সমতাপূর্ণ ভবিষ্যত বিনির্মাণে নারী নেতৃত্বের বিকল্প নেই

সুপ্রীতি ধর:

আবারও বছর ঘুরে এলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

এবছর দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ নির্ধারিত প্রতিপাদ্যটি হচ্ছে ‘Women in leadership: Achieving an equal future in a Covid-19 world’। একইসাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে #ChooseToChallenge। দুটো প্রতিপাদ্যই কিন্তু নারীকে নেতৃত্বের পথে, আরও চ্যালেঞ্জের পথেই উৎসাহিত করছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরবর্তিত বিশ্বে বেঁচে থাকা বা টিকে থাকাটা যখন চ্যালেঞ্জ, তখন সেই চ্যালেঞ্জকেই বেছে নিতে বলা হচ্ছে নারীকে। সমতাপূর্ণ ভবিষ্যত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য নারী নেতৃত্বের যে বিকল্প নেই, তা এখন বিশ্বনেতৃত্ব ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। আর শিখবে নাইবা কেন, যখন দেখছে যে এই অতিমারিতে নারীরা যেভাবে সবকিছু আগলে রেখে, সন্তর্পণে মোকাবিলা করেছে, তখন নতজানু হওয়া ছাড়া বিকল্প থাকে কি? এটাও ঠিক যে এই মুহূর্তে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নারী নেতৃত্ব বেশ সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।  যদিও সবকিছু বোঝাপড়ার পরও চাবির গোছাটা পুরুষের কোমরেই থাকে, সেই থেকে কতোটা আমরা এগোতে পেরেছি, তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে।

আমরা কেন খুশি এ ধরনের প্রতিপাদ্য পেয়ে? আমিসহ আমাদের অনেকেরই মনে হয়েছে, এতোদিনে আমাদের মনের মতো একটা কথা বলা হয়েছে। কারণ আমরা নারীরা চ্যালেঞ্জ নিতে জানি, নিয়েই অভ্যস্ত। আমরাও তাই সমস্বরে বলে উঠেছি, ইয়েস, চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড। কিন্তু এই যে একসেপ্ট করলাম, বা করতে বাধ্য হলাম, এই যে সমাজ আমাদের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে রাখে, আমাদের উচিত না সেই সিস্টেমটাকে চ্যালেঞ্জ করা? আমরা বরং তা না করে আরও চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি আমাদের শক্তি, সততা দিয়ে। এর ফলে দুরকম কাজ হয়। এক আমরা বলিষ্ঠ হই আরও, কিন্তু একইসাথে সিস্টেম পরিবর্তন করতে চাওয়াটা যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সেটাই আর করা হয় না।

ইউএন উইমেন বলছে, কোভিড অতিমারি বিশ্বকে এটাই শিখিয়েছে যে নেতৃত্বের বৈচিত্র্য এবং ধরনই কেবল পারে পরিবর্তন আনতে। যখন অনেক বেশি নারী সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকে তখন সেই সিদ্ধান্তে সবার অন্তুর্ভুক্তি নিশ্চিত হয় হয়, অনেক বেশি মানুষের উপস্থিতি থাকে, তাদের ভয়েসকে তুলে ধরা হয়, ভিন্ন ভিন্ন সমাধানও গৃহীত হয়। এসবই হয় নারীর অন্তর্ভুক্তির কারণে। এতোবছর ধরে ঠিক এই অন্তর্ভুক্তির দাবিই তো জানিয়ে আসা হচ্ছে। এতোদিনে এসে বুঝতে সক্ষম হলো যে নারীর বিকল্প নেই আসলেই।

পাশাপাশি এটাও জানি যে লৈঙ্গিক সমতা অর্জনে এখনও অনেক পথ আমাদের চলার বাকি। বিশ্বের ২২টি দেশ এখন নারী নেতৃত্বাধীন, সেইসব দেশে উন্নয়ন আছে, উন্নতি আছে, কিন্তু এও তো জানি যে মেয়েরা যতবেশি এগিয়ে আসছে, তারা যতবেশি দৃশ্যমান হচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে, নিত্যনতুন পন্থা উদ্ভাবিত হচ্ছে নারীকে দমনের জন্য, নির্যাতনের জন্য। এ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য।

সেই বিংশ শতকের শুরুতে যখন নারীরা আন্দোলন করেছিল সমঅধিকারের দাবিতে, ন্যায্য মজুরির দাবিতে, আমরা কি এখনও এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও তো ওই একই দাবি জানাচ্ছি। তাহলে আমাদের এতোগুলো বছরের অর্জন কী? সবে অন্তর্ভুক্তির দাবিটা মেনে নিল। আরও অনেক পথ বাকি আমাদের স্বপ্নের সমতাপূর্ণ বিশ্ব নির্মাণে।

সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ এর শুভেচ্ছা।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.