মা-বাবার গ্রেফতার চাইলেন মেয়ে

Meye against father
সায়মা আক্তার

সুমন্দভাষিনী: শাহবাগের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন একদিন এক নারী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, তার বাবা রাজাকার, তিনি সেই বাবার বিচার দাবি করেন হাজারও মানুষের সামনে। মনে আছে, মাইকে যখন শুনছিলাম ভিড়ের মধ্য থেকে, গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। মুখে বলেছিলাম, সাবাশ, এমনটিই তো চাই। শাহবাগের চেতনা তো এটাই।

আজ আবারও একটি খবরে চমকিত হলাম। খবরটি এরকম, চট্টগ্রামের একটি মেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রবাসী বাবা-মা এইদেশের জামায়াত-শিবিরকে অর্থযোগান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এবং তাই শুধু নয়, বাবা-মায়ের এই কাজকে তিনি তীব্র ঘৃণাভরে উপেক্ষা করেছেন এবং তাদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন। বলেছেন, তিনি এইদেশের নাগরিক, এটাই তার অহংকার। তার শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, এই গর্ব তার আছে। তার জন্ম ও বড় হওয়া বিদেশে হলেও কখনও মেনে নিতে পারেননি বাবা-মায়ের এই কর্মকাণ্ডকে। তার ভাষায়, যে অর্থ দিয়ে জামায়াত-শিবির এইদেশে তাণ্ডব চালায়, সেই কাজকে আমি সমর্থন করি কিভাবে?

সত্যিই তো। মানুষ বলে যে, রক্ত কথা বলে। কিন্তু চট্টগ্রামের এই সায়মা আক্তারের রক্ত আজ কি কথা বলছে? দিব্যি দেখছি, এখানে দেশপ্রেম কথা বলছে, তার নৈতিক মূল্যবোধ কথা বলছে। ন্যায়-অন্যায়বোধ কথা বলছে। এবং এটাই তো স্বাভাবিক, এটাই তো হওয়া উচিত।

কিন্তু আমাদের দেশে কি হয়? ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতারা আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের সন্তানরাও দেখে না দেখার ভাণ করে থাকে। তাদের মনে কি একবারও প্রশ্ন জাগে না যে, এতো টাকা তাদের বাবার কোথা থেকে আসছে? বাবার যোগ্যতাই বা কি? কি করে? নাকি বিলাসিতায় গা ডুবিয়ে দিয়ে এসবের কিছুতেই কিছু যায় আসে না তাদের?

একনজরে চলুন দেখি আসি সায়মা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে কি বলেছেন। জামায়াতের নাশকতায় অর্থযোগানে বাবা-মা জড়িত। তিনি তাদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন।  তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা হাজী মফিজুর রহমান ওমানের বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে জামায়াত শিবিরের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতো। আমার বাবা নিজেই একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী। মা-বাবা জামায়াতের প্রবাসী রুকন।‘

মেয়েটি আরও বলেন, ‘আমার বাবার সংগৃহীত অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে জামায়াত শিবির যে নাশকতা ও তাণ্ডব চালাচ্ছে তা আমার কাছে স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভালো লাগত না এবং গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রতিবাদ করতাম। তাই বাবা-মা আমাকে সহ্য করতে পারতো না। আমাকে সবসময় এড়িয়ে চলতো। এক বাসায় থেকেও বন্দি জীবন কাটিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৪ জুলাই গোপনে দেশে ফিরে আসি। ১৪ জুলাই আমার মায়ের দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় আমাকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত আমাকে জামিন দিয়ে আমার ইচ্ছায় শ্বশুর-শাশুড়ির হেফাজতে দেন। কিন্তু অজানা কারণে আমার স্বামীকে জামিন না দিয়ে জেলে বন্দি করে রেখেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলে বন্দী স্বামীর মুক্তি দাবি জানান সায়মা।

বাবা জামায়াতের সক্রিয় প্রবাসী নেতা হওয়ায় শিবিরের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মাধ্যমে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে গুম, অপহরণ ও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সায়মা। তিনি শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সকল সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আহবান জানান।

পাশাপাশি ফটিকছড়ির ভূজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত শিবিরের নাশকতা তান্ডবে অর্থযোগানদাতা হিসেবে তার বাবাকে গ্রেফতার করে তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

সায়মা আক্তার ওমান জার্মান ইউনিভাসির্টি অফ টেকনোলজির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা-মা’র সঙ্গে ছোট বেলা থেকেই ওমানের হামরিয়া এলাকায় বসবাস করতেন। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। নগরের ডবলমুরিং এলাকার আগ্রাবাদের কাপুরিয়া পাড়ায় নিজস্ব বাসা রয়েছে।

স্বামী হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক বিতর্ক সম্পাদক।

আশা করবো, সায়মার অভিযোগ সত্য, কোনো বানোয়াট কিছু নয়। আর এ অভিযোগ সত্য হলে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়াটা সরকারের অবশ্য কর্তব্য।

শেয়ার করুন: