মিলি ইসলাম:
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আসুন কিছু মানবিক গুণাবলির চর্চা করি।
লেখাপড়া করে অনেক সার্টিফিকেট নিয়েও কিছু সাধারণ বিষয় আমাদের অজানাই থেকে যায়। এতে দোষের কিছু নেই, আর শেখার কোন বয়স নেই।
আমি নিজেও অনেক কিছুই জানি না, তবে সবসময় শেখার চেষ্টা করি।
জেনে বুঝে অথবা না জেনে বুঝে অনেক সময় আমরা অন্যকে এমন কিছু প্রশ্ন করি বা অহেতুক কৌতুহল দেখাই বা যেঁচে অনেক পরামর্শ দেই যা অন্যের জন্য বিব্রতকর হতে পারে।
চলুন জেনে নেই কী হতে পারে বিষয়গুলো-
# বেতন কত পাও
# বিয়ে কবে করবে অনেক তো বয়স হলো
# ডিভোর্স কেন হলো
# বাচ্চা কবে নিবে অনেক তো বয়স হলো
# এক বাচ্চা হওয়ার পর আরেকটা বাচ্চা কবে নিবে
# ছেলে হওয়ার পর একটা মেয়ে বাচ্চা কবে নিবে
# এতো মোটা হয়ে গেছো কেন
# এতো কালো হয়ে গেছো কেন
# ব্যাংকে কতো জমলো
# বাড়ি কিনবে কবে
# গাড়ি কিনবে কবে
(আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না)
আমরা মনে করি কারো কাছে কিছু একটা নেই মানে সে অসুখী। আমার কাছে সেই জিনিস আছে বিধায় আমি সুখী। এটা সম্পূর্ণ ভুল। আপনি ভুল করে নিজের দুঃখের বাটখারায় অন্যের সুখ মাপতে চাইছেন। এমনও তো হতে পারে যেই জিনিস আপনার কছে আছে বিধায় আপনি আপ্লুত, সেই জিনিস হয়তো অন্য কেউ চায়ই না। আবার একইভাবে ওই মানুষটির অর্জনের পাল্লা এতোই ভারি যে আপনার কাছে তা মাপার কোন বাটখারাই নেই। আপনি চেষ্টা করলেও তার উচ্চতা স্পর্শ করতে পারবেন না। কারণ না আছে আপনার মানসিক দৃঢ়তা, না আছে আপনার শারীরিক বল।
হয়তো জন্মসূত্রে পাওয়া কিছু সম্পত্তি বা প্রাকৃতিকভাবে সৌভাগ্যবশত পাওয়া কিছু উপাদান যা আপনি মনে করছেন জীবনের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু অন্য কেউ হয়তো অন্য কিছু চায়, অন্যভাবে চায়, অন্য সময়ে চায়।
আপনাকে বুঝতে হবে সবার জীবনবোধ এক নয়। আপনি জানেন না কে কোন বিষয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। আপনার কোন কথাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন অন্যের ব্যাপারে কৌতূহলী মানুষগুলো ব্যক্তি জীবনে অসুখী, অসফল এবং পরশ্রীকাতর। তারা মুখে স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি। অন্যের সুখ দেখলেই তাদের কী যেন হয়ে যায়। তারা তখন আপনাকে মনে করিয়ে দিবে তোমার কিন্তু “ওওওওওই” জিনিসটা নাই। অথচ আপনার যে আরও অনেক প্রাপ্তি আছে, সেটির জন্য তাদের কখনও খুশি হতে দেখবেন না। কিন্তু আপনার যা নেই তার জন্য তাদেরকে সবসময় দুঃখ পেতে দেখবেন। যেন তারাই আপনার বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, আর আপনার চেয়েও তারা আপনার দুঃখে বেশি দুঃখি। এগুলো যে হিপোক্রেসি, তা বুঝতে কিন্তু একদমই দেরি করবেন না।
আবার সময়মতো বিয়ে করার ফজিলত, সময়মতো বাচ্চা নেওয়ার মাজেজা, জীবনে বাড়ি গাড়ির প্রয়োজনীয়তা সব আপনাকে বোঝানো শুরু করবে যেন এগুলো উনি অনেক গবেষণা করে বের করেছেন এবং আপনি এসব বুঝতে পারছেন না বা আপনি এ বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না।
তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি- আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন তো জীবনে যা চেয়েছেন সবকিছু আপনার হাতের মুঠোয় আছে, বা কোন জিনিসের জন্য আপনি কখনও যুদ্ধ করেননি বা এখনও করছেন না? পারবেন না বলতে। কারণ সবার জীবনেই পাওয়া না পাওয়া থাকে।
তাই কথা বলার সময় বুঝে কথা বলুন। আর মনে রাখবেন আপনার মান রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।
এই সাধারণ কথাগুলো যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে চলুন সার্টিফিকেটগুলো ডাস্টবিনে ফেলে আসি।