ধর্ম সব ছিনায়ে নিসে

সোনিয়া সরকার জয়া

ধর্ম আমারে খুউব দাম দিসে গো গোঁসাই
আমারে বহু মান ইজ্জত দিসে
পুরুষতন্ত্রের লেবাস পইরা, পিতৃতন্ত্রের ভড়ং ধইরা,
পেছন থেইকা ছোবল মাইরা
দাবার গুটির চাল দিসে।

ধর্ম আমার নারীত্বের শরীরছেঁড়া ঋতুর রক্তরে
অচ্ছুৎ, অপবিত্র কইয়া অপবাদ দিসে!
সূর্য থেকে চুলার আগুনে পুইড়া
অমানুষিক খাটুনি করা দেহটারে
বানাইসে শুধু বাচ্চা বিয়ানোর কল আর বাসনার বস্তু,
আপাদমস্তক ঢাকসে, আগাগোড়া মোড়াইসে।
অন্দরমহলে পইড়া থাকারে অস্বীকার করলে
সালিশ ডাইকা শাসন করসে।

আমার শরীরটারে আমার বিরুদ্ধেই
ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে দাঁড় করাইসে।

ধর্ম আমার যোগ্যতারে অগ্রাহ্য করসে
উড়াইয়া দিসে প্রতিভারে,
সৃষ্টির শুরু থেইকা যে নারীর সাথে পা মিলাইয়া
আগাইয়া আসছিলো আদিম দুনিয়া,,
মধ্যযুগ থেইকা হঠাৎ রাজত্ব শুরু করা ধর্মতন্ত্র
সে নারী জন্মরেই অপরাধ বইলা রায় দিসে।
সমাজ রক্ষার মন্ত্র পড়াইয়া
নারী জাতরেই আরেক নারীর শত্রু বইলা ঘোষণা দিসে।

ন্যায় বুঝ দিয়া ধর্ম আমারে
এক মহাকাল জুলুম করসে।

চার দেয়ালে বাইন্ধা আমায়
পুতুল হওয়ার আদেশ দিসে,
স্বামী ভাগের বিধান লেইখা
সতীন আনার হুকুম দিসে,
নিষ্পেষণের জীবন দিয়া
সঙ্গীর অধিকার মাইরা দিসে।

সন্তান জন্ম না দিতে পারা থেইকা স্বামীর মরনরে;
দোষ বানায়া আমার ঘাড়ে দায় চাপাইসে
কিশোরী কালে গায়ে বৈধব্যের সাদা থান চড়াইয়া
যৌবনের আকাঙ্ক্ষারে ঢাইকা দিসে।
যৌনতারে রোগ মানাইতে শাকান্নরে পথ্য করসে।
অবদমনের যাতাকলে কামনারে ঘুইটা দিসে।
ভালোবাসার টানে ছুইটা গেলেই,
প্রেমের ফুল গর্ভে নিলেই,
ব্যাভিচারিণী কইয়া জ্বালাইয়া দিসে।
জন্মদাতা পলায়ে গেলে
নাড়িছেঁড়া ধনরে আমার
জারজ বইলা পিইষা মারসে।

অথচ এই ধর্মই কিন্তু পুরুষরে দিসে
বহুগামী হওয়ার অবাধ সুযোগ
আর নারীরে চিরকাল বানাইসে তার সেবাদাসী।
পুরুষের চাহিদা মাফিক ঠিক কইরা দিসে জীবন,
তাদের কথামতো চললে ডাকসে লক্ষ্মী, গৃহবনিতা
আবার তাগোরই মনোরঞ্জনের জন্য পথে নামাইয়া
আমারে বানাইসে বাইজী, পতিতা।

দিনের আলোয় পুরুষত্বের অহম বজায় রাখতে
নারীশক্তি বইলা পূজা করসে,
বেশ্যা বইলা ছুঁইড়া ফেলসে।
আবার রাতের আধারে লালসা মিটাইতে
সেই গণিকার পায়েই অর্ঘ্য দিয়া
বিছানাতে দেহ বিলাইসে।

