উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: ভারতে ধর্ষণবিরোধী এতো ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদের পরও ধর্ষণ থেমে নেই, থেমে নেই ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট নানামাত্রিক অপরাধও।
দিল্লি থেকে মাত্র দেড়শ মাইল দূরে হরিয়ানায় দলিত সম্প্রদায়ের একজন আজ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছেন নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে। অপরাধীরা তার স্ত্রীকে খুন এবং মেয়েকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদেরকেও হত্যার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।
অথচ এই ভারতই আজ বিক্ষুব্ধ মুম্বাইতে সাংবাদিক ধর্ষণের ঘটনায়, গত ডিসেম্বরে খোদ দিল্লিতে নির্ভয়া নামের একটি মেয়ে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেলে পুরো ভারতবর্ষ তখন জ্বলে উঠেছিল, যার রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। ধর্ষকের কঠোর এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানালেও দেশটির সংশ্লিষ্ট মহল যেন চোখে ঠুলি পরেছে। সবারই কথা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে সমাজ থেকে এ ধরনের অন্যায় উৎপাটন করা সহজ হবে না।
হরিয়ানার ওই ব্যক্তির অভিযোগ, ১৫ বছর বয়সী তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল গত বছর ৬ আগস্ট। আর এর সাথে জড়িত ছিল চটিকালাসি গ্রামের এক প্রভাবশালীর ছেলে। মেয়েটিকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করা হয়। এখানেই থেমে নেই অপরাধ। মেয়েটিকে ওরা মুক্তি দিলেও শর্ত জুড়ে দেয় এই বলে যে, প্রতি ১০ দিন অন্তর তাদের কাছে না এলে মা-বাবা দুজনকেই হত্যা করা হবে। মেয়েটি একথা জানানোর পর একটি মামলা দায়ের করা হয়, পরীক্ষাতেও ধর্ষণের প্রমাণ মেলে। কিন্তু একথা জানাজানির পর মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে স্কুল থেকে বের করে দেন কর্তৃপক্ষ।
একমাস যেতে না যেতেই অভিযুক্ত ধর্ষক মেয়েটির মাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। অসহায় মেয়েটির বাবা স্থানীয় থানায় গিয়ে এফআইআর করতে গিয়েও পারেননি। পুলিশ তা নেয়নি। বরং তা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে মেয়েটির বাবা অন্য একটি থানা ভুটানায় গিয়ে গণধর্ষণ এবং স্ত্রী হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন।এ ঘটনায় নভেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও শেষ হয় না দলিত সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি। অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্রমাগত চাপ ও হুমকির মুখে অবশেষে তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেন।
পিটিশনে তিনি বলেন, অভিযুক্ত আমানের বাবা ও চাচা যোগিন্দর সিং ও সুলতান সিং তাদের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করলেও হুমকি অব্যাহত আছে। আবেদনকারীর আইনজীবী বিচারকদের কাছে তার মক্কেলের নিরাপত্তার অনুরোধ করেছেন।
এই ঘটনায় হাইকোর্টের বেঞ্চ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সমাজে কোনকিছুর চরম অবনতি হয়েছে, সেইসাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝেও। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশসহ নোটিস জারি করেছে ওই বেঞ্চ। নোটিসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রশাসককে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
মেয়েটির বাবা জানান, হরিয়ানা সরকার এ ঘটনার পর মেয়েকে গণধর্ষণের ক্ষতিপূরণস্বরূপ ৬০ হাজার রুপি এবং স্ত্রীকে হত্যার জন্য তিন লাখ ৭৫ হাজার রুপি দিয়েছে।