জান বাঁচাতে পালিয়ে গেছে ৫ শতাধিক যৌনকর্মী

Madaripurউইমেন চ্যাপ্টার: মাদারীপুরের পুরান বাজার যৌনপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুই হাজারের বেশি ব্যক্তির নামে গত মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় একটি মামলা করে।

হামলার পর পালিয়ে গেছে পাঁচ শতাধিক যৌনকর্মী। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাতেই ইসলাহে কওম পরিষদ মাদারীপুর সদরের পুরান বাজারের উত্তরণ ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে যৌনপল্লীতে হামলার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলাহে কওম পরিষদ, মাদারীপুর বণিক সমিতি, সাধারণ ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গত ১৯ মাস ধরে এছলাহে কওম পরিষদ মাদারীপুরের পুরান বাজারের যৌনপল্লী থেকে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ইসলাহে কওম পরিষদ ও যৌনপল্লীর নেত্রীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। এমনকি নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক হয়।

কিন্তু এরপরও ঘটনাটির কোন সুরাহা না হওয়ায় ইসলাহে কওম পরিষদের নেতারা কঠোর আন্দোলন ও আলটিমেটাম দেয়। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য শহরের বিশিষ্ট ২০ জন ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, গতকাল বেলা ১১টায় ওই কমিটির সদস্য সাবেক পৌর মেয়র নুরুল আলম বাবু চৌধুরী, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খান, মাদারীপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মিলন ভূইয়া, পৌর কাউন্সিলর আক্তার হাওলাদার ও মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণাসহ কয়েকজন যৌনপল্লীতে যৌনকর্মীদের সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যাপারে কাউন্সেলিং করতে যান। এ সময় পল্লীর লোকজন হামলা চালিয়ে তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ খবর পুরান বাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সব ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে পল্লীতে হামলা চালান। এ সময় ইসলাহে কওম পরিষদের কোন নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল না বলে দাবি করা হয়।

তবে সংবাদ সম্মেলনের এ দাবির বিরোধিতা করে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, হৈচৈ শুনে তাঁরা এসে দেখেন আন্দোলনকারীরা যৌনকর্মীদের চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসছে। এরপর রাস্তায় ফেলে মারধর করে টাকা-পয়সা, মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁদের ইজিবাইকে তুলে দেন। অনেকেই সবকিছু ফেলে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালিয়ে যান।

যৌনপল্লীর নেত্রীরা বলেন, তারা ২০০ বছর ধরে মাদারীপুরের এই পল্লীতে বসবাস করে আসছেন। এখানকার অধিকাংশ সম্পত্তি তাঁদের। এ সম্পত্তি জবরদখলের জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

তাঁরা আরও বলেন, গত ১৯ মাস ধরে স্থানীয় ইসলাহে কওম পরিষদ নামের একটি সংগঠন তাঁদের উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন করে আসছে। যেকোনো সময় তাদের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কায় পাঁচ শতাধিক যৌনকর্মীর জান-মালের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করা হয়। হাইকোর্ট গত ২২ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য তাঁদের নির্বিঘ্নে জীবন যাপনের জন্য একটি রুল নিশি জারি করেন। তা সত্ত্বেও আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও মারপিট করে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যৌনপল্লীর নেত্রীরা।

সদর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত দুই দিনে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নূরে আলম (২০), শহিদুল (১৮), সীমান্ত (১৮), সুজন (২০), মিরাজ (২০), ফারুক (২৫), সাইফুল (২৬), আজিজুল (২৫) ও শাহাদাতকে (১৮) আদালতে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, হাইকোর্টের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তাই মানা হবে। যৌনপল্লীতে হামলা, লুটপাট, উচ্ছেদ ও ভাঙচুরের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.