উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: দীর্ঘ দুদশক আগে লেখার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে দেশত্যাগী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে তাঁর বন্ধু ও ভক্তরা।
এই লেখিকার দেশে ফেরার সব রকম আইনি বাধা তুলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন আয়োজকরা।
তসলিমা নাসরিনের ৫১ তম জন্মদিন উপলক্ষে রোববার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘তসলিমা পক্ষ’-এর ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষজন অংশ নেন।
‘মত প্রকাশ, চিন্তার স্বাধীনতাসহ লেখক তসলিমা নাসরিনের সব অধিকার ফিরিয়ে দাও” শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই
মানববন্ধনের মূল বক্তব্য ছিল ‘এই দেশে এ কেমন ন্যায়, দেশবিরোধী গোলাম আযম নাগরিকত্ব পায়! অথচ দেশপ্রেমিক লেখক তসলিমা নাসরিন নির্বাসিত হয়!!’
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তারাও দেশে বসবাস করছেন। এমনকি রাজাকার গোলাম আযম যিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তিনিও বাংলাদেশের নাগরিত্ব পেয়েছেন। কিন্তু, তসলিমা নাসরিন দেশবিরোধী কোনো কাজ করেননি। তারপরও তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। এতে তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
মানব বন্ধনের অংশ নেওয়া নাহিদ সুলতানা বলেন, তার বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পথ সহজ করতে হবে।
শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান বলেন, ‘অনেকে তাসলিমা নাসরিনকে ডাইনি বলেন। আমাদের দেশের নারীদেরই অনেক আগে থেকেই এ গালি শুনতে হয়। এরই ধারাবাহিকতাই তসলিমা নাসরিনকেও এই গালি শুনতে হয়েছে।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তসলিমা নাসরিন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম বলিষ্ঠ নারীবাদী লেখক। তিনি নারীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী, রাষ্ট্র ও গোটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
মানববন্ধনে জানানো হয়, ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় ২০ বছর বহুবার দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েও তসলিমা নাসরিন কোনো সাড়া পাননি। এটি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেমন তার মৌলিক নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন, তেমনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন।
সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই লেখক তাঁর গল্প, উপন্যাস ও কবিতার মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশে ধর্মের নামে চলমান সাম্প্রদায়িক উগ্রতা ও নারীদের প্রতি দমননীতিকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। যে কারণে নব্বইয়ের দশকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই সময় তিনি দেশত্যাগ করে ভারতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সুইডেনের নাগরিকত্বও পেয়েছেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন।
এদিকে দিল্লিতে অবস্থানরত তসলিমা নাসরিন টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে জানান, দেশে ফেরার চেষ্টা অনেকবার করলেও সরকারের বাধাতে ফিরতে পারেননি। একাধিকবার পাসপোর্ট নবায়নের চেষ্টা করলেও সরকারের তরফ থেকে নবায়ন করতে দেয়া হয়নি। এমনকি বিদেশি পাসপোর্টেও বাংলাদেশের ভিসাও দেয়নি বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো।
তিনি বলেন, “আমার যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে সেটা কোন বাংলাদেশ অ্যামবাসি রিনিউ করে না। আমি ইউরোপ, আমেরিকার প্রায় প্রত্যেকটি অ্যামবাসি ও ভারতের অ্যামবাসিতেও গিয়েছি কিন্তু তারাও রিনিউ করে না। এবং আমার যে ইউরোপের পাসপোর্ট আছে সেটাতেও বাংলাদেশের ভিসা দেয়া হয় না”। এ সময় তিনি বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার যদি মনে করে থাকে মুসলিম মৌলবাদীরা পছন্দ করবে না, আমি জানতে চাই বাংলাদেশ সরকার মুসলিম মৌলবাদীদের এত খুশি করার চেষ্টা করছেন কেন, ভোটের কারণে? তাহলে তো এটাকে ডেমোক্রেসি বলা যায় না। বাংলাদেশ সরকার কেন আমার গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছে”?
এদিকে তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটিতে তাঁর অনুপস্থিতিতে এক বছরের সাজা হয়। তবে সে সময়কার তার আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান জানান, দেশে ফিরলে আগাম জামিন নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যকারিতা সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।