
উইমেন চ্যাপ্টার: হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে পুলিশের উপস্থিতিতে মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারের যৌনপল্লীটি উচ্ছেদ করেছে স্থানীয়রা।
যৌনকর্মীদের একজন অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা দুই শতাধিক যৌনকর্মীকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তবে এই তুলে নেওয়ার খবরটি অস্বীকার করেছে স্থানীয় পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে ইসলামে কওম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে প্রায় ৫/৬শ’ লোক ওই পল্লীতে হামলা চালিয়ে মেয়েদের মারধর করে এবং ঘরে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
পুলিশ দাবি করে, পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মেয়েদের সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। হামলার পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই সমাবেশ করে যৌনপল্লিতে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছে কওম পরিষদ।
বেলা ২টার মধ্যে পতিতাপল্লী খালি হয়ে যায়। ছেলেমেয়েসহ এখানে বসবাস করতেন পাঁচ শতাধিক যৌনকর্মী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার আদেশ ছিল হাইকোর্টের।
এদিকে নাম প্রকাশ না করে ওই পল্লীর এক নারী বলেন, “কথা ছিল আমাদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু তা না করে এভাবে আমাদের উচ্ছেদ করা হল। এখন আমরা যাব কোথায়? খাব কী?”
জানা গেছে, ইছলাহে কওমী পরিষদ নামের ওই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে পুরানবাজার থেকে ওই যৌনপল্লীটি উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইসলাহে কওম পরিষদের নেতা ও যৌনপল্লীর নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেন। এ ছাড়াও মাদারীপুরের সাংসদ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গেও দুই পক্ষ বৈঠক করেন। তবে এসব বৈঠকে কোনো সমঝোতা হয়নি।
আজ সকালে কওম পরিষদের সদস্যরা পুরানবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা যৌনপল্লির সবগুলো ঘর ভাঙচুর করে ও লুটপাট চালায়। যৌনপল্লীর নারীনেত্রী অভিযোগ করেন, একটা দল ওই যৌনপল্লীর জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এজন্যই সেখানে হামলা হয়েছে।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, যৌনপল্লীতে হামলার ঘটনাটি সত্য। আরও হামলার আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
যৌনকর্মীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে কয়েকজন যৌনকর্মীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে ওখান থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
হামলার সময় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি -এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। আমরা আসার আগেই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সকালে হামলার পরে দুপুর একটার দিকে কওম পরিষদের সদস্যরা পুরানবাজারের ওই যৌনপল্লীর কাছে একটি সমাবেশ করে যৌনকর্মীদের এক ঘণ্টার মধ্যে ওই এলাকা ছেড়ে দিতে বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে না গেলে সেখানে আবারও হামলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় সমাবেশে।