আমার শরীরের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে না দিয়া
তাগো সাধের কাদামাটি বানাইয়া
ইচ্ছামতন ছানাছানি করসে।

ধর্ম আমার ভাইয়ের ভাগটা বেশি রাইখা
সম্পদের ভাগেও আমারে করসে বঞ্চিত,
পুত্র সন্তান জন্ম না দিতে পারারে অযোগ্যতা কওয়া
ধর্ম ক্যান কোনোদিনও কইলো না
সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ শুধু পুরুষের বৈশিষ্ট্য?

ধর্ম শিখাইসে বাপ, ভাই, স্বামী, পুত্রের বাড়িই
নাকি নারীর শেষ আশ্রয়!
এই চার পুরুষের ভিটা ছাড়া ধর্ম আমারে
অসহায় বইলা তাচ্ছিল্য করসে।
নিজের জীবন বাজি রাইখা তিলে তিলে
নয় মাস যে সন্তানরে রক্ত-মাংসে জঠরে সৃষ্টি করসি
জন্মের পর আমার নামটা
তার পরিচয় থেইকা হটায়া দিসে।

আমি শুধু মাইয়া বইলাই
ধর্ম আমারে ঠকায়া দিসে।।

“স্ত্রী স্বীকৃতি” নামক সুরক্ষা দিতে
বাপ-মা’র ঘর ছাইড়া আসার আইন দিসে।
কন্যা থেইকা বউ হইতে না চায়লেই
হুঙ্কার দিয়া একঘরে করসে।
বিধাতা হইয়া লেইখ্যা দিসে মা-বাপ মরলে পরে
তাগো শেষকৃত্যের অধিকারও খালি পুরুষের,
আমার বাপের, ভাইয়ের, বরের,
বাইরের অপরিচিত সব পুরুষ আর ধর্মরক্ষকদের,,
কিন্তু আমার না!!
ধর্ম আমারে সন্তানের কর্তব্য শিখায়া
আবার নারী বইলা সে দাবি ছিনায়া নিসে।

পুরুষের উপরে উইঠা যাবো
সমাজের বিচার পাল্টায়া দিবো, এই আতঙ্কে
আমার হাত থেইকা কাইড়া নিসে পুস্তক
ধর্ম আমার স্বাবলম্বী হওয়ার পথে কাঁটা বিছাইয়া দিসে

ধর্ম আমার আত্মারে আমার শত্রু বানায়া দিসে
ধর্ম আমার অধিকার কাইড়া নিসে
সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার মরীচিকা দেখায়া আমারে
বারবার পুরুষের নিচে দাবায়া দিসে।
পুঁজিবাদের পাল্লায় মাইপা সস্তা দরে বেইচা দিসে।

ধর্মই আমারে সবচে বেশি অসম্মান করসে গো,,
অনেক বেশি অপমান করসে
ধর্ম আমার বেইজ্জতিরে সম্মান ভাবার
মিছামিছি বুলি শিখাইসে,
আমার লগে ঘটা সব অবিচাররে
নিয়ম বইলা মানতে বাধ্য করসে
যদিও বা কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুইখা দাঁড়াইসি
নষ্টা, ভ্রষ্টার খেতাব দিয়া
পাথর ছুঁইড়া মাইরা ফেলসে।।

ধর্ম আমার মর্যাদারে
আমার হাতেই খুন করাইসে।

এই ধর্মনীতি, এই পিতৃতন্ত্র, এই পুরুষতন্ত্র
আমার অস্তিত্ব নিংড়াইয়া নিসে,
এইগুলানরে কোনোদিন ক্ষমা করুম না গোঁসাই,
আমার জাতিরে শুইষা নিজেরে ক্ষমতাবান বানানো
এই বিষধররে কোনোদিনও
মাপ করার পাপ করুম না।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.