নারীর যৌনজীবন কেন তার জীবনের চেয়েও দামি?

শিল্পী জলি:

বাংলাদেশে মেয়েদের মর্যাদা কতখানি সেটা সম্পত্তি বণ্টনের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই আর আলাদা করে বলার দরকার হয় না। এমনকি প্রচলিত আইন যা আছে সেই আইনও পালন করা হয় না। পুরুষের অর্ধেক পাওনাও নারীর কপালে জোটে না।
যুগেরও বেশি হলো দেশের প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, তথাপি এখনও সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত হয়নি। তারা করতে চাননি সেটা না বলে বলা উচিত হয়তো কোন উপায় বের করতে পারেননি। সমগ্র পুরুষ এই বিষয়টিতে এমনই একতাবদ্ধ যে বলতে গেলে কাজটি করা প্রায় অসম্ভব।

কিন্তু পুরুষের কেন এই দৈন্য?
শুধু কী সম্পত্তি থেকেই বঞ্চিত নারী? সামাজিকভাবেও কি নারী চাপে নেই?

আজ যদি হুমায়ূন আহম্মেদ না মারা গিয়ে শাওন মারা যেতেন, চল্লিশ দিন পার না হতেই দেশ জনতা প্রশ্ন তুলতেন লেখক সাহেব কী করে তার এই দীর্ঘ জীবন টেনে বেড়াবেন? তার তো এই বয়সে একজন সাথী দরকার, আহা। কিন্তু তারই হাঁটুর বয়সী শাওন যদি বিয়ের কথা একবার মুখেও আনেন, আমি নিশ্চিত যে জনতা তাকে লবণ-মরিচ দিয়ে কাঁচা খাবে। এগুলোই হলো নারী দমন পদ্ধতি।
সভ্য এবং অসভ্য নারীর খেতাব পরিয়ে নারী দমন।

পুরুষ একসাথে চারটা বউ রাখতে পারবেন, পতিতালয়ে যেতে পারবেন, অথচ নারীর এক ভালোবাসাতেই তাকে মাটির সাথে মিশে যেতে হবে?
প্রায় দ্বিগুণ বয়সী যৌনবিকারগ্রস্ত লোকের সাথে প্রেমে জড়িয়ে প্রাণ হারাতে হলো মুনিয়ার। সমাজের চাপে পিতামাতাহীন একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে বাঁচতে পারলো না এই পৃথিবীতে। কী ভয়াবহ একটি চক্রে জড়িয়ে পড়েছিল সে যে জীবন দিয়ে তাকে যুঝতে হলো!

মেয়েটির ডায়রির কিছু লেখা পড়েছি। চমৎকার সেই অনুভূতিগুলো। জীবনবোধে ভরপুর হৃদয় নিংড়ানো বঞ্চনার কথা, যেই প্রেমের গভীরতা স্পর্শ করার ক্ষমতা খুব কম পুরুষেরই আছে।
এমন একটি মেয়ের এমন এক লোকের সাথে প্রেম হওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনা আর হয় না।
লোকটার মুখের ভাষা শুনলে মনে হয় তাকে পতিতালয়ের দালাল হলেই বেশি মানাতো। এমন লোকের সাথেও মেয়েরা প্রেম-বিয়েতে জড়ায়, একেই হয়তো বলে পোড়া কপালি।

পাশের দেশ ভারতেই কঙ্গনা রানাওয়াত, ক্যাটরিনা কাইফ, অঙ্কিতা দীর্ঘ সময় ধরে লিভ ইন রিলেশনে থেকেছেন যেটা তাদের হিউম্যানিটি বা সামাজিক মর্যাদাকে খর্ব করেনি।
যৌনতা মানুষের ভালোমন্দের হিসেবনিকেষও নয়। তথাপি নারীকে জাজ করার পাঁয়তারা চলে এই যৌনতা দিয়েই। নারী যদি এতোই কামুক তাহলে মৃত্যুর পর শুধু পুরুষকেই কেন হুরের টোপ দেয়া হয়েছে? আর মরতেও তারা কেন সেক্সের স্বপ্ন খোঁজেন?
একাল-ওকাল দুু’কালই তাদের কব্জায়।
এও কি সম্ভব?
এসবই হচ্ছে নারীকে কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা যেন যাবতীয় নারী পুরুষের পায়ের তলে থেকে দলিতমথিত হয়। ওটাই পুরুষের চাওয়া। বিয়ে না হয়ে সেক্স হওয়ার লজ্জায় মুনিয়াকে মরতে হলো। বিয়ে হয়ে সেক্স হলেই কি তার জীবন সার্থক হতো? সব বিবাহিতা নারীর যৌন, পারিবারিক, এবং সামাজিক জীবনই কি সম্মানজনক? আজ যদি দেশের প্রশাসন সঠিক পথে চলতো তাহলে মুনিয়ার বিচার নিয়ে আর কথা বলতে হতো না, নিজ গতিতে বিচার হতো।

যতই লেখালেখি হোক না কেন কিছুই হবে না যদি না নারী তার অধিকার নিয়ে সচেতন থাকে। যতদিন না নারী তার নিজের অধিকার পেতে সোচ্চার হবে ততদিন শুধু নিজের বদনামই নয়, পুরুষের বদনামও তার কাঁধেই এসে চাপবে। কেননা পুরুষ ধোঁয়া তুলসীপাতা হয়ে থাকতে চায়। আর যত দোষ সবই নারীর। পুরুষের সেই মেরুদণ্ডই নেই যে নিজের দায় নিজের কাঁধে বহন করবে সে। শুধু কবুল পড়ে যৌনমিলনকেই লোকে বলেন পবিত্র সম্পর্ক।
কবুল না পড়লেও ঐ কর্মের ভিন্নতা কোথায়? তাছাড়া বিয়ের পবিত্র সম্পর্কও যে কত পবিত্র থাকে সেটা বিয়ের পর অধিকাংশ নারীই হাড়ে হাড়ে টের পায় যখন আর তার করার কিছু থাকে না।

পুরুষেরই চাওয়া ভার্জিন নারী, আবার তারাই ছলে-বলে কৌশলে হাতিয়ে নেন নারীর ভার্জিনিটি।
একজন ছিনিয়ে নেন, আরেকজন সেটা দেখে থুথু ছিটান। তারা সবাই একই দলের, তাদের টার্গেটেও একই– নারী দমন। মানবজীবন দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে নয়। থাক না কিছুটা বদনাম জীবনের সাথে জড়িয়ে– মানুষই তো।
ভার্জিনতাই জীবনের সবটুকু নয়। প্রেমের নামে ধোঁকায় পড়ে ভার্জিনতা খোঁয়া গেলেও টিকে থাকাই হোক জীবনের লক্ষ্য।

পুরুষের কৌমার্য্য নিয়ে যদি তার তেমন কিছু যায় না আসে, তাহলে নারীর কুমারিত্ব নিয়েও এত হৈ চৈ এর কিছু নেই। তারাই ভবিষ্যত জীবনসঙ্গী হয়ে একসাথে পথ চলবেন।
লাইফ পার্টনার একরকম হলেই চলতে সুবিধা। যতদিন নারী-পুরুষের চিন্তাধারায় ভিন্নতা থাকবে ততদিনই নারী বঞ্চিত হতে থাকবে।
সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীকে চিন্তায়ও পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে।
পুরুষের চাপিয়ে দেয়া ছকে চলা নারীর ধর্ম নয়।
আইন লিঙ্গবৈষম্যের ঊর্ধ্বে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.