এ লিভিং ডেড ইজ রাইটিং – ১

চন্দ্রাবতী:

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, যারা ব্যক্তিগতভাবে কোন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা যেকোন আক্রোশের শিকার হোন, তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জন্য শুধু সেই ব্যক্তি একা সাফার করেন না, সাফার করে তার পুরো পরিবার। বর্তমানে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাথেও তাই ঘটছে। একই সাথে এটা একটা অলিখিত প্রশাসনিক বার্তা যে, কেউ যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়, কেউ যদি সত্য খুঁজে বের করে প্রকাশ করে দিতে চায়, তাহলে তাকে এইভাবে “সাইজ” করা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, তাকে হয়রানি করে, তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছনা করে, নিপীড়ন করে, যতটুকু অসম্মান করা যায় করে, তার আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দেয়ার মাধ্যমে এই “সাইজ” করার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। যারা এই রোজিনা ইসলামের পথে হাঁটবে, তারা যেন একটা শিক্ষা পেয়ে যায়। যেন ভয় পেয়ে যায়, যেন চুপ করে যায়।

রোজিনা ইসলামের করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য এবং দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট গুলোতে, একটা বিষয়ই স্পষ্ট যে এই মন্ত্রণালয়টিতে করাপশন করাটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এই মন্ত্রণালয় কেন? বাংলাদেশের সরকারি বা রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট একটা জায়গা কি আছে, যেখানে দুর্নীতি হয় না?

রোজিনা ইসলাম এর করা রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে, অফিসের পিয়ন থেকে পদোন্নতি পেয়ে কম্পিউটার অপারেটর হওয়ার ঘটনা। রিপোর্টে উল্লেখ আছে, ভাইভায় পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য কোটি টাকা ঘুষ অফার করার কথা। কিন্তু এগুলো রোজিনা ইসলাম বানিয়ে বানিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো লিখেননি। তিনি ব্যক্তিগতভাবেও কিছু করেননি। সাংবাদিকতা যেহেতু তার পেশা, তিনি তথ্য সংগ্রহ করেছেন, এবং পাওয়া তথ্যগুলো নিয়েই রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু যে আক্রোশ নিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে তার উপর, তা হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে।

হ্যাঁ, এইভাবেই অশুভ শক্তিরা কাজ করে। তারা একজন দুজনের উপর তাদের আক্রোশ দেখায়, তাদের সাইজ করে, তাদের আলাদা করে দেয়, যেন অন্যরা ভয় পায়, অন্যরা দমে যায়। তারা কাজে লাগায়, কারা কারা সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত শত্রু। কারা সেই ব্যক্তির পেশাগত জায়গায় প্রতিপক্ষ। তারা তাদের বন্ধু বানায়, এবং তাদের দিয়েই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলায়। এই অশুভ শক্তিরা, পেশাগত জায়গায় থাকা ব্যক্তির চরিত্র, রাজনৈতিক পরিচয়, এগুলোর উপর কালিমা লেপনের চেষ্টা করে। মানুষকে কনফিউজড করতে চায় এই বলে যে, দেখো দেখো, যাকে সাপোর্ট দিচ্ছ সেও দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা নয়।

ভেবেছিলাম আজকে বৃহস্পতিবার রোজিনা ইসলামের জামিন হয়ে যাবে। কিন্তু হলো না। কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত দিলো বিচারিক আদালত, বুঝতে পারছি না। বিচারক কে ছিলেন, তার কি কোন ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে কিনা, বা তার উপর মন্ত্রণালয় সচিবের প্রেশার আছে কিনা কে বলতে পারে? হয়তো আছে। লতায় পাতায় তার কোন না কোন বেনিফিট থাকতে পারে। কারন করাপ্টেড একটা মন্ত্রণালয় যেখানে রাঘব বোয়াল রা সবাই চোর সেখানে, বিচারকদের বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রবিবার জামিনের ব্যাপারে আদেশ দিবে। এই দুই দিনের মধ্যে, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আরো কী কী করা যায় এরকম একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আদালত নিজেই। রবিবার হয়তো আরও একটি মামলায় রোজিনা ইসলামকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে, মানে এই মামলায় জামিন হলে আরেক মামলায় আবার তাকে আটক করা হতে পারে। এটা সম্পূর্ণই আমার আশঙ্কা।

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আদালতের উপরও মানুষের আস্থা কমে গেছে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। অথচ বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার কথা ছিলো।
শুধু বিচার বিভাগ? গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়ার কথা ছিলো, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকার কথা ছিলো। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকার কথা ছিলো।
কথা কি শুধু প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আর সচিবরাই বলবে?

বাংলাদেশের নাম তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বদলে, মন্ত্রী-আমলাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাখা উচিৎ।

লেখক: বাংলাদেশের একজন ভীত সন্ত্রস্ত নাগরিক।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.