‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগেরই আছে’

Hasina PM
শেখ হাসিনা

উইমেন চ্যাপ্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত কেবল আওয়ামী লীগেরই আছে। বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কখনো শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাস করেন না এবং তিনি সব সময় দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চান।

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতা শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী নন। তিনি অতীতেও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন এবং এখনো একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ৬১টি জেলা পরিষদ প্রশাসকদের সংগে মতবিনিময় সভার উদ্বোধনী বক্তৃতায় একথা বলেন। খবর: বাসস।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে বিরোধী দলের কাছে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৪৮ ঘন্টার একটি আলটিমেটাম দেন এবং সরকার উৎখাতের জন্য বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াত ও হেফাজত দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কেবল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পেরেছে। ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত কেবল আওয়ামী লীগেরই রয়েছে।

শেখ হাসিনা পুনরায় উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের গণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে চার বছরে বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি।’

শেখ হাসিনা আরো উল্লেখ করেন যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। নির্বাচন কমিশন গত সাড়ে চার বছরে সারাদেশে বিভিন্ন প্রকার ৫ হাজার ৭শ’ ৫৩টি নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৯শ’ ৫৩ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং এসব নির্বাচন সম্পর্কে কোন প্রকার অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে বলেন, কেবল আওয়ামী লীগেরই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাহস ও শক্তি রয়েছে।

শেখ হাসিনা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যাচার করার জন্য বিরোধী দলের সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এসব নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে বিরোধী দলের প্রার্থীরা কিভাবে বিজয়ী হলেন?’

বিরোধী দলের আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের হুমকির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে এদেশের মানুষ আর কতকাল দুর্ভোগ পোহাবে এবং আর কতকাল তারা অনিশ্চিয়তায় কাটাবে।’

বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত সৃষ্ট ৫-৬ মে’র সহিংসতা ও অরাজকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় সারাদেশের মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে কাটিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত দেশে ইসলামকে পুঁজি করে রাজনীতি করে কিন্তু তারা ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের আক্রমণ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভিতরে জায়নামাজে অগ্নিসংযোগ এবং পবিত্র কোরআনের শত শত কপি পুড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেনি।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাতসহ সকল ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে সড়ক ও সেতু নির্মাণ ও মেরামত এবং স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সুবিধাসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দাফতরিক কর্মকাণ্ড জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ভবিষ্যতে জেলা পরিষদের কাছে আরও দফতর হস্তান্তর করার মাধ্যমে জেলা পরিষদকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে চায়। পাশাপাশি প্রশাসকরা, যারা হবেন নির্বাচিত প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রয়োজন ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে জেলাওয়ারি বাজেট প্রণয়ন করবেন।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উন্নয়ন শুরু করেছিলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর সূচিত দেশ গঠনমূলক কর্মকাণ্ড সামরিক স্বৈরশাসকরা বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতায় আসে এবং গণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে পড়ার কারণে উন্নয়নের চাকা আবার থেমে যায়। ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ পাচার, লাগামহীন সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে তারা দেশকে পেছনে নিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি নেত্রী তার অর্থ মন্ত্রীর সঙ্গে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। এছাড়া, আর তার দু’ ছেলে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি’র দুটি গুণ- একটি হচ্ছে অর্থ আত্মসাৎ এবং অপরটি হচ্ছে মানুষ হত্যা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বর্তমান সরকার দেশকে পুনরায় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঠিক পথে নিয়ে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে, পানি ও গ্যাস সংকট সমাধান করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি এবং যোগাযোগ খাতে উন্নতি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পর্কে বলেন, সংসদ উপনেতার নেতৃত্বে সংসদীয় বিশেষ কমিটির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে এটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৭টি বৈঠক করেছে।

শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু সম্পর্কে বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থ দিয়েই এই সেতু নির্মাণ করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে । তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রথমে বলেছে, প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। অথচ পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করে বলেছে, প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি, অর্থ আত্মসাতের ষড়যন্ত্র হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্য আয়ের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন এবং স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান উপস্থিত ছিলেন।
এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.