শাস্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বামীর শেষকৃত্য করলেন মন্দিরা বেদী

উইমেন চ্যাপ্টার:

বলিউড তারকা মন্দিরা বেদী শত বছরের ধর্মীয় প্রথা ও সংস্কারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রয়াত স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজ কৌশলের শেষকৃত্য করলেন। পুত্র সন্তান থাকা সত্ত্বেও প্রিয়তম মানুষটির শেষযাত্রায় এমনভাবেই উপস্থিতি নিশ্চিত করলেন মন্দিরা। এরই মধ্যে প্রচুর সংখ্যক ছবিতে অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এখন সয়লাব। সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুত্র সন্তানকে মৃত পিতামাতার মুখাগ্নিসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে হয়। পুত্রের অবর্তমানে মৃতের পুরুষ স্বজনদের কেউ এই দায়িত্বটি পালন করে থাকে। পুত্রের অবর্তমানে কন্যার ক্ষেত্রে এই কঠোর নিয়ম কিছুটা শিথিল হলেও স্ত্রীদের সেই অধিকার প্রদানে এখনও সমাজের, ধর্মের বিধিনিষেধ বহাল আছে। কিন্তু এতোকিছু নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল সত্ত্বেও ভারতে অনেক বছর ধরে এইসব সংস্কার ভাঙার কাজটি কেউ না কেউ করে আসছে সাহসিকতার সাথে। ফলে নানা সময়ে ধর্মীয় শাস্ত্র পালনকারীদের গোস্বায়ও পরিণত হচ্ছেন সেই প্রতিবাদীরা।

সবশেষ এই কাফেলায় যোগ হলেন বলিউড অভিনেত্রী মন্দিরা বেদী। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে বিহ্বল হলেও তিনি হাতে তুলে নিলেন শেষকৃত্যের মতোন দায়িত্ব। তবে তিনিই প্রথম নন। এর আগেও বহু নামিদামি পাবলিক ফিগাররা এরকম জেন্ডার-কোডেড ধর্মীয় রীতিনীতি অমান্য করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২০১৮ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির মৃত্যুর পর তার পালিতা কন্যা নমিতা ভট্টাচার্য শেষকৃত্য পালন করেছিলেন।

ফেসবুকে ভারতীয় একজন সাংবাদিক জিনাত রেহানা ইসলাম মন্দিরা বেদীর শেষকৃত্য পালনের কিছু ছবি শেয়ার করে তাতে লিখেছেন,
“And that’s Mandira Bedi, smashing centuries-old notions and breaking stereotypes! She not only carried her husband’s bier but also lighted up his pyre and performed his last rites. This comes off as a change of fresh air in our Indian society where women are barred from performing the last rites of their dear ones.
Kudos to the woman for her bold initiative even in this moment of grief. More power to a wife, mother & woman like her”.

সেই পোস্টের নিচে অসংখ্য ভারতীয় নারী এই ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, এবং সেইসাথে লিখেছেন যে, তারা নিজেরা বা পরিচিতরাও আজ থেকে ২০-২২ বছর আগে এই প্রথা ভেঙে নিজেরাই পিতামাতার মুখাগ্নি করেছিলেন। বলেছেন, তখন অনেকেই তাদের সমালোচনা করলেও তারা একে পাত্তা দেননি।

একজন লিখেছেন, “হিন্দু পরিবারে ছেলে মুখাগ্নি না করে স্ত্রী করছেন, এটা একটা সাহসী স্টেপ। ভীষণ সাহসী স্টেপ। বিশেষত ঘটনার আকস্মিকতায় যখন উনি বিপর্যস্ত তখন এভাবে প্রাচীর ভাঙা … কুর্নিশ।” কেউ কেউ শতবর্ষী পুরনো এই প্রথাকে ভেঙে দেয়ার আহ্বানও জানিয়ে বলেছেন, ভাঙ ভাঙ কারা প্রাচীর।

৩০ জুন মুম্বাইতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কৌশল। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর। তাদের দুটি ছেলেমেয়ে আছে, এদের মধ্যে মেয়েটি তাদের পালিতা। কৌশলের এই অকাল মৃত্যুতে বলিউডে তার সহকর্মি এবং বন্ধুদের মাঝে শোক নেমে আসে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে যে মুহূর্তে হিন্দু নারীদের উত্তরাধিকার এবং বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের সংস্কারে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা চলছে, যখন যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেও দেশটিতে ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না কিছু ধর্মান্ধ নেতৃবৃন্দের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে, সেইসময়ে প্রতিবেশি দেশে হিন্দু নারীরা আরও অনেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ধর্মীয় সংস্কার ভেঙে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের আরও অনেক অনেক বছর পথ পাড়ি দিতে হবে, বলাই বাহুল্য।

স্যালুট মন্দিরা বেদীকে শোকসন্তপ্ত সময়েও এমন একটি সাহসি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.