ব্যক্তিগত আর পেশাগত জীবনের পার্থক্য কবে বুঝবে মানুষ!

লতিফা আকতার:

আমাদের দেশের মানুষ ব্যক্তিগত জীবন আর প্রফেশনাল জীবনের পার্থক্য কবে বুঝবে!!

* সব মানুষের ব্যক্তিগত জীবনটা আলাদা। এমনকি সে যদি একজন যৌনকর্মীও হয়। যতোক্ষণ না একজন ব্যক্তি নিজে তার দুই জীবনকে ব্লেন্ড করে এক না করে ততক্ষণ একটার সাথে আর একটা মেলানোর অপচেষ্টা না করাই ভালো। আসলে সত্যি বলতে কী সভ্য সমাজে একজনের জীবন নিয়ে আলোচনা করাই মুর্খামি। আমাদের দেশে সেই মুর্খামিরই বাম্পার ফলন চলছে।

* এ জাতির মস্তিষ্ক সব কাপড়ের মধ্যে ঢুকে থাকে। বেকুব লোকজন। নারী সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনা ঘটলেই তার কাপড় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা যে কাপড়ে নয়, সমস্যা মস্তিষ্কে, সেটাই বোঝানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। স্টারদের জীবন বাদ দেন। সাধারণ জীবন খেয়াল করেছেন কখনও? করেননি বলেই এ ধরনের আলোচনায় এখন ফেসবুক সয়লাব। দুদিন পর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, অথচ মস্তিষ্কের ন্যুনতম চর্চাও কোথাও নেই।

* এই সমাজে খোলামেলা পোশাক পরা মানেই সে নারী খারাপ। সে নিজের শরীর দেখিয়ে সমাজের মস্তিষ্ক নষ্ট করছে। এতো সহজ বিষয়টা? একজন খোলামেলা পোশাক পরলো আর যুবসমাজ সাথে সাথেই রসাতলে চলে গেল? ভাবটা এমন যেন যুবসমাজ ওই খোলামেলা পোশাক দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল নষ্ট হবে বলে! সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন দুর্নীতি, মিথ্যাচার, লুটপাট, ভণ্ডামি চলে, সেগুলো বুঝি যুবসমাজ দেখে না! আসলে কেউ কারোর মস্তিষ্ক নষ্ট করে না। নষ্ট মস্তিষ্ক বরং মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটায়।

* অনেককেই বলতে শুনি যে বোরকা পরে কতো কী করা যায়! যারা বোরকা বা হিজাবের পক্ষে দাঁড়ান, তারাই সাধারণত এ ধরনের একটা যুক্তি খাড়া করান সবার সামনে। দুনিয়ার কতো আকাম-কুকামও যে ঐ বোরকার মাঝে লুকিয়ে করা যায়, খেয়াল করেছেন কখনও? বোরকা ধর্মীয় লেবাস হলেও, তার মান রাখা না রাখা ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভর করে। আপনারা সহজ সমীকরণে ধরে নেন – এমন লেবাসধারী মানে ধোয়া তুলসী পাতা। কেননা আপনাদের চোখ তো ঐ লেবাসেই আটকে থাকে।

* পোশাকই যদি মস্তিষ্ক নষ্ট করার কারণ হয়, তবে তথাকথিত ‘ভালো’, ‘শালীন’ পোশাক পরা নারীকে কেন তথাকথিত ইজ্জত যাওয়ার পর আত্মহত্যা করতে হয়? কিংবা তাকে কেন ধর্ষণের শিকার হতে হয়? জীবনের প্রয়োজনে- রাস্তাঘাটে, বাসে, লঞ্চে দৌঁড়ে বেড়ানো নারীর অধিকাংশই আপনাদের ভাষার শালীন পোশাক পরেই চলাফেরা করে। তারপরও রেহাই না পেলে সে দায় কার? কিংবা ছোট একটা কন্যা শিশুও যে অনিরাপদ জীবন যাপন করে, তার দায়ও কি লেবাসের? ভেবেছেন কখনও? ভাবেন।

* মস্তিকের ভেতর যে বিকৃতের বীজ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হয়, তাতে পুরা রাষ্ট্রকেও যদি পর্দার নামে বিশাল কাপড় দ্বারা আবৃত করে ফেলা হয়, তাতেও খুব একটা কাজ হবে না। অবশ্য পুরো রাষ্ট্রকেই এরকম লেবাসে আবৃত করে ফেলার একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত যে চলছে বছরের পর বছর ধরে, সে তো খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছি আমরা।

* আজব দুনিয়া- কেউ, কেউ লেবাস জায়েজ করার জন্য নানান প্লাটফর্ম ইউজ করে, আর কেউ লেবাসের আড়ালে হাজার বদামী ঢেকে নিয়ে বেড়ায়। আর কুপমণ্ডুকতায় আটকে পরা সমাজ, এ দু’য়ের মাঝে ঘুরপাক খায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

* মস্তিষ্ক পরিস্কার করার ওয়াইপার থাকলে ভালো হতো। এ জাতির জন্য ইহা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। হয়তো চায়নিজরা এক সময় বেরও করে ফেলবে। দুঃখের বিষয় আমরা সেটা দেখে যেতে পারবো না।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.