ভাত-কাপড়ের দায়িত্বটা তো তোমরাও নিতে পারো মেয়েরা!

কামরুন নাহার:

আমি অনেক মেয়েকে দেখেছি চুটিয়ে পাঁচ বছর প্রেম করেছে একজনের সাথে, কিন্তু কদিন পর ফেসবুকে দেখি ” got married to xyz” জাতীয় স্ট্যাটাস । xyz কে বিয়ে করলো তাহলে যার সাথে এতোদিন চুটিয়ে “তোমায় ছাড়া বাঁচবো না” জাতীয় প্রেম করলো, সে কোথায়? ছেলেটির আসলে এখনও জব হয়নি। ওদিকে মেয়েটির সোকলড ‘যৌবন’ পড়তির দিকে। ‘যৌবন’ না থাকলে আইবুড়ো মেয়েকে কে বিয়ে করবে! মেয়েটি কিন্তু এমএ পাস, চাইলে নিজেই জব করতে পারে এবং বেকার প্রেমিককে বিয়েও করতে পারে।

ভালোবাসার মানুষের হাত এতো সহজে ছেড়ে দিতে নেই। এতো সহজে নিজের কিছু করতে পারার যোগ্যতাকে পায়ে দলে শুধু অন্যের ঘাড়ে বসে খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে নেই। নিজের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কিছু না করতে চাওয়ার মনোভাব অন্যের ঘাড়ে বসে খাওয়ার মনোভাবকেই প্রকাশ করে। আর একজন শিক্ষিত মেয়ের কাছ থেকে আমি অন্তত এটা আশা করি না। মেয়েরা যদি সত্যিকার শিক্ষিত হও, যদি সত্যিই ভালবাসতে জানো, শিক্ষিত হয়ে জব করো, যাতে মনের মানুষটিকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে না হয়, যাতে ভালোবাসার মানুষটির হাত শক্ত করে ধরে রাখা যায়, যাতে চিৎকার করে বলা যায় “আমি ওকে ভালোবাসি ওকেই বিয়ে করবো, নয়তো করবো না”। মেয়ে তুমি যোগ্য হলে পরিবারের সাধ্য নেই ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে তোমায় আলাদা করে। কিন্তু তোমার নিজেকে বেকার প্রেমিকের হাত ছেড়ে যাওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট সম্বলিত লেখাপড়া করলে হবে না। সত্যিকারের শিক্ষা দুর্বলকে সবল করে তোলার শিক্ষা দেয়।

একটি এসএসসি পাস মেয়েকে যদি একটি এমএ পাস ছেলে ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য নিয়ে যেতে পারে, তাহলে একটি মেয়ে কেনো পারে না একটি কম শিক্ষিত বেকার ছেলের দায়িত্ব নিতে? কোথায় বাঁধে? একটি বেকার ছেলের সারাজীবনের ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নেবার মধ্যে তো একটি মেয়ের প্রাইড লুকিয়ে থাকা উচিত। এখন সময় এসেছে মেয়েরা পাত্র নির্বাচন করবে। দেখতে গিয়ে ছেলেকে বলবে, “ভাবনার কিছু নেই। বিয়ের পরেও আপনি লেখাপড়া করতে পারবেন, চাকরি করতে চাইলে তাও পারবেন”। মেয়েরা যোগ্য হয়ে সেই যোগ্যতার বলে নিজেরা পাত্র সিলেকসন অথবা রিজেকসনে যাবে, সেই সময়টা এসেছে। মুখে মুখে নারীবাদ আর সম অধিকারের কথা বললে হবে না! শুধু পোশাকে আধুনিক হলে হবে না! আধুনিক হতে হবে মন মনন আর মেধায়; আধুনিক হতে হবে যোগ্যতায়, যাতে পাত্রের বাবাকে বলা যায়, “আজ থেকে আপনার ছেলের ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব আমার”। নিজের সমান যোগ্যতার একজন পুরুষের জন্য বসে বসে আইবুড়ো তকমা পাওয়ার মধ্যে প্রাইড নেই, প্রাইড নিহিত আছে একটি বেকার ছেলেকে বিয়ে করে তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার মধ্যেও।

এখানে অবশ্য দুটো কথা আছে।

সেটা হলো ছেলেদের আত্মসম্মানবোধ। আমি এই দেশে বেকার ছেলে বা স্ত্রীর আয়ে ঘরে বসে খাওয়া ছেলেদের স্বভাব দেখেছি। স্ত্রীর আয়ে সংসার চললে তাদের ইগোতে লাগে। আমি পুরুষ, আমি কেনো স্ত্রীর করুণায় বাঁচবো এই মনোভাব অধিকাংশ বেকার পুরুষের। আবার স্ত্রীর তুলনায় আয় কম হলেও পুরুষ ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। তাদের এই সংকট তারা আসলে নিজেরাই তৈরি করেছে।

শুরু থেকেই নিজেদের ব্রেড আরনার এবং ডিসিশন মেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তারা এই সংকটের সৃষ্টি করেছে। সময় যে বদলাতে পারে এই ভাবনাটা মাথায় রাখেইনি পুরুষ। তাহলে আজ আর স্ত্রীর আয়ে সংসার চললে বা স্ত্রী দুটো টাকা বেতন বেশি পেলে পুরুষের আঁতে ঘা লাগতো না। পুরুষের যদি মনে হয় তার স্ত্রী সংসার চালাচ্ছে, মানে তাকে করুণা করছে, তাহলে তাকে এটা উল্টোভাবেও ভাবতে হবে। সে একটা শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করে এনে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে, মানে করুণা করছে! ভাইস-ভারসা।

আপনার নিজের দিকটা ভাবছেন একজন শিক্ষিত নারীর শুধুই গৃহিণী হয়ে বসে থাকার কষ্টটা, স্বামীর কাছ থেকে কথায় কথায় খোটা শোনার কষ্টটা বুঝবেন না? আমি বলছি না নারীরা ঢালাওভাবে এখনই পুরুষের ভাত-পাকড়ের দায়িত্ব নেয়া শুরু করুক। বলছি প্রক্রিয়াটা শুরু হোক।

সময় তো বদলেছে, বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সময় আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় আমরা কেউ জানি না। তাই পরিবর্তনগুলো মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে সমস্যা কোথায় ?

মেয়েরা ভালোবাসোই যদি, কেন এতো সহজে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বানানো নিয়মের কাছে এতো সহজে কম্প্রোমাইজ করে ফেলো?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.