উইমেন চ্যাপ্টার: আজ ১২ ভাদ্র, দ্রোহ-বিদ্রোহ, মানবতা ও প্রেমের অনন্য কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৭৬ সালের (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে সাম্যের কবি নামেও পরিচিত তিনি। শোষণমুক্ত, শ্রেণীবৈষম্যহীন, বর্ণগোত্রহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তাঁর কবিতা ও গানে সেই স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন আজীবন
কবি জন্মেছিলেন ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। প্রচণ্ড অভাব আর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে কেটেছিল তাঁর শৈশব, রুটির দোকানে কাজ করতেন, দুখু মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। মক্তবে পড়েছেন, যাত্রা দলের হয়ে গান লিখেছেন। এই হাতেই তাঁর সৃষ্টি হয়েছে কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যানসহ অসংখ্য রচনা। নিজেই গান লিখেছেন, নিজেই সুর করেছেন। এমন গুণের সমাহার খুব কম মানুষের মাঝেই মেলে। বাংলা সাহিত্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছেন।
মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। একাধারে তিনি ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, রাজনীতিক এবং সৈনিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। লেখাতে যেমন বিদ্রোহী, জীবনেও তাই। আপোস তাঁর চরিত্রে ছিল না। তাই তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবি। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখনী নতুন করে উজ্জীবিত করেছে সংগ্রামীদের, লড়াকুদের। ব্রিটিশদের তিনি হয়ে উঠেছিলেন চক্ষুশূল। তারা তাকেঁ স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল চিরতরে, কিছুটা সফলকামও হয়েছিল। কবি হারিয়ে ফেলেছিলেন তাঁর বাকশক্তি, লেখনী শক্তি। এভাবেই কর্মহীন তিনি কাটান জীবনের আরও অনেকগুলো বছর।
শুধু তখনই নয়, বাঙালীর সংগ্রামেও যুগে যুগে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা। ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১। পুরো সময়টাই তাঁর কবিতা, তাঁর গান প্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালীকে, স্বাধীনতা আনতে সাহস দিয়েছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও কবি কাজী নজরুল সমানভাবেই পূজনীয়, নমস্য, স্মরণীয়। তাঁর গান এখনও রক্তে আগুন ধরায়, তরুণকে উজ্জীবিত করে, আন্দোলিত করে, জীবনকে তুচ্ছ করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানায়। ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনিই অন্যতম কবি। নারীকে তাঁর মতোন এমন মর্যাদা আর কোন কবি-সাহিত্যিক দেননি।
তাইতো বলতে চাই….
“তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবো না,
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিবো না…।”
ওগো মানুষের কবি, মানবতার কবি, দ্রোহের কবি, শেকল ভাঙার কবি, মুক্তির কবি…
অভিমানে নীরব থেকো না… তুমি জাগো আর জাগাও আজকের এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জেগে থাকা ঘুমন্ত মানুষের চেতনা।
ভালবাসা আর শ্রদ্ধা তোমার প্রয়ান দিনে……
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে সরকার। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি দেয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এদেশের নাগরিকত্ব পান। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একুশে পদক দেওয়া হয়।
এদিকে আজ কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা, ময়মনসিংহে কবির স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ভোরেই কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।