উইমেন চ্যাপ্টার: পারিবারিক-সামাজিক ঐতিহ্য, নাকি ক্যারিয়ার, কোনটা? তাইওয়ানের কর্মজীবী মেয়েরা বেছে নিয়েছেন ক্যারিয়ারকেই। তারা সন্তান নিতে চান না, এমনকি বিয়েতেও আগ্রহী নন। তাই তারা ফার্টিলিটি ক্লিনিকে জমা রেখে আসছেন তাদের ডিম্বাণু। যাতে দেরিতে বিয়ে করলে মা হতে কোন সমস্যাই তাদের না হয়।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাইওয়ানের কর্মশক্তিতে নারীদের বিশাল ভূমিকা। এশিয়ার ১৪টি দেশের মধ্যে নারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সমকক্ষ কেবল তাইওয়ানই। অর্থনীতির মন্দাবস্থাই তাইওয়ানের নারীদের সামনে ‘লক্ষ্য’ স্থির করতে বাধ্য করছে। বর্তমানে দেশটিতে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ৩০, আশির দশকে ছিল ২৪। আর একারণেই ডিম্বাণু গচ্ছিত রাখার বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইদানিংকালে।
৩৪ বছর বয়সী লিন কিও তিন বছর আগে তার ডিম্বাণু জমা রেখেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি যেহেতু দেরিতে বিয়ে করবো, তাই নিশ্চিত নই কখন আমার ডিম্বাশয় কখন থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। আর সেজন্যই আমি ডিম্বাণু রেখে দিয়েছি, যাতে পরে হলেও মা হতে কোন অসুবিধা না হয়’।
সিসকো সিস্টেম তাইওয়ান লিমিটেড এর ম্যানেজার কিও বেশ ভালই বেতন পান, ইচ্ছে করলেই বাসায় থেকে কাজ করতে পারেন। ক্যারিয়ার জীবন তার বেশ সাবলীল হলেও কিও জানান, প্রেমের জীবন খুব একটা সুখকর নয়। তার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি বুঝতে পারেন যে, শেষ জীবনে বাচ্চাকাচ্চার বেশ গুরুত্ব আছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। ভেবে-চিন্তেই আমি আমার ডিম্বাণু রেখে দিয়েছি’।
এমনই একটি ফার্টিলিটি সেন্টার ই-স্টর্ক রিপ্রোডাকশন সেন্টারের পরিচালক লাই সিং-হুয়া বলছিলেন, দেরিতে বিয়ে করার কারণে অনেকেরই বাচ্চা হচ্ছিল না। তারা যখন আসছিলেন ডিম্বাণু দাতাদের সন্ধানে তখনই তার মাথায় আসে ডিম্বাণু-ফ্রিজিং সার্ভিস চালু করার।
‘আমরা তখন ভাবি, যদি এরাই তাদের ডিম্বাণু আগে-ভাগেই সংরক্ষণ করতেন তাহলে আজ তাদের দাতা খুঁজতে হতো না’। এই চিন্তা থেকেই নিজেদের ডিম্বাণু সংরক্ষণের এই দায়িত্ব নেন তারা। তাদের ক্লিনিক এখন প্রতি মাসেই একশরও বেশি ফোনকল পান আগ্রহীদের কাছ থেকে।
মাত্র পাঁচ বছর আগেও ডিম্বাণু সংরক্ষকের সংখ্যা ছিল ২০ জনের মতো। ২০১১ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ জনেরও বেশি, গত বছর আরও ৫০ জন, আর এবছরের প্রথম ছয় মাসেই ৪০ জনেরও বেশি নারী তাদের ডিম্বাণু জমা রেখেছেন।
লাই বলেন, প্রযুক্তি এখন অনেক পোক্ত, আর ফ্রিজিং করা হলে ডিম্বাণুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও এখন অনেক বেশি। এর সার্বিক খরচ পড়ে ৮০ হাজার তাইওয়ান ডলার, (২,৬৮০ মার্কিন ডলার) এবং এটি করতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিটের মতো।
ন্যাশনাল তাইপে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর চেন ফেন লিং বলছিলেন, সামাজিক বিভিন্ন চাপের কারণে আজকাল মেয়েরা দেরিতে সংসার শুরু করছে। বিবাহিত মেয়েরা হলো জ্বলন্ত মোমবাতির মতোন, যার দুদিকেই পুড়ছে। আমরা বলি যে, মেয়েরা দুটি কাজ করে। দিনের কাজে তারা টাকা আয় করেন ঠিকই, কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর তারা সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল করেন। আর এ কারণেই মেয়েরা বিয়ে করতে দিন দিন উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই যে ক্যারিয়ার, বিয়ে এবং মাতৃত্ব-এই তিনের বিরোধের কারণে দেশটিতে দিন দিন জন্মহার করছে। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফেসবুক এর তথ্য অনুযায়ী, নারী প্রতি শিশু জন্মের গড় সংখ্যার দিক থেকে তাইওয়ান ও হংকং পিঠাপিঠি, মাকাও এবং সিঙ্গাপুরের একটু ওপরে তাদের অবস্থান।