো না?