আগুনের পাখি

আগুনের পাখি

লুতফুন নাহার লতা:

 

মেয়ে বলে তোমরা চাওনি আমাকে

জন্মের সাথে সাথে কবর দিয়েছো,

অথচ কী আশ্চর্য দ্যাখো

আগুনের পাখি হয়ে জন্মেছি আমি

আমাকে রুখতে পারোনি।

 

আমার জন্মের পরে মিষ্টি বিতরণ করোনি তোমরা,

দাওনি উলুধ্বনি,

আমি মেয়ে বলে শোনাওনি কানে

কোন অচিন মঙ্গলবাণী।

 

তোমরা ভয় পেয়েছিলে মেয়ে হলো বলে

যেমন ভয় পেয়েছিলেন আমাদের

আদিপিতা নিষিদ্ধ ফল খেয়ে

আদিমাতা মেয়ে বলে এই গল্পের সে আজও দাগী আসামি।

 

জন্মের পরে লবন মুখে গুঁজে দিতে চেয়েছিলে যারা

ডানা দুটো মুচড়ে ভেঙেছিলে যারা সবার আগে

যারা পায়ে পরিয়েছিলে লোহার শেকল

তারা দেখো আগুনের পাখি আমি

আমার পায়ের শেকল কেটেছি রক্তাক্ত ঠোঁটে

আমার ছেঁড়া, থ্যাঁতলানো ঝুলে পড়া কাঁধ থেকে

গজিয়েছে অগ্নিডানা।

 

খুশি হওনি তোমরা, আনন্দ সেতার বাজেনি বুকের ভেতর

মানুষ নয়, মেয়ে হল বলে, কালো হল বলে

ঠিক যেমন আমার কালো পিতামহী

জন্মের পরে কপালে ফুটো পয়সার ছ্যাঁকা দাগ নিয়ে

উঠে দাঁড়িয়েছিলেন।

মেয়েলোক অত কালো হবে কেন!

মেয়েলোক অত খর্ব হবে কেন!

মেয়েলোক অত অহংকারী কেন!

তবু দেখো তিনি হিমালয়ের মত অহংকার নিয়ে

অবিচল হেঁটেছেন নতুন সূর্যোদয়ের পানে।

তার হৃদয় জুড়ে দক্ষিণ সমুদ্রের গর্জন।

 

আমার আদিবাসি মাতামহীর জন্মের সময়

তার বাম হাতের তর্জনী ভেঙে দেয়া হয়েছিল,

ছিদ্র করে দিয়েছিল তার নাক, তার কান,

তার নারী অঙ্গ থেকে কেটে নেয়া হয়েছিল আনন্দ অংকুর,

মেয়েলোকের অত রূপ কেন, তাকে খুঁত লাগাও

মেয়েলোক আনন্দ পাবে কেন! তাকে ছিড়ে ফেল,

ক্ষত কর, বিক্ষত কর, মন্থন করে ধর্ষিতার লাশ

ছুঁড়ে ফেলে দাও বাসের জানালা থেকে।

তবু আমার মাতামহী বাঁশফুল বালামের মত বেড়ে উঠেছিলেন

তিনি তার ডানার নিচে ধরেছিলেন পৃথিবীর আদি শক্তি।

 

কী আশ্চর্য দেখো আমি আমার মাতামহী ও পিতামহীর মত

বুকের আগুনে জ্বেলেছি শেষ চিতা।

তোমার রক্ত চক্ষুর, তোমার বৈষম্য, বিদ্বেষের

তোমার দুর্বিনীত একক সাম্রাজ্যের চিতা।

আগুনের পাখি আমি

আমার পাখায় জ্বেলেছি অগ্নি,

শিখা অনির্বাণ।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.