নারী-পুরুষের জীবনে স্ট্যাটাস কো’র পরিবর্তন হোক স্বাভাবিক

কাজী তামান্না কেয়া:

নারীদের জীবনের স্ট্যাটাস কো’র পরিবর্তন, সমাজ কেন যেন সহজে মেনে নিতে চায় না, মেনে নিতে পারে না।স্ট্যাটাস কো অর্থ কোন কিছুর পরিবর্তন না হওয়া বা একই রকম থাকা।
সিংগেল মা সন্তানের দিকে তাকিয়ে বাকি জীবন একা কাটিয়ে দেবে– এটা প্রচলিত ধারণা। এটাই সমাজ নির্ধারিত। পঞ্চাশোর্ধ নারী স্বামীর মৃত্যুর পর বা অন্য যেকোনো কারণে সিংগেল হলে আর বিয়ে করতে পারবে না, এগুলোও প্রচলিত এবং সমাজে টিকে আছে। জাস্ট বিকৌজ এগুলো সমাজে প্রচলিত, তার মানে এই না যে আজীবন এগুলো একই রকম থাকবে বা রাখতে হবে।

আজ যে চমৎকার স্বামী, সকলে যার প্রশংসা করে, কাল সে চমৎকার মানুষ নাও থাকতে পারে। তার পরকীয়া হতে পারে, সে শারীরিকভাবে অক্ষম হতে পারে, তার সাথে কোন কারণ ছাড়াই স্ত্রীর বনিবনা নাও হতে পারে, হতে পারে অন্য যে কোনো রকমের নৈতিক স্খলন। তখন নারী কী করবে? সংসার করে যাবে? একইভাবে আজ যে প্রেমিক পুরুষ কিংবা সন্তানের পিতা, আগামীকাল সকালে তার আরও তিনটি প্রেমিকার খোঁজ বের হতে পারে। আজ যার সম্মান আছে, আগামীকাল তার সম্মান নাই হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ গতকাল যে পুরুষটির প্রতি নারীর আস্থা, বিশ্বাস, ভালবাসা ছিল, আজ আর তা নাও থাকতে পারে। নারীটি কী করবে? সমাজের দিকে তাকিয়ে সম্পর্কটি টেনে নিয়ে যাবে?

নারী ডিভোর্সি হোক, সিঙ্গেল হোক, চাকুরিজীবী হোক, গৃহিণী হোক–একটা না একটা খুঁত তার বের করতে হবে। তবে সিংগেল নারীর জীবন ভয়াবহ। নারীরা একা থাকবে কেন! একা নারী দেখলেই অস্বস্তি হয় সমাজের। সমাজের এই অস্বস্তির কারণ কী? কারণ সমাজের অনেক লোকের নিজের জীবন নেই, বন্ধু-বান্ধব নেই, হই-হুল্লোড় করার মত কোন উপলক্ষ্য নেই, বলার মত কোন গল্প নেই। টিভি, ফেইসবুক বা ইউটিউবে আর কত সময় কাটানো যায়? তারা পান করতে পারে না, সিনেমা বা মুভিতে যেতে পারে না, নিজেরা প্রেম করে, একলা থেকে বা বিয়ে করে সুখী হতে পারে না। শুরু হয় একাকিত্ব এবং মনের অসুখ । ফলাফল হলো আশে-পাশের মানুষের জীবনে নাক গলানো শুরু করা। নিজেদের জীবন নিয়ে সুখী এবং ব্যস্ত মানুষের কিন্তু অন্যদের লাইফে নাক গলানোর সুযোগ পাওয়ার কথা না।

সমাজে ডিভোর্সি বা সিংগেল পুরুষও শান্তিতে থাকতে পারে না। তাদের জীবনটাকেও লোকে মোটামুটি নরক বানাতে উঠে পড়ে লাগে। তবে নারীর জন্যে নরকটা মোটামুটি অবধারিত। সমাজে যে পুরুষটি বিয়ের আগে হোটেলে যাতায়াত করতো, বা ব্রোথেলে, তারও ঠিক ঠিক বউ জুটে যায়। হোটেলে যাওয়া বা ব্রোথেলে যাওয়া আইনের চোখে নয়, বরং সমাজের চোখে বা ধর্মের চোখে গর্হিত অপরাধ। এসব বিচ্যুতি বা পুরুষের এমন একটু আধটু আচরণ তারপরেও সমাজ মেনে নেয়। কিন্তু বিয়ের আগে হোটেলে যাওয়া নারীর ইতিহাস লোকে জেনে গেলে কিংবা বিয়ের আগে নারী প্রেগনেন্ট হলে তার আর সহজে বিয়ে হয় না।

অথবা এ সবের কিছুই না, জাস্ট বিয়ে ভেংগে গেছে কোন কারণে, এমন নারীর আরেকটি সম্মানজনক বিয়ে সহজে হয় না। হলেও তার জন্যে বরাদ্দ থাকবে জগত সংসারে যার আর কোন পাত্রী জুটবে না, তেমন পুরুষ। নারীর প্রেম বলেন, বিয়ে বলেন, সন্তান নেওয়া বলেন, ক্যারিয়ার বলেন–সবকিছু স্টেজ শো বা ম্যাজিকের মত পারফেক্ট হতে হবে নারীর জীবনে। কোন ভাংগা গড়া, ট্রায়াল এরোরের স্থান সেখানে নেই।

আমাদের মনে রাখতে হবে, নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রেম ভেঙ্গে যেতে পারে। ফেইসবুকের পাতায় সন্তানসহ হ্যাপিলি ম্যারিড নারী বা পুরুষের বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। দুজনের সংসার থেকে বেরিয়ে তারা একা থাকা শুরু করতে পারে। এসবই সাধারণ ব্যাপার হওয়া উচিত। প্রেম থাকলে প্রেমহীনতাও থাকতে পারে। বিয়ে থাকলে, ডিভোর্সও থাকতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে এসব ব্যাপারগুলো। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে দুজন মানুষের সম্পর্ক তৈরিতে এবং সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রেও। সবই স্বাভাবিক। জীবনেরই অংশ।

সমাজ স্ট্যাটাস কো’র পরিবর্তন মানতে পারে না বলেই আমরা সুখি না হয়ে সুখে থাকার ভান করি, ধনী না হয়েও বড়লোক হবার ভান ধরি, প্রেম না থাকলেও প্রেমে গদগদ হবার অভিনয় করি সমাজে প্রচিলিত অতিরিক্ত এক্সপেক্টেশনের চাপে।
মানুষের জীবনে স্ট্যাটাস কো বলে কিছু নেই। সমাজ মানুক আর না মানুক, জীবন পরিবর্তনশীল।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.